যশোরে মোটরসাইকেল ছিটকে খাদে পড়ে বিজিবি সদস্যের মৃত্যু
Published: 12th, March 2025 GMT
যশোরের বেনাপোলে দ্রুতগতির একটি মোটরসাইকেল ছিটকে খাদে পড়ে এক বিজিবি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলে থাকা আরেক বিজিবি সদস্য। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে যশোরের বেনাপোল বন্দর থানার বারোপোতা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত বিজিবির সদস্য হলেন মোজাম্মেল হক (২৮)। তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আলমপুর গ্রামে। তিনি খুলনা ২১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধীন পুটখালী সীমান্তচৌকিতে সেপাই পদে কর্মরত ছিলেন। আহত বিজিবি সদস্যের নাম দেলোয়ার হোসেন (৩৮)। তিনি পুটখালী সীমান্তচৌকিতে হাবিলদার পদে কর্তব্যরত। এ তথ্য নিশ্চিত করে বিজিবি পুটখালী সীমান্তচৌকির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মুন্সি সলিমুল্লাহ বলেন, মোটরসাইকেল খাদে পড়ে সেপাই মোজাম্মেল হক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন হাবিলদার দেলোয়ার হোসেন।
বিজিবি ও স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, গতকাল সন্ধ্যায় পুটখালী বিজিবি সীমান্তচৌকি থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে সেপাই মোজাম্মেল হক এবং সুবেদার দেলোয়ার হোসেন বারোপোতা বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মোজাম্মেল হক। মোটরসাইকেলটি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বারোপোতা বাজার এলাকায় মসজিদ বাড়ি বিজিবি পোস্টের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং ছিটকে পাশের খাদে গিয়ে পড়ে। মোটরসাইকেলের দুই আরোহী মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মকভাবে আঘাত পান।
স্থানীয় লোকজন ও বিজিবির সদস্যরা ওই দুজনকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে আটটার দিকে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোজাম্মেল হককে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত দেলোয়ার হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। রাতেই তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বেনাপোল বন্দর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ম ম ল হক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও’
যশপ্রীত বুমরার ডেলিভারিটি ছিল লেগ স্টাম্পে। খুব দ্রুতই অবস্থান তৈরি করে নিলেন করুন নায়ার, ফ্লিক শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা!
নিজের বোলারকে ছক্কা হজম করতে দেখেও হাততালি দিয়ে উঠলেন মুম্বাই অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। একই ওভারের পঞ্চম বলে আবার ছক্কা। এবার স্লোয়ার ডেলিভারি উড়ে গেল লং অফ দিয়ে। অবাক চোখে চেয়ে দেখলেন বুমরা। এই দুই ছক্কার মাঝে হয়েছে একটি চারও। সব মিলিয়ে ছয় বলেই ১৮ রান। সময়ের সেরা পেসার বুমরার বলে নায়ারের এই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠার কথা অনেকেরই।
নায়ার সেই বিরল দুর্ভাগাদের একজন, যিনি ভারতের হয়ে অপরাজিত ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও তিন ম্যাচ পর বাদ পড়ে আর কখনো জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি। আইপিএলে ব্র্যাত্য হয়ে পড়েছিলেন ৩০ বছর বয়সেই। হারিয়ে গিয়েছিলেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট থেকেই। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর নায়ার টুইট করেছিলেন, ‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।’
গতকাল রাতে নায়ারের সেই টুইট দিয়ে একটি পোস্ট করেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। ক্যাপশনে লেখা, ‘আমাদের হৃদয় ভরে গেছে।’ সঙ্গে চোখের কান্না লুকানোর ইমোজি, ভালোবাসারও। শনিবার রাতে আইপিএলের মুম্বাই–দিল্লি ম্যাচ সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হওয়ার কথা নায়ারেরই।
দিল্লি ক্যাপিটালসের ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান আইপিএলে ম্যাচ খেলতে নেমেছেন প্রায় তিন বছর পর। ফাফ ডু প্লেসির ইমপ্যাক্ট বদলি হিসেবে নেমে করেছেন ৪০ বলে ৮৯ রান। ৫ ছক্কা আর ১২ চারে শুধু দিল্লির জন্য রানই তোলেননি, নিজের ভেতরে জমে থাকা খেদই যেন একের পর এক বের করে দিয়েছেন।
আইপিএলে নেমেছেন বছর তিনেক পর, তবে ফিফটিটি করেছেন প্রায় সাত বছর বিরতির পর। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ২ হাজার ৫২০ দিন পর। আইপিএলে আর কোনো ব্যাটসম্যানের দুটি ফিফটির মধ্যে এত বড় ব্যবধান নেই।
নায়ার মাঝের দীর্ঘ সময়ে খেলার সুযোগই পেয়েছেন মাত্র তিন আসর। মাঠে নেমেছিলেন ৮ ম্যাচে। তাতে মাত্র ৩৭ রান তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে বড় প্রশ্ন তুলে দেয়।
২০২২ সালের পর আর সুযোগই পাননি। ওই সময় বাদ পড়েছিলেন রাজ্য দল কর্নাটক থেকেও। অমন ঘোর অন্ধকার সময়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটে উঠেছিল নায়ারের সেই আর্তি—প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।
ক্রিকেট তাঁকে সেই সুযোগ দিয়েছে। অর নায়ার তা দুই হাত ভরে লুফে নিয়েছেন। সেটা কতটা, কিছু সংখ্যায় চোখ রাখলেই বোঝা যাবে। এক মৌসুম অপেক্ষা করে বিদর্ভে যাওয়া নায়ার সেই টুইটের পর থেকে গতকালের আগপর্যন্ত প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ ও ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে করেছেন ৩ হাজার ৩৫ রান, সেঞ্চুরি ১২টি। ভারতের আর কোনো ক্রিকেটার এই সময়ে এর চেয়ে বেশি রান বা সেঞ্চুরি করতে পারেননি।
ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়েও খেলেছেন দুই মৌসুম, রান করেছেন ৫৬ গড়ে। এ সময়ে দলগতভাবে জিতেছেন রঞ্জি ট্রফি, ফাইনালে উঠেছেন বিজয় হাজারে ট্রফির। ওয়ানডে সংস্করণের বিজয় হাজারেতে নায়ারই ছিলেন শীর্ষ ব্যাটসম্যান। ব্যাট করেছেন আট ইনিংসে, আউট হয়েছেন মাত্র দুবার। অপরাজিত ইনিংসগুলো ছিল এ রকম—১২২*, ৮৮*, ১৬৩*, ১১১*, ১২২*, ৮৮*। যে দুটিতে আউট হয়েছেন, তার একটিতে ১১২, আরেকটিতে ২৭।
প্রায় একা হাতে বিদর্ভকে ফাইনালে তোলার পর ট্রফি জিততে না পারলেও নায়ার আবার আইপিএলে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। যদিও দিল্লি তাঁকে সস্তা দামেই কিনেছে (৫০ লাখ রুপি)।
নায়ারের দৃষ্টি ছিল অবশ্য মাঠে নামার সুযোগ পাওয়ার দিকেই। যদিও দিল্লির প্রথম চার ম্যাচে সেই সুযোগটা আসেনি। অবশেষে পঞ্চম ম্যাচে সুযোগ এসেছে ডু প্লেসিকে চোটের কারণে তুলে নেওয়ায়। আর আইপিএল প্রত্যাবর্তনের প্রথম সুযোগেই নায়ারের ব্যাটে ছুটল আগুনের ফুলকি, যে আগুনে পুড়লেন বুমরার মতো বোলারও।
ম্যাচটা অবশ্য নায়ারের দল শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। মুম্বাইয়ের ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে হেরেছে ১২ রানে। তবে নায়ার জিতেছেন ঠিকই। প্রিয় ক্রিকেট তাঁকে আরেকটা সুযোগ তাঁকে দিয়েছে। বয়স এখন ৩৩ বছর। কখনো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে সুযোগ না পাওয়া নায়ার এখন সেদিকেও হয়তো একটা সুযোগ চাইতে পারেন।