Prothomalo:
2025-04-16@17:59:18 GMT

দুর্লভ পাথরঘুরানি বাটান

Published: 12th, March 2025 GMT

নতুন এক সামুদ্রিক পাখির সন্ধানে বার্ডিংবিডি ট্যুরসের উদ্যোগে কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় এসেছি; কিন্তু জায়গামতো গিয়ে ঘণ্টাখানেকের বেশি খুঁজেও সন্ধান পেলাম না। অবশেষে উপকূলীয় বাদাবন পাড়ি দিয়ে কালাদিয়া চরের দিকে গেলাম। বোট সকাল ১০টা নাগাদ কালাদিয়ায় পৌঁছাল। ভাটা লেগে গেছে, জোয়ারের পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে; আর লোনাজলের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে একচিলতে বালুচর।

পাঁচ মিনিটের অপেক্ষা। বুক ভরে দম নিলাম। গত চার বছরে যতবার এখানে এসেছি, ততবারই প্রচুর ছবি তুলেছি; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার একটি চার টেরাবাইটের হার্ড ডিস্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সোনাদিয়ার সব স্মৃতি মুছে গেছে। আজ সেসব স্মৃতির যতটা পারি এখান থেকে নিংড়ানোর চেষ্টা করব।

ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে চোখ রেখে ওদের খুঁজতে লাগলাম। চার-পাঁচ শ পাখির একটি ঝাঁক সদ্য জেগে ওঠা বালুচরে খাবারের সন্ধানে নেমেছে। স্পিডবোট থেকে হাঁটুপানিতে নেমে ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগোচ্ছি আর ক্লিক করছি। পাখিগুলোর নিরাপদ দূরত্বসীমা অতিক্রম করা মাত্রই ওরা উড়ে আকাশে চক্কর মেরে পাশের আরেকটি জেগে ওঠা বালুচরে গিয়ে বসল। আমরাও ওদের পিছু নিলাম। আর এভাবে স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া বেশ কিছু পাখির ছবি পুনরুদ্ধার করতে পারলাম। তবে যে বিশেষ পাখিটির খোঁজে এসেছি, সেটির দেখা পেলাম না।

তবে নতুন পাখিটির দেখা না পেলেও লালচে বর্ণের সুন্দর একটি পাখি দেখলাম সৈকতপাখির মিশ্র ঝাঁকে। ১০–১২ বছর ধরে পাখিটিকে খুঁজছি সুন্দরবন, নিঝুম দ্বীপ, দমার চর, সেন্ট মার্টিন ও সোনাদিয়ায়। অবশেষে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওগুলোকে পেলাম কালাদিয়ায়। আগেই বলেছি, হার্ড ডিস্ক নষ্ট হওয়ায় ছবিগুলো হারিয়ে গেছে। আজ বেশ ধৈর্য নিয়ে আবারও ওগুলোর ছবি তুললাম। তবে এবার আরও কাছে পেলাম। এদের কিছু উড়ন্ত ছবিও তুললাম।

কালাদিয়ার লালচে পাখিগুলো এ দেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি পাথরঘুরানি বাটান। পীতপাথুরে বা লালনুড়ি বাটান নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম ‘রাডি টার্ন স্টোন’। গোত্র স্কোলোপ্যাসিডি, বৈজ্ঞানিক নাম Arenaria interpres। এরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়াজুড়ে বিস্তৃত।

পাথরঘুরানি বাটান ছোট আকারের ও গাট্টাগোট্টা সৈকতপাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ২২ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৮৫ থেকে ১৫০ গ্রাম। প্রজননকালীন ও অন্য সময় প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পালকের রঙে বেশ পার্থক্য থাকে। দেহের ওপরটা কালচে বাদামি। নিচের অংশ, থুতনি ও গলার ওপরটা সাদা। বুকে প্রশস্ত কালচে বাদামি পট্টি; কিন্তু প্রজননকালে মাথা হয় সাদা। দেহের ওপরটা তামাটে লাল রং ধারণ করে। ঘাড় ও বুকে সাদা-কালোর কারুকাজ দেখা যায়। ডানা, কাঁধ ও ঢাকনিতে সাদা-কালো-বাদামি-তামাটে লালের সমন্বয় দেখা যায়। ওড়ার সময় ডানার সাদা ডোরা ও লেজের কালো দাগ চোখে পড়ে। চোখ বাদামি। খাটো ও সোজা চঞ্চুটি কালো। পা খাটো ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল কমলা। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় কোনো পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের ওপরে হালকা হলদে ঝালর দেখা যায়।

কালাদিয়ার আকাশে একটি উড়ন্ত পাথরঘুরানি বাটান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প থরঘ র ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন

রাজশাহীতে আজ মঙ্গলবার সকালে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্র। নতুন এই প্রজননকেন্দ্রে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন ঘড়িয়াল জুটিকে। এই জুটির এখনো নাম দেওয়া হয়নি।

বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রটি করা হয়েছে। এটির অবস্থান জিয়া শিশুপার্ক রোডে। আজ সকালে কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম।

এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে থাকা গড়াইকে গাজীপুর সাফারি পার্কে ও পদ্মাকে নতুন প্রজননকেন্দ্রে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ মিঠাপানির বিরল প্রজাতির কুমির-ঘড়িয়াল। এই কুমির এখন বিলুপ্তির পথে। তাই রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় আবদ্ধ জায়গায় প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

এর আগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানের পুকুরে ঘড়িয়াল ছিল দুটি। দুটিই ছিল মেয়ে। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট তাদের সঙ্গী পাল্টে দেওয়া হয়। তখন মেয়েটির নাম রাখা হয় পদ্মা আর গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা ছেলে ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় গড়াই।

রাজশাহী চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও ইনচার্জ ফরহাদ উদ্দিন বলেন, প্রায় ৮ বছর ধরে বারবার এরা পানিতে ডিম দিয়েছে। ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য প্রজনন ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন মেয়ে ঘড়িয়াল পদ্মাকে নতুন প্রজননকেন্দ্রে দেবেন আর ছেলেটিকে গাজীপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, দেশে এর আগে কোথাও ঘড়িয়ালের ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ হয়নি। রাজশাহীতে যদি সফল হয়, তাহলে এটা হবে বিরল ঘটনা।

উপমহাদেশীয় এই কুমির সাধারণত মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। এর মূল আবাসভূমি গঙ্গা (পদ্মা) নদী বলে এর বৈজ্ঞানিক নামকরণও (Gavialis gangeticus) হয়েছে গঙ্গার নামে। তবে গঙ্গা ছাড়াও উপমহাদেশের অন্যান্য বড় নদীতেও আগে ঘড়িয়াল দেখা যেত। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও সেগুলোর শাখায় একসময় প্রচুর ঘড়িয়াল দেখা যেত। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম ঘড়িয়াল বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশে ঘড়িয়াল বর্তমানে মহাবিপন্ন বন্য প্রাণী, যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত।

নতুন প্রজননকেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। পাশাপাশি কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন রোদ পোহানোর সময় বা অন্য কোনো সময় ঘড়িয়ালকে বিরক্ত করা যাবে না, ডিম সংগ্রহ বা নষ্ট করা যাবে না, পুকুরে পলিথিন বা প্লাস্টিক ছুঁড়ে ফেলা যাবে না এবং পুকুরে কাপড় কাচা, মাছ ধরা ও গোসল করা যাবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হালদা নদী থেকে বালু তোলায় দুজনকে এক লাখ টাকা জরিমানা
  • রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন
  • বিরল জাতের বিড়ালজাতীয় প্রাণী অনলাইনে বিক্রির সন্দেহে স্পেনে দম্পতি গ্রেপ্তার