দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার আন্তবাণিজ্য পৃথিবীর আঞ্চলিক জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। নানা রাজনৈতিক জটিলতার কারণে এ অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এক অর্থবছরে যত পণ্য রপ্তানি করে তার মাত্র ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে।

সার্কভুক্ত দেশে যেমন বাংলাদেশের রপ্তানি কম, তেমনি এই দেশগুলো থেকে আমদানিও কম। বাংলাদেশের মোট আমদানি পণ্যের ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ করে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে আসে। আবার এ আমদানিও ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে সার্কভুক্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও বিদেশি বিনিয়োগের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ ১৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে এসব দেশ থেকে আমদানি করেছে ৯৭৬ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য। সামগ্রিকভাবে সার্কভুক্ত দেশগুলো তাদের মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ নিজেদের মধ্যে করে থাকে। এ হার পৃথিবীর আঞ্চলিক জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। সে জন্য বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম সংযুক্ত অঞ্চল।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা ভারতের সঙ্গে। সার্কভুক্ত দেশগুলোয় বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে তার প্রায় ৯০ শতাংশ ভারতে। একইভাবে এসব দেশ থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ আসে ভারত থেকে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে প্রায় ১৫৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। এরপর পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৬ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য। শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডলারের পণ্য। আর নেপালে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার; আফগানিস্তানে ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার; ভুটানে প্রায় ৯১ লাখ ডলার ও মালদ্বীপে প্রায় ৪১ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।

বাংলাদেশ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে যেসব পণ্য রপ্তানি করে তার মধ্যে ভারতে বস্ত্র, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ তেল, কাঁচা চামড়া, প্লাস্টিক ও রাবার, জুতা, খনিজ, যন্ত্রাংশ; পাকিস্তানে বস্ত্র, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, রাবার, মৌল ধাতু, জুতা; শ্রীলঙ্কায় রাসায়নিক ও শিল্পপণ্য, মণ্ড, প্লাস্টিক ও রাবার, জুতা, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ; আফগানিস্তানে রাসায়নিক, বস্ত্র, প্রস্তুতকৃত খাদ্য, স্পিরিট, ভিনেগার ইত্যাদি; ভুটানে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, ভিনেগার, তামাক, খনিজ, প্লাস্টিক; নেপালে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র, রাসায়নিক ও সহায়ক শিল্পপণ্য, প্লাস্টিক, রাবার, খনিজ ও অন্যান্য পণ্য এবং মালদ্বীপে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, পানীয়, স্পিরিট, সবজি, বস্ত্র ও সহায়ক পণ্য রপ্তানি হয়।

আমদানির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। এ ছাড়া ভুটান থেকে প্রায় ৪ কোটি ডলার; আফগানিস্তান থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার; পাকিস্তান থেকে প্রায় ৬৩ কোটি ডলার; নেপাল থেকে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার; মালদ্বীপ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ডলার ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

প্রবাসী আয় ও এফডিআই

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বাংলাদেশি শ্রমিকেরা তেমন একটা যান না। ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে, তার ১ শতাংশেরও কম আসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার এসেছে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে মালদ্বীপ থেকে। সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় আসে তার প্রায় ৬৯ শতাংশ আসে এই দ্বীপ দেশটি থেকে। ভারত থেকে আসে প্রায় ২৩ শতাংশ।

একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে যে পরিমাণ এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার মাত্র ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এসেছে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে। উল্লেখিত অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট প্রায় ১৪৭ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে এসেছে প্রায় ২৪ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করা গেলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য থাকলেও তাদের বাণিজ্যনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এত ভিন্নতা আছে যে সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ম ণ প রব স সবচ য় আমদ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নাম লেখাতে আমরা প্রস্তুত: অধ্যাপক মোর্শেদ

ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নাম লেখাতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান।

তিনি বলেছেন, “ইসরায়েলকে সশস্ত্র জবাব দিতে হবে। বিশ্বের সবগুলো দেশকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ইসরাইলকে মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজনে যুদ্ধে নাম লেখাতে আমরা প্রস্তুত আছি। অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।”

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সাদা দলের মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

নিরাপত্তা উপদেষ্টার নিয়োগ বাতিলের দাবি বিপ্লবী পরিষদের

এবারের শোভাযাত্রা সর্ববৃহৎ ও জাঁকজমকপূর্ণ হবে: চারুকলা

এ সময় অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন, ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিজ্ঞান অনুষদ ডিন ও ঢাবি সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, আইন অনুষদ ডিন অধ্যাপক ইকরামুল হক, কলা অনুষদ ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান প্রমুখ।

কলা অনুষদ ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিবেকের তাড়নায় আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইজরাইল বর্বর গণহত্যা চালিয়ে আসছে। গাজা একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সমর্থন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইজরাইল যে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আমরা ইজরাইলকে জানাতে চাই, এ গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া যেসব দেশ ইজরাইলকে সহযোগিতা করছে, তাদেরকে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং জাতিসংঘ ও ওআইসিকে এগিয়ে আসতে হবে। বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমরা দেখেছি ফোনে আড়িপাতার যন্ত্র আমদানি হয়েছিল এই ইজরাইল থেকে, পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইজরাইল’ বাতিল করেছে। আমরা চাই না বাংলাদেশের সঙ্গে ইজরাইলের কোনো লিখিত অলিখিত সম্পর্ক থাকুক।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ হিসেবে নয় শিক্ষক হিসেবে এখানে এসেছি। যদি মনুষত্ববোধ থেকে থাকে আমাদের সবারই এ বিষয়ে সামনে আসা উচিত। আমাদের যদিও করার কিছু নেই, কিন্তু আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ইসরাইল যা খুশি করুক, কিন্তু তারা ফিলিস্তিনি জাতির কিছুই করতে পারবে না। তারা জেগে থাকবে, টিকে থাকবে। ইসরায়েলের সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে।”

ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, “অক্টোবর ২০২৩ এ তাদের ধারণা ছিল, তারা ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করে ফেলবে। কিন্তু হামাস এবং হিজবুল্লার প্রতিরোধের মুখে আল্লাহর রহমতে এখনো তারা এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। তবে যে যেই ভাষা বোঝে, তাকে সে ভাষায় জবাব দিতে হবে। ইসরাইল একটা জাতিগত নিধন করতে চায়। তাদের দর্শন হলো এখন যদি শিশুদের হত্যা করা না হয়, তাহলে তারা বড় হয়ে যুদ্ধ করবে। সুতরাং ইসরায়েলকে তাদের ভাষায় জবাব দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমার তো মনে হয় যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। কেবল ওপেকভুক্ত দেশগুলো যদি তেল দেওয়া বন্ধ করে, তাহলে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে আসবে।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হঠাৎ বাড়ছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টে শেয়ারদর, চার দিনে বাড়ল ৬৩ টাকা
  • বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ পিছিয়ে কেন
  • গ্যাস–সংকটে সিইউএফএলে সার উৎপাদন বন্ধ
  • সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল ১৩৩ প্রতিষ্ঠান
  • ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নাম লেখাতে আমরা প্রস্তুত: অধ্যাপক মোর্শেদ
  • সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল ১৩৩ প্রতিষ্ঠান, মানতে হবে ৯ শর্ত
  • প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৩.৯% থাকবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি
  • রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো নিয়ে দরকষাকষি
  • মারা যাওয়ার ২ বছর পর অধ্যাপককে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশ হবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি