আওয়ামী লীগের শাসনের সময় শাহবাগ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে গুম, খুন, আয়নাঘর, বিচারিক হত্যাকাণ্ডসহ যাবতীয় অপকর্মের বৈধতা দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘শাহবাগ একদিনে গড়ে ওঠেনি। এককভাবে কেউ শাহবাগ গড়ে তোলেনি। শাহবাগ কায়েম করতে সমর্থন দিয়েছিল তথাকথিত সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, আমলা, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিদেশি এজেন্ট, রাজনীতিবিদ এবং ক্রীড়াবিদরাও।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির এ নেতা লিখেছেন, ‘শাহবাগ কেড়ে নিয়েছিল এদেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব ধরনের মৌলিক মানবাধিকার। কেড়ে নিয়েছিল স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে গুম, খুন, আয়নাঘর, বিচারিক হত্যাকাণ্ডসহ যাবতীয় অপকর্মের বৈধতা দিয়েছিল শাহবাগ।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও লেখেন, ‘শাহবাগ কায়েমে যারা সচেষ্ট ছিল, তাদেরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বিগত পনেরো বছরে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদেরই সমর্থনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতার মসনদে ছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এ সমন্বয়ক লিখেছেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা বিগত পনেরো বছরে সংঘটিত সকল অন্যায়, অপকর্ম, গুম, খুন ও নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করতে চাই।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘আমরা আশা রাখি, সকলের প্রচেষ্টায় তা সম্ভব। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এ জমিনে ইনসাফ কায়েম হবে। জুলাইয়ের শহীদদের স্পিরিট রক্ষায় আমরা সদা জাগ্রত। পুনরাবৃত্তি করছি, বিগত শাসনামলে হওয়া সকল অন্যায় ও নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

এরআগে আরও একটি পোস্টে তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, ২০২৫ এ এসে ২০১৩ ফেরানোর চেষ্টা করবেন না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প অপকর ম

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠকসহ আটক ২, দেশীয় অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ শহরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জিদান নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠকসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় জিদানের কাছ থেকে ৪ পিছ ইয়াবা ও একটি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। 

আটককৃতরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সংগঠক মো. জিদান ও  ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের দালাল ইকবাল হোসেন। রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী এ অভিযান চালায়। পরে আটককৃতদের সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আটক জিদানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হাসপাতালের দালালি, ইয়াবা বিক্রি ও সেবনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।  এ ঘটনার পর মো. জিদানকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অতি সামান্য আহত হয় জিদান। আহত হওয়ার সুবাদে নারায়ণগঞ্জ-৩০০ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতাল তথা খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় সে। চিকিৎসা নেয়ার সময় হাসপাতালের দালাল চক্রের হোতা নুরুল ইসলামসহ অন্যদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। 

পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে দালালদের গডফাদার নুরুল ইসলামের সাথে মিলে হাসপাতালের ঔষুধ চুরি, হাসপাতালে বসে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এমন বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে যৌথ বাহিনী তার বিরুদ্ধে গোপন তদন্ত শুরু করে। তদন্ত করতে গিয়ে তারা জিদান ও তার সহযোগীদের নানা অপকের্মর সত্যতা পায়। 

যারা গোপনে তদন্ত করছিলেন তারা খবর পান একটি কক্ষে জিদান ও তার সহযোগীরা ইয়াবা সেবন করছে। এসময় তারা ঐ কক্ষে প্রবেশ করলে জিদান ও তার সহযোগীরা তাদেরকে আটকে রেখে নির্যাতন করে। মারধরের শিকার ব্যক্তিরা যৌথ বাহিনীকে বিষয়টি জানালে তারা অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে উদ্ধার করে এবং জিদান ও তার এক সহযোগী ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।

জিদানের ব্যাগ থেকে একটি সুইস গিয়ার ও ৪ পিছ ইয়াবা উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। পরে তাদের দুজনকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। 

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জিদান হোসেন ছাত্রনেতার পরিচয়ে হাসপাতালের স্টাফদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন এবং নানা অনৈতিক সুবিধা আদায় করছিলেন। পাশাপাশি, তিনি হাসপাতালের অভ্যন্তরে ইয়াবা সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায় এবং ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করা হয়।

এদিকে, আটকের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জিদান হোসেনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয়। জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ জাবেদ আলম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সংগঠনের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার কারণে জিদান হোসেনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। বহিষ্কৃত ব্যক্তির কোন ধরণের অপকর্মের দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা নিবে না। জেলায় দায়িত্বরত সকল পর্যায়ের ব্যক্তিদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

তারা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কখনো চাঁদাবাজ, দখলদারীত্ব, অবৈধ কারবারি, নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি, রাষ্ট্র বিরোধী, আইন বিরোধী কার্যকলাপ সমর্থন করে না। যদি কেউ এতে জড়িত আছে বলে প্রমাণিত হয় তবে তার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়বদ্ধ থাকবে না এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আইনত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার আপত্তি থাকবে না। 

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ বাশার বলেন, দুপুর ১২ টার সময় দালাল ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আসেন। তারা সাদা পোষাকে থাকায় তাদের সাথে হাসপাতালের একজন স্টাফ নজরুলের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। 

এসময় নজরুল তাদেরকে এক রুমে বসতে বলেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে নজরুলসহ দালাল চক্রের বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমি সেনাবাহিনীকে জানালে তারা হাসপাতালের স্টাফ নজরুলকে ছেড়ে দেয়।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, জিদান হোসেন নামে এক ছাত্র সংগঠক ও তার সহযোগী ইকবাল হোসেনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তাদের কাছ থেকে একটি সুইস গিয়ার ও ৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • “প্রকাশ্যে চলছে পরিবহনে চাঁদাবাজি” জনবল চেম্বারের, ব্যবসা তাদের!
  • ছাত্রদল সম্পাদকের বক্তব্যের নিন্দা ঢাবি শাখা শিবিরের
  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠকসহ আটক ২, দেশীয় অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার