প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসাতে উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চায় জাপানি ব্যাংক
Published: 12th, March 2025 GMT
প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসাতে উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চায় জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন (জেবিআইসি) এবং দেশটির অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে। এসব ব্যাংক থেকে সরকার ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ দেবে জেবিআইসি। বাকি অর্থ দেবে জাপানের অন্য কোনো ব্যাংক।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার এই ঋণ নিলে তার জন্য সুদ দিতে হবে ৩ দশমিক ৩৯ থেকে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত। আর এই ঋণ হবে কঠিন শর্তের। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৬ মাস পর। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ৭ লাখ এবং কর্ণফুলী গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ৪ লাখ ৩৫ হাজার প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানো হবে। যদিও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগ এই ঋণের ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর ব্যাপারে একটা গ্রুপ আমার সঙ্গে দেখা করে গেছে। তারা আবার আসতে চায়। একদিকে উচ্চ সুদের বাণিজ্যিক ঋণ, অন্যদিকে অবচয়ের কারণে সম্ভাব্য বাড়তি চাপ। উভয় কারণেই বিষয়টির পক্ষে নই আমি।’
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের এপ্রিলে নতুন আবাসিক গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ২০১৯ সালে এসে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কমিটি গঠন করে কিছুসংখ্যক ব্যক্তির বাসায় নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে শিল্পমালিকেরা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন না। ফলে আবাসিক সংযোগ সরকার আর দেবে না। আবার প্রিপেইড মিটার বসানোর যে আলোচনা হচ্ছে, তা ডিজিটালও নয়। এ মিটার বসাতে সরকারের কোনো তহবিল নেই। তাই ঋণের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ ১২টি জেলায় গ্যাস সরবরাহ করছে তিতাস। আর চট্টগ্রাম, রাঙামাটিসহ পাঁচটি জেলার গ্রাহকেরা রয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাসের আওতায়। তিতাস ও কর্ণফুলীর মোট আবাসিক গ্রাহক ৩৪ লাখ, যার মধ্যে তিতাসের ২৮ লাখ ও কর্ণফুলীর ৬ লাখ। তিতাস এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৩ হাজার প্রিপেইড মিটার বসিয়েছে আর কর্ণফুলী বসিয়েছে ৬২ হাজার।
জেবিআইসি চায় অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তাপ্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর জন্য তোড়জোড় করছে জাপানি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একটি হচ্ছে জাপানি টয়োকেইকি কোম্পানি অন্যটি অনদা ইনকরপোরেশন। উভয় প্রতিষ্ঠানই ঋণের ব্যবস্থা করবে জেবিআইসি ও অন্য জাপানি ব্যাংক থেকে। এর বাইরে বিমা কোম্পানি হিসেবে থাকবে নিপ্পন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইনস্যুরেন্স (নেক্সি)। নেক্সিকে প্রিমিয়ামও দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। শুধু তাই নয়, ঋণের অর্থ ফেরতে জেবিআইসি অর্থ বিভাগ থেকে নিশ্চয়তা চায়। গত বছরের ৪ অক্টোবর জেবিআইসির পরিচালক শিবুইয়া আৎসুকি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে এক চিঠিতে জানান, প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর ব্যাপারে তারা ঋণ দিতে আগ্রহী, তবে প্রকল্পের আওতায় যেসব পণ্য ও সেবা কেনা হবে, তার ৮৫ শতাংশই জাপানি হতে হবে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনেওয়াজ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস থেকে আগে এ ব্যাপারে নেতিবাচক মতামত দেওয়া হয়েছিল। আদৌ এ গ্যাসের মিটার বসানোর দরকার আছে কি নেই, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।
জানা গেছে, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তদবিরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সম্প্রতি একটি বৈঠক ডাকে সচিবালয়ে। অতিরিক্ত সচিব এস এম মঈন উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঋণ নিয়ে গ্যাসের মিটার বসানোর বিষয়টিকে নতুন করে সামনে আনা হয়। এতে ইআরডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি মার্চের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন শেষ হবে আশা করছে জেবিআইসি। এমনকি আগামী ৩০ এপ্রিল ঋণচুক্তিও করে ফেলতে চায় তারা। এ জন্য একটি কমিটিও করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুধু জাপানি বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করছি, ঋণ নেওয়া ও চুক্তি করার এখতিয়ার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের।’
মূল উদ্যোগ আওয়ামী সরকারের২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর তিতাসের গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড গ্যাসের মিটার স্থাপনের ব্যাপারে একটি কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি করে জেবিআইসি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ চুক্তির আওতায় পরে জেবিআইসি থেকে ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকার সমান অর্থ চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সাধারণত বিদেশি ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে তা ইআরডিকে অবহিত থাকতে হয়।
জানতে চাইলে ইআরডি সচিব মো.
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর চিন্তা থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক গ সরক র জ ব আইস সরক র র হয় ছ ল র জন য ব ষয়ট আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।
আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।
গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি
বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান
মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।
সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।”
বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ