মস্কোতে ইউক্রেনের ব্যাপক ড্রোন হামলায় প্রাণহানি
Published: 12th, March 2025 GMT
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। গতকাল মঙ্গলবার এ হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছেন। রুশ কর্মকর্তারা জানান, হামলার জেরে সাময়িক সময়ের জন্য মস্কোর চারটি বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। এমন একসময় এ হামলা হলো, যখন তিন বছরের যুদ্ধাবসানে যুদ্ধবিরতি ও খনিজ সম্পদ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে সৌদি আরবের জেদ্দায় আলোচনায় বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্স জানায়, ৩৩৭টি ড্রোন দিয়ে রাশিয়াজুড়ে এ হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে মস্কো অঞ্চল টার্গেট করে ৯১টি। এসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। রুশ বাহিনী পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের হাজার হাজার সেনাকে ঘিরে ফেলার চেষ্টার সময় গতকাল ভোরের দিকে এ হামলা ঘটে।
যুদ্ধ চলাকালে বারবার বড় ধরনের রুশ হামলার শিকার হয়েছে কিয়েভ। গত সোমবার রাতে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১২৬টি ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। কিয়েভ বলছে, তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর ও পূর্ব সতর্কীকরণ রাডার স্টেশনগুলোতে বারবার ড্রোন হামলা চালানোর পাল্টা আঘাতের চেষ্টা হিসেবে বড় প্রতিবেশী দেশটির বিরুদ্ধে তারা এ হামলা চালিয়েছে।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেন, এটি ছিল শহরটিতে সবচেয়ে বড় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা। মস্কো রাশিয়ার বৃহত্তম শহর, যেখানে কমপক্ষে ২ কোটি ১০ লাখ লোকের বাস। একজন জ্যেষ্ঠ রুশ আইনপ্রণেতা মনে করেন, ইউক্রেন মস্কোতে যে হামলা চালিয়েছে, তার জবাবে রাশিয়ার উচিত ‘ওরেশনিক’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালানো। স্থানীয় ও রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি ড্রোন আবাসিক এলাকায় আঘাত হানে। নিহতদের মধ্যে দু’জন শ্রমিক রয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শিশুসহ আরও ১৮ জন।
মস্কোর গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিভ সামাজিকমাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত একটি অ্যাপার্টমেন্টের ছবি পোস্ট করেছেন, যাতে ভাঙা জানালা দেখা গেছে। তবে মস্কোর বাসিন্দারা স্বাভাবিকভাবে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। রাশিয়ার বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, হামলার পর চারটি বিমানবন্দরেই ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। পরে সেগুলো চালু হয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তোড়জোড় শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা ও প্রাণহানি বেড়েছে।
এদিকে সৌদি আরবের জেদ্দায় ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফলপ্রসূ উপায়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অফিসের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে গঠনমূলক উপায়ে; আমরা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছি।’ এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আলোচনায় ‘ভালো কিছু’ হবে।
ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে সৌদি আরব। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগ্বিতণ্ডার পর এটা দু’পক্ষের মধ্যে প্রথম বৈঠক। এর আগে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
এদিকে রুশ সেনাদের ভয়াবহ আক্রমণে টিকতে না পেরে কুরস্ক অঞ্চলের দখলকৃত এলাকা থেকে পিছু হটছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। এরই মধ্যে অন্তত সাতটি গ্রাম পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। টেলিগ্রামে পাওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে রুশ সেনাদের অগ্রগতি এবং ইউক্রেনীদের আত্মসমর্পণের প্রমাণ মিলছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ শহর সুদজাসহ ১ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল দখল করে নেন ইউক্রেনীয় সেনারা। ওই সময় তারা শত শত রাশিয়ান নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। এই আক্রমণকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার ভূখণ্ডে সবচেয়ে বড় আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনা-ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
রাজধানীর শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে গুলির ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, গণ জাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার থাকা জিয়াউল আহসানসহ চারজনকে এই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলাম।
আগামী ১২ মে তাদেরকে হাজির করতে ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, গাজী এম এইচ তামিম, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, তারেক আব্দুল্লাহ ও শাইখ মাহাদী।