ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন। আর নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন প্রায় ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপে উত্তরদাতাদের ৬১ শতাংশ মত দিয়েছেন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার পর অলটারনেটিভস ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শিরোনামে শীর্ষক ওই জরিপ প্রকাশ করেছে।

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তি এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে জরিপটি চালায় সেন্টার ফল অলটারনেটিভস। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেশের ৩২টি জেলায় ৫ হাজার ৩৫৫ জনের মধ্যে অনলাইন-অফলাইনে এ জরিপ চালানো হয়। এঁদের মধ্যে ২ হাজার ৬৮১ জন অফলাইনে এবং ২ হাজার ৬৭৪ জন অনলাইনে জরিপে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি নিয়ে এ নিয়ে তৃতীয়বার এ ধরনের জরিপ চালানো হলো।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সেন্টার পর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোন পথে এগোচ্ছে জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক বলে মত দেন। আর ভালো কিংবা মন্দ কোনোটাই নয় এমন মত দেন ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ–চীন সম্পর্কের বিষয়ে ভালো মত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের ভালো সম্পর্কের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ৭৯, ৭৪ ও ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে কীভাবে দেখে জানতে চাওয়া হয় উত্তরদাতাদের কাছে। এ বিষয়ে যথাক্রমে চীনের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ নেতিবাচক উত্তর দিয়েছেন।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করেছে, যা ওই সম্পর্কের বিষয়ে ঐকমত্যের ব্যাপকতার প্রতিফলন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাদের আস্থার বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদ দেখিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্বিতীয়ত জনগণের সঙ্গে জনগণের আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশি জনগণের মতামত এবং পরামর্শের প্রতি তাদের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ইয়াও ওয়েন বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের যে ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য চীনে ব্যক্তিগতভাবে যেতে বা তাঁদের সন্তানদের পাঠাতে ইচ্ছুক। এই হার ২০২২ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। প্রায় ২৯ শতাংশ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, জরিপের ফলাফল থেকে এই আভাস রয়েছে যে বাংলাদেশি জনগণ চীনে ভ্রমণ, পড়াশোনা এবং ব্যবসা করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংকট মেটানোর লক্ষ্যে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আদি নিবাসে ফিরতে পারে, সেই জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।’

চীনের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেরা বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মহসিন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আমেনা মোহসিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মত দ য় ছ ন সহয গ ত র জন য র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ভালোর জন্য যেকোনো বিষয়ে হতে পারে আলোচনা: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষ ও দেশের ভালোর জন্য যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছি ভালো একটা পরিবর্তনের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ও কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। এখন নানাজন বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলছেন। আমরা আড়াই বছর আগে প্রথম এটি উপস্থাপন করেছি। তারপরও এটিকে স্বাগত জানাই।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএসএসএফ কনভেনশন হলে (শুটিং ক্লাব) জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘আমরা একজন আরেকজনের বাস্তবধর্মী সমালোচনা অবশ্যই করব। সেটি করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি যাতে উদ্ভব না হয়, যেখানে দেশ ও জনগণের ইস্যুগুলো চিহ্নিত করতে ভুলে যাব। এটি হলে এদেশের সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতে পারে।’ 

তারেক রহমান বলেন, শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, সাংবিধানিক ব্যবস্থা এবং ভোটের ব্যবস্থা যেমন আলোচনা হওয়া উচিত, তারচেয়ে বেশি কিংবা সমান আলোচনা হওয়া উচিত– কীভাবে মানুষের সমস্যার সমাধান করবেন। এছাড়া আমরা রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সামনে পরিবেশ সংস্কারের ব্যাপারে কী সংস্কার উপস্থাপন করতে পারি না?

তারেক রহমান বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র। সেটি হচ্ছে একটি মানবিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের কথা বলার অধিকার থাকবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সংস্কার। আমরা সব রাজনৈতিক দল বিগত ১৫ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এই আন্দোলন করেছি ডাকাতি করে নেওয়া জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। সেটিতে আমরা সফল হয়েছি। 

এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড. মাহদী আমিন, মজিবুর রহমান মঞ্জু, রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের জন্য অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেছে কানাডা
  • মানুষের ভালোর জন্য যেকোনো বিষয়ে হতে পারে আলোচনা: তারেক রহমান
  • অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে ভারতের চেয়ে এগিয়ে চীন
  • নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: আলী রীয়াজ
  • জাতীয় ঐকমত্য সমঝোতা স্মারকে যা থাকতে পারে 
  • ‘সংস্কার’ নির্বাচনের আগে নাকি পরে, ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত চায় কমিশন
  • স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় ঐকমত্য কমিশন
  • ১৬৬ সুপারিশসহ ৩৪ রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্য কমিশনের চিঠি
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে: এবি পার্টি