সিরাজগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এক মাসের ব্যাবধানে যানবাহনে পরপর চারটি ডাকাতি হওয়ায় ঢাকা-উত্তরাঞ্চলের চালক-যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। ডাকাতি ছাড়াও এ সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না ডাকাত ও দুর্বৃত্তদের। পণ্যবাহী ট্রাকের পাশপাশি যাত্রীবাহী প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসেও ডাকাতি হচ্ছে। অস্ত্রের মুখে চালক-যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতরা লুটে নিচ্ছে পণ্য, মূল্যবান সামগ্রী ও নগদ অর্থ। অভিযোগ আছে, জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের দুর্বল টহল ব্যবস্থা, কড়া নজরদারির অভাবে এই মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতি হচ্ছে। শুধু মহাসড়ক নয়; সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ডাকাতি হচ্ছে। মামলা হলেও দায়সারা তদন্তের কারণে ধরা পড়ছে না অপরাধীরা।
কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল গ্রামের অনেকেই জানান, এ গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে ইউপি সদস্য কোরবান আলীর নেতৃত্বে আন্তঃজেলা ডাকাত দল মহাসড়কে সাম্প্রতিক ডাকাতিগুলোয় জড়িত। কোরবান আলী আগে পেশাদার চোর ছিল। পরে ডাকাত দলে যোগ দিয়ে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলে। তার বিরুদ্ধে কামারখন্দসহ বিভিন্ন থানায় ২৫টি চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা আছে। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা চরাঞ্চলের কিছু অপরাধী যোগ দিয়েছে কোরবান আলীর ডাকাত দলে। আগের সরকারের আমলে জেলে থাকা অনেক অপরাধী সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। কোরবানের ডাকাতির ইতিহাস জেনেওে রহস্যজনক কারণে পুলিশ এখনও তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিচ্ছে না।
যমুনা সেতুর পশ্চিমে জেলার ঢাকা-রংপুর-রাজশাহী মহাসড়কে কামারখন্দের কোনাবাড়ী এলাকায় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে গত রোববার রাতে জামায়াতপন্থি এক দল শিক্ষককে বহনকারী মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা শিক্ষকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৬০ হাজার টাকা, সাতটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। গত ৫ ও ২২ ফেব্রুয়ারি একই মহাসড়কের একই স্থানে যাত্রীবাহী দুটি মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেটকারে ডাকাতি হয়েছে। এ ছাড়া গত ৩০ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরুবোঝাই একটি ট্রাক নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পথে কামারখন্দে বিকল হলে ডাকাতদের কবলে পড়ে। ডাকাতি হওয়া গবাদি পশুগুলোসহ ডাকাত দল স্থানীয়দের তাড়া খেয়ে পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জ খেয়াঘাটে রেখে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি চারটি ডাকাতির ঘটনায় মামলা হলেও এখনও এর কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি যমুনা সেতু পশ্চিম থানা পুলিশ। আবার ১৪ টন রডবোঝাই একটি ট্রাক ডেমরা থেকে বগুড়ার শেরপুর যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহামড়কের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনায় গত ৬ মার্চ রাতে ডাকাতের কবলে পড়ে। র্যাবের জাকেট পরে ৬/৭ জনের এক দল ডাকাত ট্রাকটি তল্লাশির নামে থামিয়ে মালপত্র লুট করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাদ্দাম নামে উল্লাপাড়ার এক ডাকাতকে দেড় টন রডসহ পরে আটক করে পুলিশ। বাকি মাল ও অপরাধীরা এখনও অধরা।
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সাসেক-২ প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার সম্প্রসারণ কাজ চলছে। ফলে ঝাঐল এলাকায় সরু রাস্তায় ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন ধীরগতিতে চলার সুযোগে ডাকাতরা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে সহজেই ডাকাতি করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। তা ছাড়া সেতুর পশ্চিম পাড়ে সয়দাবাদ থেকে নলকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় মহাসড়কের দু’পাশে ভুট্টা, আখসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। রাতে এসব ক্ষেতে অপরাধীরা লুকিয়ে থাকে।
কাজীপুর থানার ওসি নুর আলম বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কুনকুনিয়ায় মাশফি ডেইরি ফার্মের চারটি গরু লুটে নিয়ে যায় ডাকাতরা। আমরা এতে জড়িতদের ধরতে চেষ্টা করছি। রায়গঞ্জ থানার ওসি আসাদ উদ্দিন বলেন, ১৪ টন রডবোঝাই ট্রাকে ডাকাতির ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি জড়িতদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।
কামারখন্দ থানার ওসি মোখলেসুর রহমান বলেন, আমি থানায় যোগদানের পর ঝাঐল ইউপি সদস্য কোরবান আলীকে একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করি। জামিনে ছাড়া পেয়ে এখন সে ফেরার। তার নামে কামারখন্দসহ বিভিন্ন থানায় ২৫টি চুরি-ডাকাতির মামলা রয়েছে।
অভিযুক্ত কোরবান আলী গত সোমবার বিকেলে ফোনে সমকালকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি কোনোভাবেই মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। চিকিৎসা নিতে আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে জেলা পুলিশ সুপার ফারুক হোসেনের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল ও এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। বগুড়া অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজির পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন স র জগঞ জ ক ম রখন দ ড ক ত দল অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
আইপিএলের প্রথমভাগে বেঞ্চে থাকবেন ‘গতি তারকা’ মায়াঙ্ক
আইপিএলের ১৮তম আসর বসতে যাচ্ছে রবিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) থেকে। ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই আসরের খেলা মাঠে গড়ানোর আগে বড় ধাক্কা লাগল লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টে। দলটির গতি তারকা মায়াঙ্ক যাদব যে, আইপিলেরে প্রথমাংশে বেঞ্চে বসে থাকবেন।
কয়েকদিন আগে নিশ্চিত হয় যে, আইপিএলে প্রথম দুই সপ্তাহ খেলতে পারবেন না জাসপ্রীত বুমরাহ। এ বার সেই চোটের কারণেই মাঠে নামতে অপেক্ষা করতে হবে মায়াঙ্কেরও। তার পেশির চোট এখনও পুরোপুরি সারেনি। ঠিক কোন সময়ে তিনি আইপিএল খেলতে পারবেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা যাচ্ছে প্রথম ছয়-সাতটি ম্যাচ লক্ষ্ণৌর এই পেসার খেলতে পারবেন না।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে না খেলা প্যাট কামিন্স খেলবেন আইপিএলে
মুজিব যেভাবে আইপিএলে
শেষ এক বছরে একের পর এক চোটে পড়েছেন মায়াঙ্ক। গত মৌসুমে ঘন্টায় প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার গতিতে বল করে নজর কেড়েছিলেন তিনি। যে কারণে লক্ষ্ণৌ, জেদ্দায় অনুষ্ঠিত মেগা নিলামে তোলেনি এই গতি তারকাকে। ধরে রেখেছিল বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে।
এদিকে মায়াঙ্ককের চোটের ব্যাপের বিবৃতি দেওয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। তাকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। লক্ষ্ণৌর ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট জাহির খান ক্রিকইনফোকে বলেন, “আমরা চাই মায়াঙ্ক ১০০ শতাংশ নয়, বরং ১০০ শতাংশ ফিট হয়ে খেলতে নামুক।”
২০২৩ সালের লক্ষ্ণৌ মায়াঙ্ককে কিনেছিল মাত্র ২০ লক্ষ রুপিতে। তবে চোটের কারণে একটি ম্যাচও খেলা হয়নি তার। তার অভিষেক হয়েছিল গত মৌসুমে। প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে তিন উইকেট নিয়েছিলেন। পরের ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষেও নিয়েছিলেন তিন উইকেট। পর পর দু’ম্যাচে সেরা হয়েছিলেন তিনি। তবে চোটের কারণে মাত্র চার ম্যাচ খেলেই থেমেছিল তার আইপিএল যাত্রা। সেটাই যথেষ্ঠ ছিল এই ২২ বছর বয়সী পেসারের জাতীয় দলে ঢুকার জন্য। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪ উইকেট নেন, সাথে দেখান গতির ঝলক। সেই প্রতিশ্রুতি দেখেই ১১ কোটি টাকা দিয়ে মায়াঙ্ককে ধরে রাখে লক্ষ্ণৌ।
আইপিএলে লক্ষ্ণৌ প্রথম ম্যাচ ২৪ মার্চ। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে খেলবে তারা।
ঢাকা/নাভিদ