বিগত সময়ে দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি। তখন দেশের ভেতরে যেমন নির্বাচন ছিল না, একইভাবে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মধ্যেও নির্বাচন হয়নি। তারা দুর্নীতি করেছেন, আবার টেকসই উন্নয়নের কথাও বলেছেন। এটা অনেকটা ফাঁকা বুলির মতো– যেখানে নির্বাচন নেই, প্রতিযোগিতা নেই, সেখানে টেকসই উন্নয়ন আশা করা যায় না।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট ও ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের ভাবনা বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো এবং বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড.
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি ও রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হলে সৎ নেতৃত্ব প্রয়োজন, যাদের মানুষ সম্মান করে। কারণ নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা একটা টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার মধ্যেই নিহিত রয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, টেকসই ব্যবস্থার মডেলের জন্য বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত করতে হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সমর্থন বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন সমস্যা, জ্বালানি সরবরাহ, সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হয়রানি ও শ্রম পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো সমাধান করা প্রয়োজন।
সিডিপি সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি-বেসরকারি উভয় জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের বড় ভূমিকা রয়েছে। বলা যায়, ব্যক্তিখাতের উন্নয়ন ছাড়া এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২০ হাজারের মতো। অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে এ রকম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ কোটির বেশি। এসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশের বিষয়ে সচেতন নয়।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, দেশের পোশাক কারখানা সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিক থেকে সারাবিশ্বে শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে পণ্যের প্রকৃত বাজারমূল্য ধরা সম্ভব হয়নি। জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহামিন জামান বলেন, দায়িত্বশীল উৎপাদন ব্যবস্থায় সিএসআর গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এর ধারণাই সুস্পষ্ট করা হয়নি। নিউ এইজ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, সিএসআর, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এবং গ্রিন বন্ডের মতো টেকসই অর্থায়নের ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তিখাত এসডিজি অর্থায়নে যুক্ত হতে পারে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, দেশে সামাজিক ব্যবসার জন্য এখনও আইনি কাঠামো তৈরি হয়নি। ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক শামীমা আক্তার বলেন, কোনো বহুজাতিক কোম্পানি আসতে চাইলে তারা দেখতে চায় এখানে ব্যবসা করার টেকসই ব্যবস্থা আছে কিনা।
এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, দেশের শ্রমবাজারের ৮৫ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষের জন্যই শ্রম আইন ও বিধি প্রয়োগ করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ র জন য ট কসই এসড জ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সমিতি, প্রযোজকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা, কী করবে এফডিসি
আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই। আশঙ্কাজনক হারে কাজ কমায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও অনিয়মিত। সম্প্রতি অন্য খাত থেকে ঋণ এনে বেতন-ভাতা পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটি।
৩১৭ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিএফডিসির পাওনা ২১ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪ টাকা। কাজ শেষ হওয়া ৯৬ সিনেমার প্রযোজকের কাছে পাওনা ৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৭ টাকা।কদিন পরই ঈদ, এ মাসে এখনো কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় সংকট বাড়ছে। বিএফডিসিকে কর্মমুখর করতে ভাড়া কমিয়ে শুটিংয়ের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এরপরও থেকে যাচ্ছে বিশাল অঙ্কের টাকার ঘাটতি। তাই পাওনা অর্থ আদায়ে উদ্যোগী হচ্ছে এফডিসি। এসব অর্থ আদায়ে এফডিসি কর্তৃপক্ষ কঠোর হবে, জানালেন নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান।
সিনেমা থেকে পাওনা
বিএফডিসির হিসাব বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩১৭ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিএফডিসির পাওনা ২১ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪ টাকা। কাজ শেষ হওয়া ৯৬ সিনেমার প্রযোজকের কাছে পাওনা ৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৭ টাকা। অসম্পূর্ণ ২২১ সিনেমার প্রযোজকের কাছে প্রতিষ্ঠানটি পাবে ১৬ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৫৪৭ টাকা। শুধু এইচআর ফিল্মস কর্তৃপক্ষের কাছেই পাওনা ৩২ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৬ টাকা। এ ছাড়া অপূর্ব চলচ্চিত্রের কাছে ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৩ টাকা, অভি ফিল্মের কাছে ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮১ টাকা, পিয়া চলচ্চিত্রের কাছে ২৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৫ টাকা, উইনো ফিল্মের কাছে ২২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৭ টাকা, গোল্ডেন বাংলা প্রোডাকশনের কাছে ২১ লাখ ৪১ হাজার ১০০ টাকা, বিএসএ প্রোডাকশনের কাছে ১৭ লাখ টাকা, ডলফিন ফিল্মসের কাছে ১৫ লাখ টাকা, দেশ বাংলা মিডিয়ার কাছে ১২ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৭ টাকা ও কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্রের কাছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬০ টাকা এফডিসির পাওনা রয়েছে।
এইচআর ফিল্মসের অন্যতম অংশীদার শাহীন সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিনেমার কাজ শেষ করতে পারিনি। আর্থিক সমস্যা ও শিডিউল জটিলতায় কোটি টাকার ওপর লস করেছি। আমার সিনেমার সব ফুটেজ ও মালামাল বিএফডিসিতে রক্ষিত আছে। বিএফডিসি আমাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে, আমিও আইনি প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছি।’
৭ সংগঠন থেকে বিএফডিসির মোট পাওনা ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫২ টাকা। এর বাইরে গ্রিন টিভির গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের কাছে বিএফডিসির বকেয়া ২৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৫ টাকা।সমিতি থেকেও বকেয়া
বিএফডিসিতে চলচ্চিত্রের সাত সংগঠনের কার্যালয়। ভবনভাড়া, বিদ্যুৎ-পানির বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তাদের কাছে বিএফডিসির পাওনা প্রায় কোটি টাকা। সংগঠনগুলোকে গত ডিসেম্বরে চিঠি পাঠিয়েছে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ। সাড়া মেলেনি। চলতি মাসে আবার সংগঠনগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে, জানিয়েছে হিসাব বিভাগ। সর্বশেষ চিঠির তথ্যমতে, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কাছে বিএফডিসির পাওনা সবচেয়ে বেশি। জানুয়ারি ২০১০ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সংগঠনটির কাছে বকেয়া ৩১ লাখ ২১ হাজার ২৭৩ টাকা। ২০ লাখ ৭২ হাজার ৮২৫ টাকা বকেয়া নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে প্রযোজক সমিতি। চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির কাছে ২০ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৩ টাকা বকেয়া। এর বাইরে চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থার কাছে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৩৬২ টাকা, সিডাবের কাছে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৯ টাকা, ফিল্ম এডিটরস গিল্ডের কাছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৫৬ টাকা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ব্যবস্থাপক সমিতির কাছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৪ টাকা পায় এফডিসি। ৭ সংগঠন থেকে বিএফডিসির মোট পাওনা ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫২ টাকা। এর বাইরে গ্রিন টিভির গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের কাছে বিএফডিসির বকেয়া ২৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৫ টাকা।
বকেয়া প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী বলেন, ‘৪০ বছরের বকেয়া জমায় এ অবস্থা। এত টাকা বর্তমান কমিটির পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তাই অন্য সংগঠন যে পথে হাঁটবে, আমরাও সেভাবেই যাব। এর আগে আমরা দুবার চিঠি পেয়েছি, তখন কিছু টাকা পরিশোধ করেছি। আমাদের সমিতির তো ফান্ড নেই, আয় বলতে সদস্যদের চাঁদা। আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি, বকেয়ার মওকুফ চাইব। মওকুফ করে নতুন প্রক্রিয়ায় সব নিয়ম মেনে কীভাবে সব পরিচালনা করা যায়, সে চেষ্টা করব। বিএফডিসিতে আমরা যেহেতু জায়গা নিয়ে আছি, অবশ্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করব।’
সংকট কোথায়
একসময় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল কাকরাইলনির্ভর। এখন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। দেশে সিনেমা হল কমে যাওয়ায় এ ব্যবসা থেকে অনেকে সরে এসেছেন, আবার অনেক প্রযোজক মারা গেছেন। তাই সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় দিনের পর দিন চিঠি পাঠালেও উত্তর মেলেনি।