শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের রোজা রাখতে দেখে নিজেরাও রোজা রাখার বায়না ধরে। বছরের একটি মাস সারাদিন না খেয়ে ইবাদত-বন্দেগি করার নাম রোজা। রমজান মাস উপলক্ষে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ে। রাতের শেষ ভাগে সাহ্রি খাওয়া, সন্ধ্যায় মিলেমিশে ইফতারে বড়দের সঙ্গে অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অংশ নেয় শিশুরা। দিনে তাদের খেতে বললে রাজি হয় না।
বড়দের মতো তারাও রোজা রাখতে বায়না ধরে, অনেক সময় জেদ করে। শিশুর বয়স একটু বেশি হলে এবং রোজা রেখে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হলে তারাও রোজা রাখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের শিশুর প্রতি একটু বেশি খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, একেবারে ছোট শিশুর জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়।
শিশু রোজা রেখে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হলে তাকে এ ব্যাপারে বুঝিয়ে বলতে হবে। শিশু রোজা রাখতে বায়না ধরলে তাকে সপ্তাহে একটি বা দুটি রাখার উৎসাহ দিতে পারেন। এতে কোনো অসুবিধা না হলে ধীরে ধীরে দিনের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। তবে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি বড়দের তুলনায় বেশি। এ জন্য সারাদিনে তাদের কয়েকবার খাবার খাওয়ানোর কথা বলা হয়।
ইসলাম ধর্মে সাবালকত্ব অর্জনের পর রোজা রাখতে বলা হয়েছে। তবে ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুর রোজা রাখতে সাধারণত কোনো অসুবিধা হয় না। সারাদিন না খেয়ে থাকার সামর্থ্য এই বয়সে এসে তৈরি হয়ে যায়। তার পরও শিশু রোজা রাখতে চাইলে তাকে সাহ্রি, ইফতার, রাতের খাবারে পুষ্টিমানের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
শিশু রোজা রাখবে বলে অনেকে সাহ্রিতে বেশি খাইয়ে দেন। এতে বদহজম হয়ে উল্টো সব বের হয়ে যেতে পারে। সাহ্রিতে শিশুকে ভাত, ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস দিন। সবজি বা অন্য আঁশজাতীয় খাবার বেশি খেতে দিন। খাওয়ার পর ফল ও দুধ অবশ্যই দেবেন। ক্যালসিয়ামের জোগান দেওয়া ছাড়াও দুধের আরেকটি উপকারিতা হলো এটি অনেক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে ।
রোজা চলাকালীন শিশু যেন বাইরে খুব বেশি খেলাধুলা না করে এবং রোদ থেকে দূরে থাকে সেদিকে নজর রাখুন ।
শিশুরা সহজেই পানিশূন্য হয়ে যায়। তাই ইফতার ও সাহ্রির মাঝে সাত থেকে দশ গ্লাস পানি দিন। শিশু দুর্বল হয়ে পড়া কিংবা অতিরিক্ত ছটফট করা, চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি পানিশূন্যতার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
রোজার শেষে ইফতারিতে পানি, শরবত ও পানীয় জাতীয় খাবার বেশি দিন। চা, কফি, জুস ইত্যাদি পানিশূন্যতা বাড়ায়। তাই এগুলো এড়িয়ে যান। ঝাল, ভাজা-পোড়া না দিয়ে চিড়া, পায়েস, ফল ইত্যাদি খেতে দিন। একবারে অনেক খাবার না দিয়ে দুই ধাপে ইফতারি খাওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন অসুস্থতায় আপনার শিশুর রোজা রাখার সক্ষমতা আছে কিনা– বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তা জেনে নিন। রোজা রাখতে গিয়ে যদি শিশুর কোনো অসুবিধা হয় তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। v
লেখক: পুষ্টিবিদ, লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
সদ্য প্রয়াত চিকিৎসককে জয় উৎসর্গ করল বার্সা
বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড রাফিনহা বলেছেন, দলের চিকিৎসক কার্লেস মিনারোর মৃত্যু শোক খেলোয়াড়দের জয়ের জন্য শক্তি জুগিয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ, ২০২৫) চ্যাম্পিয়নস লিগে বেনফিকার বিপক্ষে দারুণ একটা জয় পায় কাতালান ক্লাবটি।
ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনহার জোড়া গোলে বার্সেলোনা ৩-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে বেনফিকার বিপক্ষে। তবে এই ম্যাচে কাতালান ক্লাবটির তরুণ উইঙ্গার লামিল ইয়ামাল একাই বেনফিকার নাভিশ্বাস তুলেছিলেন। এই ১৭ বছর বয়সী উইঙ্গার ছিলেন একটা মাইলফকও। দুই লেগ মিলিয়ে বার্সা ৪-১ গোলের আগ্রিগেটে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায়।
ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১১ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে বেনফিকার ডি বক্সে ঢুকে যান ইয়ামাল। রাফিনহার কেবল ট্যাপ-ইন করে গোলটা করলেন। তবে মিনিট দুয়েক পরই কর্নারে দুর্দান্ত এক হেড করে আর্জেন্টাইন তারকা নিকলাস ওতামেন্দি সমতায় ফেরান বেনফিকাকে।
আরো পড়ুন:
দশ জনের বার্সার বিপক্ষে হারল বেনফিকা
পয়েন্টে শীর্ষে বার্সা, গোলে লেভানডোফস্কি
এরপর একের পর এক আক্রমণে বেনফিকার ডিফেন্সে কাঁপুনি ধরিয়ে দেন ইয়ামাল। বেনফিকার সুইডিশ লেফট ব্যাক স্যামুয়েল দাহল কোনোভাবেই আটকাতে পারছিলেন না ইয়ামালকে। ম্যাচের ২৭ মিনিটে ইয়ামাল আবারও এগিয়ে দেন স্বাগতিকদের। এই গোলের মাধ্যমে দারুণ একটা রেকর্ড গড়ে ফেললেন সদ্যই কৌশর পেরিয়ে আসা এই উইঞগার। চ্যাম্পিয়নস লিগে একই ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করা সর্বকনিষ্ট ফুটবলার এখন ইয়ামাল; যার বয়স মাত্র ১৭ বছর ২৪১ দিন। ম্যাচের ৪২ মিনিটে নিজের জোড়া পূরণ করেন রাফিনহা। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১১ গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
এই জয়ের মাত্র তিন দিন আগে বার্সার চিকিৎসক মিনারো মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ৫৩ বছর বয়সী মিনারোর মৃত্যুর কারণ এখনও অফিসিয়ালি ঘোষণা করা হয়নি। তবে ম্যাচটা চিকিৎসককে উৎসর্গ করতে ভুল করলেন না রাফিনহা, “কার্লেসের মৃত্যুর পর আমরা এই ম্যাচে জয়ের সংকল্প নিয়ে এসেছিলাম।”
ম্যাচে বার্সার পারফরম্যান্সের ব্যাপারে বলতে গিয়ে রাফিনহা আরো যোগ করেন, “বেনফিকা খুব ভালো দল, আমি জানতাম তারা ভালো ট্রানজিশন তৈরি করে, কিন্তু ম্যাচে আমরাই বল নিয়ন্ত্রণ করেছি, এমনকি খেলাটাও। আমরা আরও গোল করতে পারতাম। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পেরেছি বলে আমরা খুশি যে আমরা।”
বার্সেলোনার কোচ হানসি ফ্লিকও এই জয়টি মিনারোর স্মৃতিতে উৎসর্গ করেন, “আমি ম্যাচের আগে বলেছিলাম যে আমরা কার্লেসের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে চাই। কার্লেস সবসময় আমাদের সাথে থাকবে। সে আমাদের দলের একটা অংশ ছিল।”
ঢাকা/নাভিদ