বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. ইউনূস। দুটি প্রত্যাশা তাঁর প্রতি। তিনি যেন দেশকে মেরামত করেন এবং রেসিং ট্র্যাকে তুলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। কারণ, এ দেশের ছাত্র-জনতা জানে, তিনিই এই গাড়িকে মেরামত এবং রেসিং ট্র্যাকে তুলে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন। হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশকে মেরামত করার জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই তিনি করছেন। অনেক সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনগুলোর সুপারিশ এসেছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও হচ্ছে। দেশের মানুষ এখনও আশায় বুক বেঁধে আছে, প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে থাকা এই চমৎকার দেশ এগিয়ে যাবে। দেশটি যখন সচল হয়ে উঠবে তখন আমরা কী করব? আসলে তখনই শুরু হবে আমাদের আসল কাজ। সেটি হচ্ছে রেসের ময়দানে ছুটতে থাকা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
এই পর্যায়ে আমাদের কিছু জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নিজস্ব মূল্যবোধ, জাতিগত আত্মমর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটানোই মূল কাজ। সেসব করতে গেলে আমাদের কিছু অগ্রাধিকার নিরূপণ করতে হবে। সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁর শাসনামলে যে ১৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন; ভালো করে বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, ১৮ দফা ছিল প্রকৃতপক্ষে দুটি মূল লক্ষ্যের বিস্তার। একটি হচ্ছে উৎপাদন বাড়াও, অন্যটি জনসংখ্যা কমাও। পৃথিবীর অনেক দেশ জনসংখ্যা কমাতে পারলেও বাংলাদেশের পক্ষে তা এক দুরূহ কাজ। এ ক্ষেত্রে একে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারাই হবে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা। জিয়ার শাসনামলেই পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রথমে ৩ সন্তান, পরে ২ সন্তানের পরিবার গঠনের তাগিদ দিয়ে রেডিও-টেলিভিশনে সরকারি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। এরশাদের সময়েও জন্মনিয়ন্ত্রণের একটা সরকারি তাগাদা ছিল। এর পরের সরকারগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি, যদিও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বহাল তবিয়তেই আছে।
আমি একসময় ঢাকায় জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলে কাজ করতাম। তখন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি তাদের কাজে সামান্যতম পেশাদারিত্ব ও সততা নেই। গ্রাম-গঞ্জে তারা বিনামূল্যে যেসব জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ করত, সীমান্ত দিয়ে তা ভারতে পাচার হয়ে যেত। কাগজপত্রে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এসব কাজে যাদের নিয়োগ দেওয়া হতো, তাদের কখনোই কর্মস্থলে খুঁজে পাওয়া যেত না। উন্নয়নের রেসিং ট্র্যাকে উঠে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। লাগামছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে তৈরি হয় বহুবিধ সমস্যা।
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসার মতো মৌলিক উপাদান ও উপকরণের বর্ধিত জোগান তো আছেই; তার ওপর দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপে। যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, দুর্নীতি– কোনটার মূলে নেই বর্ধিত জনসংখ্যা সমস্যা? পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ চায়না, যার মোট জনসংখ্যা ১৪২ কোটি, তা সত্ত্বেও গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে কিন্তু সেদেশে লোক বাস করে মাত্র ১৫০ জন। সে দিক থেকে ওরা মোটেও ভয়াবহ ঘনবসতির দেশ হয়ে ওঠেনি। তবুও চীন সরকার ওয়ান চাইল্ড পলিসি গ্রহণ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করে ফেলেছে। এখন চীনের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নেগেটিভে পৌঁছে গেছে। মহাদেশ হিসেবে আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি, ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কিন্তু আফ্রিকা একটি বিরল বসতির মহাদেশ, সেখানে গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোক বাস করে মাত্র ৫১ জন। অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য তাদের আরও মানুষ দরকার।
ইউরোপের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে লোকসংখ্যা বাড়ে শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ হারে। এটি পৃথিবীর গড়হার শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশের চেয়ে যথেষ্ট বেশি হলেও সে দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৩৮ জনের বাস। বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে ৯২তম দেশ হলেও আশ্চর্যের বিষয়, জনসংখ্যার দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম। এখানে গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ১,৩৫০ জন। কী ভয়াবহ অবস্থা! অথচ এখনও প্রতিবছর ১ দশমিক ২০ শতাংশ হারে লোক বেড়েই চলেছে। সে জন্য বাংলাদেশকে চীনের মতো ‘এক সন্তান নীতি’ গ্রহণ করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে উন্নয়ন কতটা দৃশ্যমান হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।
কাজী জহিরুল ইসলাম: কবি ও জাতিসংঘ কর্মকর্তা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনস খ য জনস খ য পর ব র আম দ র সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসিতে আন্দোলন: এখনও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেননি চেয়ারম্যান
গত বৃহস্পতিবারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্মকর্তারা লাগাতার কর্ম বিরতির ঘোষণা দিলেও আজ রোববার বেশিরভাগ কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কর্মকর্তাদের ডেস্কে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক কোন কাজ চলছে না। সকলের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের সব অংশীজনদের সঙ্গে আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা দু'ঘণ্টা বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ জানান, তিনি এখনও কোনো কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আলোচনা করেননি।
গত বুধবার বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে তাদের পদত্যাগ দাবি ও চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চেয়ারম্যানের গানম্যান আশিকুর রহমান বাদী হয়ে নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও রেজাউল করিমসহ ১৬ জন কর্মকর্তাকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আজ কমিশনে কাজে যোগদান করেননি।
সাংবাদিকরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে ওই মামলায় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হবে কিনা, কিংবা এ বিষয়ে কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি জানতে চেয়েছিলেন। চেয়ারম্যান এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
এর আগে কমিশনের সঙ্গে শেয়ারবাজার অংশজনরা জরুরি বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের যৌক্তিক কোনো দাবি বা ক্ষোভ থাকলে তা যথাযথ আইন ও নিয়ম মেনে প্রক্রিয়ায় কমিশন বা সরকারের কাছে জানানোর উপায় রয়েছে। কমিশনের কোনো সিদ্ধান্তে কেউ বিক্ষুব্ধ হলে তা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করারও অধিকার অন্য সবার মত কমিশন কর্মকর্তাদেরও রয়েছে। এ ঘটনায় দেশের শেয়ারবাজারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
গত বুধবার চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে তাদের দাবি জানানো এবং পরবর্তী ঘটনাক্রমগুলো ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত- এমন মন্তব্য করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বলেন, সকল অংশীজন আশা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বিএসইসি হচ্ছে শেয়ারবাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ সংস্থার সুনাম সংবেদনশীলতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার দায় বাজার সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের।
বুধবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কমিশনের নিরীহ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে কোনোরূপ হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বিগত দিনে শেয়ার বাজারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
মমিনুল ইসলাম আরও জানান, উদ্ভূত ঘটনায় শেয়ারবাজারে লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ঘটনায় কেউ যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, তার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের সারভিলেন্স এবং মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে আজ ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে স্বাভাবিক লেনদেন হলেও দর হারিয়েছে ২৭৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। দর বেড়েছে ৫৮টির।
টাকার অংকে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকার শেয়ার ও ফান্ড। তবে প্রধানমূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৪ পয়েন্টে নেমেছে।