গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি দেশ চালাচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা
Published: 11th, March 2025 GMT
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি বর্তমানে দেশ চালাচ্ছে। কারণ এ সরকার হচ্ছে অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত সরকার।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) কার্যালয় পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন তিনি। খবর বাসসের।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেকেই বলেন- এ সরকার দ্রুত নির্বাচন দিয়ে চলে যায় না কেন? কিন্তু যেটা অনেকে ভুলে যান সেটা হচ্ছে- এ সরকার অভ্যুত্থানে অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত সরকার। দেখতে অ্যাপলিটিক্যাল মনে হলেও এখানে টেকনোক্র্যাটসহ আরও অনেক লোক রয়েছেন। কিন্তু মূলত এটা পলিটিক্যাল গভর্মেন্ট। কারণ এটা একটা পলিটিক্যাল ভিক্টোরির ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগকে পলিটিক্যালি পরাজিত করার সুবাদেই আমরা এখানে রয়েছি। গণঅভ্যুত্থানে যারা জয়ী শক্তি, যারা ভিক্টোরিয়াস তারাই আসলে দেশ চালাচ্ছে। এটা খুবই পলিটিক্যালি মোটিভেটেড একটা গভর্মেন্ট এবং পলিটিক্যাল গভর্মেন্ট।
মাহফুজ আলম বলেন, অন্য পলিটিক্যাল গভর্মেন্টের লক্ষ্য থাকে তার দলকে সার্ভ করা। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য হচ্ছে এ সরকারকে কোনো দলকে সার্ভ করতে হচ্ছে না। এ সরকার জনগণকে সার্ভ করছে, আপামর জনগণের ক্ষেত্রে সব মত এবং ধর্মের মানুষের জন্য কাজ করছে। তো ওই নিরিখে আমাদের সংবাদমাধ্যমে সেই জিনিসগুলো যাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, একটা ইনফরমেশন ওয়ারের মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভেতর থেকেও একটা ইনফরমেশন ওয়ার চলছে। আমরা অনেকেই ভাবতে পারি যে আমরা বোধহয় হয়তো একটু রিলাক্সড থাকতে পারি। কিন্তু যারা এখানে পরাজিত হয়েছে তারা কেউ রিলাক্সড না। বিশেষ করে ইনফরমেশনের ক্ষেত্রে তো আরও না। ফলে এখানে বাসসের ভূমিকা হচ্ছে, বাসস একটা নিউজ এজেন্সি। যেহেতু এখান থেকে সোর্স আকারে অন্য অনেক মিডিয়া তথ্য পরিবেশন করে। শুধু দেশে নয় বিদেশেও তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটা বেঞ্চমার্ক ধরা হয় বাসসকে। ফলে এ জায়গায় দায়িত্বশীলতাটা আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাসসকে মানুষ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে ভাবে, অন্যান্য দেশগুলোতেও নিউজ এজেন্সিগুলো সরকারের সঙ্গে রিলেটেড। কিন্তু ওই এজেন্সিগুলো আমরা কিন্তু উদ্ধৃত করি। এক্ষেত্রে আমাদের পত্রিকাগুলো না শুধু, পুরো দুনিয়ার বিভিন্ন পত্রিকা উদ্ধৃত করে। বাসস অন্তত সাউথ এশিয়াতে উদ্ধৃত করার মতো একটা নিউজ এজেন্সি হওয়া উচিত। বাংলাদেশ তো বটেই। ওই ক্ষেত্রে আপনারা কী করতে পারেন, সেটা আপনাদের দায়িত্ব। অন্যদিকে আপনাদের এখানে জনবল বাড়ানো থেকে শুরু করে আরও কী কী টেকনিক্যাল সাপোর্ট লাগবে তার প্রস্তাবগুলো আপনাদের কাছ থেকে আমি চাই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বলতে একটা শব্দ আছে। যদিও এটা এখন একটু নেগেটিভ মিনিং দাঁড়িয়ে গেছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে আপনাদের একটা ভূমিকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনারা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখলে আশা করি, বাংলাদেশ উপকৃত হবে, জনগণ উপকৃত হবে এবং এই অভ্যুত্থানের সরকার উপকৃত হবে।
পরিদর্শনকালে তথ্য উপদেষ্টাকে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, সিনহুয়া ও এএফপিসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সির সঙ্গে আমাদের নিউজ বিনিময় চুক্তি রয়েছে। এর বাইরেও আমরা অন্যান্য নিউজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা করছি। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ফজলুল হক, প্রধান বার্তা সম্পাদক (ইংরেজি) মোর্শেদুর রহমান, প্রধান বার্তা সম্পাদক (বাংলা) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট গভর ম ন ট আপন দ র উপদ ষ ট এ সরক র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে দিল দুর্বৃত্তরা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন ছাত্র আন্দোলন চত্বরে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘পাটাতন’ অঙ্কিত গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংবলিত গ্রাফিতি রাতের কোনো এক সময় মুছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার রাতেও গ্রাফিতিগুলো রঙিন ছিল। রাতের কোনো এক সময় গ্রাফিতির ওপর কালো রঙের স্প্রে দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে।
পাটাতনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোহাইমিন জানান, গণহত্যার ইতিহাসকে যদি ভুলে যাওয়া হয়, তাহলে গণহত্যা বারবার হবে। তাই পাটাতন থেকে জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতিকে গ্রাফিতি আকারে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকেই এ আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়েছিল, বাংলা ব্লকেড এখান থেকেই করা হয়। এখানে এমন ঘৃণ্য কাজ করা কেবল গণহত্যার দোসরদের দ্বারাই সম্ভব। এ ধরনের কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি। সেই সঙ্গে জুলাইয়ের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে একটি ‘স্মৃতি মিনার’ তৈরি করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, ‘গ্রাফিতি মুছে ফেলার মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসররা জুলাইকে মুছতে চায়, ছাত্র আন্দোলন চত্বরকে মুছতে চায়, তারা জানে না– যা কিছু রক্ত দিয়া লেখা হয়, তা মুছা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, পাশাপাশি জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস রাখতে চাই।’
কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর ভাষ্য, গণআন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তারা। এ আন্দোলনে অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মৃতিতে গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য ‘পাটাতন’ সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। ছাত্রদলও এমন কিছু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে যারা এগুলো মুছে দিতে চাইছে, হয়তো তারা ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ কিংবা প্রশাসনে থাকা স্বৈরাচারের দোসর। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, স্বৈরাচার এখনও বিদ্যমান।
কুবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহী বলেন, ‘পাটাতন যে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছিল, সেগুলো যারাই মুছে দিয়েছে, তারা ফ্যাসিস্টের পদলেহী বলেই আমরা মনে করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’
সহকারী প্রক্টর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ জানান, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ ও দাবি এলে হয়তো প্রশাসন আমলে নেবে। গণআন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই এর স্মৃতি সংরক্ষণে দাবি-দাওয়া আমলে নিয়ে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আর জুলাই স্মৃতি মিনার করার ব্যাপারে রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত আবেদন করলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।’