হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ি বনভূমির বুক শীতল করা এক সময়ের সোনাই নদ এখন যেন এক মরা গাঙ। অস্তিত্ব সংকটে পড়া প্রান্তিক জনপদের জীবনসত্তার ধারক হিসেবে পরিচিত নদটির বোবাকান্না শোনার যেন কেউ নেই। সোনাইয়ের দু’কূল এখন ভাগাড়। বুক খুবলে নিচ্ছে ড্রেজার মেশিন। তীর ভেঙে ধসিয়ে দিচ্ছে এক্সক্যাভেটরের ধাতব থাবা।
তীব্র নাব্য সংকটে বিপন্নপ্রায় সোনাই নদের তীরবর্তী মাধবপুর উপজেলাসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এর পারে জায়গায় জায়গায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। এক সময় এই নদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র মাধবপুর বাজার। সেই বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ফেলা বর্জ্যে ভরে গেছে নদের পার।
স্থানীয়রা জানান, বাজারের সব ময়লা ফেলা হয় এই নদের পারে। সেখান থেকে বর্জ্য ও ময়লা পানি গিয়ে মিশছে নদের পানিতে। বিশেষ করে মাধবপুর থানার পূর্ব অংশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। নদের এই অংশ সবচেয়ে বেশি দূষিত। বাজার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসাবাড়ির সব ময়লাই ফেলা হচ্ছে সোনাইয়ের পারজুড়ে। পাকা নালা হয়ে নিয়মিত বর্জ্যমিশ্রিত পানি সরাসরি গিয়ে পড়ছে নদের বুকে। এতে করে পানি দূষণে কালো হয়ে গেছে।
উপজেলার চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দারা জানান, সোনাই নদে দুটো রাবার ড্যাম স্থাপন করা হয়েছে। এই ড্যামসংলগ্ন অংশসহ নদের বিভিন্ন অংশ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে নদের বুকে তীব্রতর হচ্ছে নাব্য সংকট। বদলে যাচ্ছে নদের গতিপথ। শুষ্ক মৌসুমে খরা আর বর্ষায় দু’কূল উপচে প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া সোনাইয়ের পার থেকে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে বেড়েছে ভাঙনপ্রবণতা।
সোনাইয়ের পারে জন্ম নেওয়া আৎকাপারের বাসিন্দা বৃদ্ধ জমির হোসেন জানান, চোখের সামনে সোনাইয়ের যৌবন ক্ষয়ে যেতে দেখেছেন। যে নদ তার দু’কূলে মানুষের বসত আর জীবিকার আধার গড়ে তুলেছে, সেই নদকেই তিলে তিলে মেরে ফেলছে এখানকার মানুষ। দূষণ, দখলে বিপর্যস্ত নদটি এখন খালের মতো হয়ে গেছে। এর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হলে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন। এরইমধ্যে জীবিকার এই মাধ্যম হারিয়ে ফেলেছেন স্থানীয় জেলেরা।
জেলেদের কয়েকজন জানান, এক সময় এই নদের বুকে জাল ফেলে অনেকের জীবিকা নির্বাহ হতো। তবে মাছ শিকার করে ভাত জোটানোর মতো অবস্থা এখন আর নেই। দূষণে বিপর্যস্ত সোনাইয়ের বিষাক্ত পানিতে মাছের দেখা মেলে না। বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বাড়লে স্থানীয় জেলেরা কিছু মাছ শিকার করেন। সেই মাছে থাকে দুর্গন্ধ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বেলার পরিবেশকর্মী ওমাইয়া ফেরদৌস বলেন, মানুষ বিভিন্নভাবে সোনাই নদকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই নদের পানি এখন বিষাক্ত পদার্থে ভরা। গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে প্রাণপ্রকৃতির জন্য খুবই মঙ্গলজনক ছিল সোনাই নদ। সেই নদ নিজেই এখন প্রাণ সংকটে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে নদটি। দখলদার আর বালু ও মাটিখেকোদের কঠোরভাবে দমন করার পাশাপাশি সোনাই নদ খনন ও সংস্কারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দিতে হবে।
মাধবপুর পৌরসভার সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারের ময়লা নদে না ফেলতে বাজারের ব্যবসায়ীসহ নাগরিকদের বলা হয়েছে। নদটিকে রক্ষার্থে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ বিন কাশেম জানান, সোনাই একটি ঐতিহ্যবাহী নদ। মানুষ তিলে তিলে নদটিকে ধ্বংস করে ফেলছে। নদের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন ই নদ ম ধবপ র ই নদ র নদ র প নদ র ব উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সদ্য প্রয়াত চিকিৎসককে জয় উৎসর্গ করল বার্সা
বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড রাফিনহা বলেছেন, দলের চিকিৎসক কার্লেস মিনারোর মৃত্যু শোক খেলোয়াড়দের জয়ের জন্য শক্তি জুগিয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ, ২০২৫) চ্যাম্পিয়নস লিগে বেনফিকার বিপক্ষে দারুণ একটা জয় পায় কাতালান ক্লাবটি।
ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনহার জোড়া গোলে বার্সেলোনা ৩-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে বেনফিকার বিপক্ষে। তবে এই ম্যাচে কাতালান ক্লাবটির তরুণ উইঙ্গার লামিল ইয়ামাল একাই বেনফিকার নাভিশ্বাস তুলেছিলেন। এই ১৭ বছর বয়সী উইঙ্গার ছিলেন একটা মাইলফকও। দুই লেগ মিলিয়ে বার্সা ৪-১ গোলের আগ্রিগেটে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায়।
ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১১ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে বেনফিকার ডি বক্সে ঢুকে যান ইয়ামাল। রাফিনহার কেবল ট্যাপ-ইন করে গোলটা করলেন। তবে মিনিট দুয়েক পরই কর্নারে দুর্দান্ত এক হেড করে আর্জেন্টাইন তারকা নিকলাস ওতামেন্দি সমতায় ফেরান বেনফিকাকে।
আরো পড়ুন:
দশ জনের বার্সার বিপক্ষে হারল বেনফিকা
পয়েন্টে শীর্ষে বার্সা, গোলে লেভানডোফস্কি
এরপর একের পর এক আক্রমণে বেনফিকার ডিফেন্সে কাঁপুনি ধরিয়ে দেন ইয়ামাল। বেনফিকার সুইডিশ লেফট ব্যাক স্যামুয়েল দাহল কোনোভাবেই আটকাতে পারছিলেন না ইয়ামালকে। ম্যাচের ২৭ মিনিটে ইয়ামাল আবারও এগিয়ে দেন স্বাগতিকদের। এই গোলের মাধ্যমে দারুণ একটা রেকর্ড গড়ে ফেললেন সদ্যই কৌশর পেরিয়ে আসা এই উইঞগার। চ্যাম্পিয়নস লিগে একই ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করা সর্বকনিষ্ট ফুটবলার এখন ইয়ামাল; যার বয়স মাত্র ১৭ বছর ২৪১ দিন। ম্যাচের ৪২ মিনিটে নিজের জোড়া পূরণ করেন রাফিনহা। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১১ গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
এই জয়ের মাত্র তিন দিন আগে বার্সার চিকিৎসক মিনারো মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ৫৩ বছর বয়সী মিনারোর মৃত্যুর কারণ এখনও অফিসিয়ালি ঘোষণা করা হয়নি। তবে ম্যাচটা চিকিৎসককে উৎসর্গ করতে ভুল করলেন না রাফিনহা, “কার্লেসের মৃত্যুর পর আমরা এই ম্যাচে জয়ের সংকল্প নিয়ে এসেছিলাম।”
ম্যাচে বার্সার পারফরম্যান্সের ব্যাপারে বলতে গিয়ে রাফিনহা আরো যোগ করেন, “বেনফিকা খুব ভালো দল, আমি জানতাম তারা ভালো ট্রানজিশন তৈরি করে, কিন্তু ম্যাচে আমরাই বল নিয়ন্ত্রণ করেছি, এমনকি খেলাটাও। আমরা আরও গোল করতে পারতাম। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পেরেছি বলে আমরা খুশি যে আমরা।”
বার্সেলোনার কোচ হানসি ফ্লিকও এই জয়টি মিনারোর স্মৃতিতে উৎসর্গ করেন, “আমি ম্যাচের আগে বলেছিলাম যে আমরা কার্লেসের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে চাই। কার্লেস সবসময় আমাদের সাথে থাকবে। সে আমাদের দলের একটা অংশ ছিল।”
ঢাকা/নাভিদ