মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক মো.

আক্তার হোসেন।

দুদক মহাপরিচালক বলেন, আসামির তালিকায় রয়েছেন ১২ রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ মালিক-কর্মকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত পাঁচ গুণ অর্থ গ্রহণ করে ৬৭ হাজার ৩৮০ প্রবাসীর কাছ থেকে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আক্তার হোসেন বলেন, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে ৬ হাজার ২৯ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামাল। মামলায় কাশমিরির পাশাপাশি তাঁর স্বামী মুস্তফা কামালকেও আসামি করা হয়েছে। মেসার্স ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ২ হাজার ৯৯৫ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল। এ মামলায় বাবা ও মেয়ে দুজনই আসামি।

দুদক সূত্র জানায়, স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬৫৭ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১১১ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শেখ আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে। রিক্রুটিং এজেন্সি বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪৫৮ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৯১ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক চৌদ্দগ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা আক্তারকে আসামি করা হয়েছে।

দুদক জানায়, ফাইভএম ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৭ হাজার ১২৪ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১১৯ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় নূর মোহাম্মদ আবদুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথি, মাসুদ উদ্দিনের মেয়ে তাসনিয়া মাসুদকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৮৮ জনের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহা. নূর আলী, তাঁর স্ত্রী সেলিনা আলী, মেয়ে নাবিলা আলী, সাবেক সচিব খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

দুদক আরও জানায়, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৭ হাজার ৭৮৭ জনের কাছ থেকে ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৮ হাজার ৫৯২ প্রবাসীর কাছ থেকে ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিএম ট্রাভেলস লিমিটেডের মাধ্যমে ৮ হাজার ৯৩ প্রবাসীর কাছ থেকে ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমি আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ৪ হাজার ২১৫ জনের কাছ থেকে ৭০ কোটি ৬০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক যুবলীগের নেতা ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত ও তাঁর স্ত্রী নসরুন নেছার বিরুদ্ধ মামলা হয়েছে। এ ছাড়া রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ২ হাজার ৮৪৫ জনের কাছ থেকে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুহাম্মদ মজিবুল হক রুবেল ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনির বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দি ইফতী ওভারসিজের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৯৭ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. রুবেল ও বোরহান উদ্দিন পান্নার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স র ক ছ থ ক হ জ র ৫০০ ট ক জন র ক ছ থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের ডিজিটাইজেশনে ৪ উদ্যোগ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘শর্টকোড’ চালুর সিদ্ধান্ত

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুলিশের ‘হটলাইন’ সেবার পাশাপাশি ‘শর্টকোড’ চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশের ডিজিটাইজেশনে সরকারের চার উদ্যোগের মধ্যে এটি অন্যতম। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পুলিশের সব ধরনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কমান্ড অ্যাপ তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সফটওয়্যার, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড, অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অনলাইনে বা শর্টকোডের মাধ্যমে মামলা বা এফআইআরসহ বহুবিধ আধুনিকায়নের কাজও শুরু হয়েছে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্তমানে যে জাতীয় হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ রয়েছে, তার সঙ্গে আরেকটি ৩ যোগ করে ‘৩৩৩৩’ ডায়াল করে নারী নির্যাতনবিষয়ক যেকোনো অভিযোগ করা যাবে। অথবা ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে সেবা অপশনে গিয়ে ৩ চাপলেও পুলিশের কল সেন্টারে ফরোয়ার্ড হয়ে যাবে। নারীরা যাতে নিঃসংকোচে অভিযোগ জানাতে পারেন, সে লক্ষ্যে কল সেন্টারে শতভাগ নারী সদস্য রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু ‘৯৯৯’ জীবন রক্ষাকারী এসওএস সেবা এবং এর কল সেন্টার ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, তাই আপাতত এই ‘৩৩৩৩’ সেবাকে ‘৯৯৯ ’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। পাশাপাশি ‘৩৩৩৩ ’-এর কল সেন্টারের রিসিভার হিসেবে শতভাগ নারী কর্মী রাখারও চিন্তা সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, যুক্ত হচ্ছে অনলাইন এফআইআর পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে কল সেন্টারে প্রোফাইল ডাউনলোড হওয়ার পর কলটি সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানায় চলে যাবে। বর্তমানে থানার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ফোন নম্বরের ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা আইসিটি বিভাগ থেকে করা হবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, পুলিশের কমান্ড অ্যাপের প্রটোটাইপ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আলোচনা করে অ্যাপ্লিকেশনটির আরও উন্নয়নের কাজ চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তা ছাড়া তথ্য পাচারের ঝুঁকিও খুব বেশি। যেকোনো সদস্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে সব আলোচনা কপি করে নিয়ে যেতে পারেন। এ কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পুশ টু টক’ অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে তথ্য পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা থাকবে।

বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ কমান্ড অ্যাপে কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি স্তরে থাকবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, টিয়ার-১-এ থাকবেন পুলিশের আইজিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। পরের স্তরে থাকবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ জেলা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। আর সবশেষে থাকবেন দেশের সব থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।

তবে থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখনই কমান্ড অ্যাপে সংযুক্ত করা হবে না বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বর্তমানে যেকোনো অভিযোগ তদন্ত বা কোনো ঘটনা ঘটলে সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ও প্রচলিত অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পুলিশ কমান্ড সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা সারা দিন এসব কাজেই ব্যস্ত থাকেন। এ ধরনের যোগাযোগের পুরো বিষয়কে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আদলে একটি ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। এই ট্র্যাকিং সিস্টেমে সব ধরনের মেসেজ আদান-প্রদান ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করা হবে। ফলে যেকোনো অপরাধের ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমেই জানা যাবে। এর ফলে সেবা প্রদান সহজ ও সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের কাজের চাপও কমবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুনামগঞ্জে গরুর ধান খাওয়া নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০
  • সাবেক অর্থমন্ত্রী কামালসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • ডাক বিভাগের সম্পদ দখলমুক্ত করার চেষ্টা করা হবে: ফয়েজ আহমদ
  • ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
  • বিমা খাতে দুর্নীতি নির্মূল করবোই: বিআইএ সভাপতি
  • পুলিশের ডিজিটাইজেশনে ৪ উদ্যোগ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘শর্টকোড’ চালুর সিদ্ধান্ত
  • ঢাবিকে ‘জুলাই বিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল’ গ্রন্থ উপহার
  • সিলেটে আরিফুলের ইফতারে ছিলেন না মুক্তাদীরসহ স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা
  • নেতাকর্মী সামাল দিতে হিমশিম সিলেট বিএনপি