‎নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ও নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুকে বিএনপিতে পুনর্বাসিত করার অপচেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা। ‎মঙ্গলবার (১১ মার্চ) নতুন কোর্ট এলাকায় ফতুল্লা থানা বিএনপির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

‎এসময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আপনারা জানেন যে দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অবর্ণণীয় হামলা-মামলা ও নির্যাতন সহ্য করে দলের নীতি আদর্শ বুকে ধারণ করে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা আন্দোলন সংগ্রমা করে এসেছি। পরিশেষে শত শত প্রাণের বিনিময়ে বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে।

‎তারা আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার অনেক দোসর ও আগস্ট, রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেলেও তাদের অসংখ্য প্রেতাত্মা; এখনও আমাদের সমাজে রয়ে গেছে। বর্তমানে তারাই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ঘৃণ্য চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এবং দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের মধ্যে আবার অনেকেই আছেন 'আওয়ামী লীগ মার্কা বিএনপি।

আপস্টের পর থেকে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ মার্কা কিছু বিএনপি নেতারা নিজেদের বলয় বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা; বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের বিএনপিতে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ও সহসভাপতি হাজী শহীদুল্লাহ।

এতদিন তাদের কর্মকাণ্ডে বিষয়টি পরীলক্ষিত হলেও অতিসম্প্রতি তাদের দুজনের পৃথক বক্তব্যে সে বিষয়টি সন্দিহানভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যা নিশ্চয় আপনারাও লক্ষ্য করেছেন। তারা দুজনেই নৌকা নিয়ে নির্বাচন করা এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল আলম সেন্টুকে বিএনপিতে পুনর্বাসিত করার ঘৃণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে আমরা যারপরনাই মর্মাহত, লজ্জিত, ব্যথিত। আমরা তাদের অমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

বিগত ১৭ বছর আমরা কতটা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বাড়ি-ঘরে থাকতে পারিনি। বনে জঙ্গলে, রাস্তা-ঘাটে এমনকী কবরাস্থানেও আমাদের আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। তারপরও কোনো অবস্থাতেই দলের নীতি ও আদর্শচ্যুত হইনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো প্রকার আপস করিনি।

অথচ দীর্ঘ সময় ধরে নারায়ণগঞ্জে খুনি হাসিনার অন্যতম দোসর, গডফাদার শামীম ওসমানের সঙ্গে আঁতাত করে চলা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গডফাদার শামীম ওসমানের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে, তার পক্ষে ভোটপ্রার্থনাল করে বক্তব্য রাখার অভিযোগে, ফতুল্লা থানা বিএনপির তৎকালিন সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুল আলম সেন্টুকে বাংলাদেশ জাতীতাবাদী দল বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর তিনি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং সদস্য পদগ্রহণ করেন যা খোদ মনিরুল আলম সেন্টু এক বক্তব্যে তা স্বীকারও করেন (ভিডিও বক্তব্য অনলাইনে সংগৃহিত)। এছাড়াও মনিরুল আলম সেন্টু আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও করেন।

এই নির্বাচনে সেন্টুকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার লক্ষ্যে গডফাদার শামীম ওসমানের নির্দেশনায় তারই সেকেন্ড ইন কমান্ড সন্ত্রাসী শাহ্ নিজামের নম পার্কে অন্যান্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ধরে নিয়ে, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে, নির্বাচন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়। এর উৎকৃষ্ট সাক্ষী হচ্ছেন সেসময়কার চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা হয়েছিলেন, তারা।

‎তারা আরও বলেন, মনিরুল আলম সেন্টু আওয়ামী লীগে যোগদান করার পর তিনি আপাদমস্তক একজন আওয়ামী লীগার বনে যান। এর প্রমাণ স্বরূপ তার দলের নেতা শামীম ওসমানের নির্দেশনাক্রমে ২৫শে জুলাই ২০২৪ইং তারিখে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা ছাত্রদের বিপদগামী এবং বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী অধ্যা দিয়ে বক্তব্য রাখেন যা ভিডিও আকারে সংগৃহিত রয়েছে। এতে করেই বুঝা যায় যে তিনি কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী।

এরপরও মনিরুল আলম সেন্টু ৫ আগস্টের পর পুনরায় বিএনপিতে ফেরার জন্য নানা ধরণের লবিং, তদবির করাসহ আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বরাবর লিখিত আবেদনও করেন। সেই আবেদনে তিনি মিথ্যার আশ্রয়ও নিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তিনি নাকি বিএনপির নীতি আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে বিগত ১৭ বছর ধরে দলের প্রতিটি আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে এসেছেন! এমন মিথ্যাচারের মাধ্যমে তিনি চরম নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়েছেন।

কেননা, তার বিগত দিনের কর্মকাণ্ড আপনারা অবগত রয়েছে। কথায় আছে 'এক কান কাটা গেলে রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটে, দুই কান যার কাটা যায় সে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটে।' সেন্টুর দুই কানই কাটা- এ কারণে দলে ফিরতে চেয়ে তার আবেদনে আমরা একটুও অবাক হইনি, তবে আমরা বিস্মিত হয়েছি ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও সহসভাপতি হাজী শহীদুল্লাহর বক্তব্যে।

‎সম্প্রতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও হাজী শহীদুল্লা কুতুবপুরে একটি অনুষ্ঠানে পৃথক বক্তব্যের মাধ্যমে সেন্টুকে বিএনপিতে পুনর্বাসিত করার প্রেক্ষাপট তৈরি করার ঘৃণ চেষ্টা করেছেন যা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। যেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান নিজেই বলে দিয়েছেন, দলত্যাগ করা এবং বহিষ্কৃত কোনো ব্যক্তি ও অন্য কোনো দল থেকে কাউকে দলে ভেড়ানো সম্পূর্ন নিষেধ, সেখানে তারা দুজন, সেই নির্দেশ অমান্য করে অমন বক্তব্য দেওয়ার ধৃষ্টতা কী করে দেখাতে পারে?

আমরা মনে করে গডফাদার শামীম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে তারা সেদিন বক্তব্য রেখেছেন। এবং শামীম ওসমানের পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করার লক্ষ্যে শহিদুল ইসলাম টিটু ও হাজী শহীদুল্লাহ নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ গডফ দ র শ ম ম ওসম ন র ব এনপ র ব এনপ ত আম দ র আগস ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

হত্যা মামলায় আবারও ৩ দিনের রিমান্ডে পলক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর ধানমন্ডি থানার হত্যা মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আবারও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এছাড়াও একই মামলায় চার দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে। তারা হলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির সূর্য সেন হলের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম।

বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের প্রত্যেকের পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল ও আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। 

মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট ধানমন্ডি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী রিয়াজ। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা শাফিয়া বেগম।

গত ১৪ আগস্ট খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা হতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে অনেকগুলো হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দফায় দফায় রিমান্ড ভোগ করেন তিনি।

এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামকে রাজধানীর আদাবর এবং নাঈমকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আটক করে পুলিশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ