আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফগানিস্তানকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান
Published: 11th, March 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের ক্রিকেট দলের সদস্যপদ স্থগিত করার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে (আইসিসি) আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি, নির্বাসিত আফগান নারী ক্রিকেট দলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি আইসিসি সভাপতি জয় শাহকে উদ্দেশ্য করে পাঠানো এক চিঠিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। ৭ মার্চ প্রকাশিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সদস্যপদ স্থগিত করা এবং মানবাধিকার নীতি কার্যকর করা উচিত।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নারীদের খেলাধুলা ও শিক্ষার অধিকার চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা গ্রহণ এবং চাকরির সুযোগ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পরও ভারতে কেন হচ্ছে না বিজয় মিছিল?
ফাইনালে ভারত না থাকায় ক্ষতি ৬৩ কোটি
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, আফগান নারীদের ক্রিকেট খেলার অনুমতি না দিয়ে এবং পুরুষ ক্রিকেট দলকে সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আইসিসি তাদের নিজেদের বৈষম্যবিরোধী নীতির পরিপন্থী আচরণ করেছে। সংস্থাটি আইসিসিকে জাতিসংঘের ব্যবসা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, যতদিন পর্যন্ত আফগান নারীরা পুনরায় খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ না পায়, ততদিন পর্যন্ত দেশটির ক্রিকেট সদস্যপদ স্থগিত রাখা উচিত।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ‘খেলাধুলা একটি মানবাধিকার’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তালেবানদের কারণে আফগান নারী ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ বন্ধ থাকলে এটি অলিম্পিক নীতির লঙ্ঘন হবে।
২০২১ সালে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে চুক্তি করলেও তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠার পর অধিকাংশ খেলোয়াড়ই দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। গত জানুয়ারিতে মেলবোর্নে নির্বাসিত আফগান নারী ক্রিকেটাররা একটি প্রীতি ম্যাচ খেলেন, যা তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি পুনরায় উত্থাপন করেছে।
ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে অস্বীকৃতি জানালেও তারা এখনো আইসিসির টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তবে সেটি কার্যকর হয়নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইসিসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং জানতে চেয়েছে, সংস্থাটি কীভাবে আফগান নারীদের ক্রিকেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ করছে। সংস্থাটি চায়, আইসিসি অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থার মতো মানবাধিকার কাঠামোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুক এবং তালেবান সরকারকে নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে বাধ্য করুক।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন আফগ ন স ত ন র আফগ ন ন র ত আফগ ন গ রহণ আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
আইসিসির ৩৪ ট্রফির কয়টা কার শোকেসে
শুরুটা হয়েছিল ক্যারিবীয়দের দাপটে। গত শতকের সত্তরের দশকে ক্লাইভ লয়েড-ভিভ রিচার্ডসদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্কের নাম। প্রথম দুই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাদের সেই জয়রথ থামিয়েছিল কপিল দেবের ভারত। সেই থেকেই ক্রিকেটের জোয়ার লেগেছিল ভারতে।
ওই প্রজন্মের পর ভারত সেটা ধরেও রাখা পারেনি। বরং অস্ট্রেলিয়ার চ্যাপেল ভাইদের রাজত্ব শুরু হয় তখন; যা কিনা পন্টিং, স্মিথদের হাত ধরে হালের কামিন্সরা ধরে রেখেছেন। মাঝে উত্থান দেখা যায় ইমরান খানের পাকিস্তান আর রানাতুঙ্গাদের শ্রীলঙ্কার। কিন্তু এই শতকের শুরুতে ক্রিকেটের নতুন বিশ্বায়নে আর্থিক ব্যাপারটি ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।
আইসিসি প্রতি বছর একটি করে টুর্নামেন্ট করার সিদ্বান্ত হলে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সঙ্গে যোগ হয় টি২০ বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। হিসাব বলছে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত আইসিসির টুর্নামেন্ট হয়েছে ৩৪টি।
যার মধ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত মাত্র সাতটি, আর তারপর থেকে এখন পর্যন্ত মাঠে গড়িয়েছে ২৭টি। আর আইসিসির এ ট্রফির শোকসে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়া। সব ফরম্যাট মিলিয়ে তারা জিতেছে মোট ১০টি ট্রফি। তাদের ঠিক পেছনেই রয়েছে ভারত। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে তাদের মালিকানা সাতটিতে।
যার মধ্যে গত দেড় বছরে তারা জিতেছে দুটি মযার্দাপূর্ণ ট্রফি। রেকর্ড বলছে মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বে ভারত যেখানে জিতেছিল তিনটি ট্রফি, সেখানে রোহিত শর্মা জিতেছেন দুটি। কিন্তু কপিল দেবের পর ভারতীয় ক্রিকেটের শোকেসে একটা বড় শূন্যতা ছিল। সৈয়দ কিরমানি, রবি শাস্ত্রী, ভেঙ্গসরকার, শ্রীকান্ত, আজহার উদ্দিন, শচীন টেন্ডুলকার– তাদের কারো নেতৃত্বেই ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পারেনি। বদলটা শুরু হয় সৌরভ গাঙ্গুলির হাত ধরে তাঁর সাহসী মানসিকতায়।
২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। সৌরভের অধীনে মোট তিনটি আসরের ফাইনালে ওঠে ভারত। ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর ২০০৩ বিশ্বকাপ জিততে পারেননি সৌরভ গাঙ্গুলি। ধোনির ভারত ফাইনালে উঠেছিল চারবার, যার মধ্যে শুধু ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপ হেরেছিলেন। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দুটি আসরের ফাইনালেই হেরে যায় ভারত।
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের কাছে আর ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিউজিল্যান্ডের কাছে। ফাইনালের এই ‘চোক’ চলেছিল রোহিতের সময়েও। ২০২৩ সালেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যান রোহিত। অবশেষে কপাল খুলেছে তাঁর গতবছরের টি২০ বিশ্বকাপ আর এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে। সে কারণেই আইসিসির ট্রফির শোকেসে দ্বিতীয়তে এখন ভারত।
আইসিসি ট্রফির শোকেস:
অস্ট্রেলিয়া ১০টি : ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫, ২০২৩ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ); ২০২১ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০৬, ২০০৯ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি), ২০২২ (বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ)।
ভারত ৭টি: ১৯৮৩, ২০১১ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০০৭, ২০২৪ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০২, ২০১৩, ২০২৫ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫টি: ১৯৭৫, ১৯৭৯ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০১২, ২০১৬ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০৪ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।
পাকিস্তান ৩টি: ১৯৯২ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০০৯ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০১৭ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।
ইংল্যান্ড ৩টি : ২০১৯ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০১০, ২০২২ (টি২০ বিশ্বকাপ)।
শ্রীলঙ্কা ৩টি : ১৯৯৬ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০১৪ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০২ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।
নিউজিল্যান্ড ২টি : ২০০০ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি), ২০২১ (বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ)।
দক্ষিণ আফ্রিকা ১টি : ১৯৯৮ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।