আশ্রয় দেওয়া নবদম্পতির হাতেই খুন হাবীবুল্লাহর সাবেক উপাধ্যক্ষ
Published: 11th, March 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তাঁর বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়া নবদম্পতিকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বয়সে তরুণ ওই দম্পতি রোজা শুরুর এক দিন আগে সাইফুর রহমানের (৪৯) বাসায় উঠেছিলেন। পালিয়ে নতুন বিয়ে করার পর তাঁরা নীলফামারী থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় এসে টাকাপয়সা হারিয়ে ফেলেন। এই পরিস্থিতিতে তরুণী বাসায় কাজ করবেন এবং তরুণ তাঁর গাড়ি চালাবেন, এমন শর্তে দুজনকে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন সাইফুর রহমান। কিন্তু ১০ দিন না যেতেই গতকাল সোমবার গভীর রাতে খুন হন সাইফুর রহমান।
আজ উত্তরাখানে ওই বাসায় যাওয়ার পর কথা হয় কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, সোমবার ভোররাতে রক্তাক্ত অবস্থায় সাইফুর রহমান বাসার টয়লেটের জানালা কাছে এসে ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তখন সাহ্রি শেষ করে কেউ কেউ নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন। চিৎকার শুনে তাঁরা এগিয়ে যান। পরে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে সাইফুর রহমানকে উদ্ধার করে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মো.
আজ ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের টয়লেটের জানালার বাইরের দিকের দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে রয়েছে।
সাইফুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় গতকাল একটি মামলা করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, উত্তরখান এলাকায় তাঁর ভাই সাইফুর রহমানের স্ত্রীর একটি আড়াই কাঠার প্লট রয়েছে। তিন মাস আগে সেই প্লটের পাশেই ওই ছয়তলা ভবনের চারতলায় ভাড়া বাসায় ওঠেন সাইফুর রহমান।
সাইফুর রহমানের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছেন। তাঁরা রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসায় থাকেন বলে লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই নবদম্পতিকে বাসায় আনার পর তাঁর ভাই প্রতিবেশীদের কাছে তরুণীকে নিজের ‘ভাবি’ এবং তরুণকে ‘ভাতিজা’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই দম্পতি আজকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ জানার চেষ্টা চলছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
যেভাবে নবদম্পতির সঙ্গে পরিচয় সাইফুরের
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাইফুর রহমানের বাসায় আশ্রয় নেওয়া তরুণীর বাড়ি নীলফামারী জেলায়। আর তরুণের বাড়ি ফরিদপুরে। মুঠোফোনে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করেন। রোজা শুরুর আগে তাঁরা ট্রেনে করে নীলফামারী থেকে ঢাকার কমলাপুরে আসেন। কমলাপুরের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে তরুণীর সঙ্গে থাকা ব্যাগটি হারিয়ে যায়। চিৎকার শুনে সেখানে এগিয়ে যান সাইফুর রহমান।
তখন ওই তরুণী সাইফুর রহমানকে বলেন, ব্যাগের ভেতরে তাঁদের টাকাপয়সা ছিল। ঢাকায় তাঁদের থাকার জায়গা নেই। টাকাপয়সা চুরি হয়ে গেছে, এখন কী করবেন বলে কান্না শুরু করেন। এই নবদম্পতির ঢাকায় থাকার জায়গা নেই শুনে সাইফুর রহমান তাঁর ভাড়া বাসায় আশ্রয় দেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাইফুর রহমানের সঙ্গে সোমবার দিবাগত রাতে ঝগড়া হয় এই নবদম্পতির। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ছেলেটি বাসায় থাকা ছুরি দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। পরে ফ্ল্যাটের বাইরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, সাইফুর রহমানের শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একসঙ্গে থাকতে গিয়ে সাইফুর রহমানের প্রতি ক্ষোভ জন্মায় এই নবদম্পতির। সেই ক্ষোভ থেকে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে কী কারণে সাইফুর রহমানের প্রতি তাঁদের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটা স্পষ্ট করে বলেননি তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়: বাংলাদেশ জাসদ
সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ জাসদ। আজ শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় নিজেদের এ অবস্থান তুলে ধরে দলটি।
আজ সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে দলটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বৈঠকের শুরুতে নিজেদের প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ পাঠ করেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন।
মুশতাক হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান উল্লেখ করার ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানও তাৎপর্যপূর্ণ। এই গণ–অভ্যুত্থানকেও সংবিধানে মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও ৭ মার্চের ভাষণ অপসারণ তাঁরা সমর্থন করেন না। দেশের নাম বাংলাতে পরিবর্তনকে তাঁরা অনাবশ্যক বলে মনে করেন।
আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হলেও এ দাবি প্রকৃতপক্ষে জনগণের।আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার পক্ষ থেকে নেওয়া হলেও এ দাবি প্রকৃতপক্ষে জনগণের। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি শেষ করতে চায় কমিশন। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্র সংস্কারের একটি সুনির্দিষ্ট পথ খুঁজে বের করতে পারবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরা