‘কিছু গোষ্ঠী বাংলাদেশ ও ইসলাম ধর্মকে নেতিবাচকভাবে বিশ্বে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে’ উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘সন্ত্রাস ও উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান দেখাতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। সামাজিক ও রাজনৈতিক জায়গা থেকেও আমাদের সেই অবস্থান দেখাতে হবে। ইসলামের যে সহিংস ও সহানুভূতিশীল মূল্যবোধের চর্চা রয়েছে, যা সাম্য, ইনসাফ ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়, সেই চর্চা ও শিক্ষা আমাদের সমাজে নিয়ে আসতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইফতার অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক, ছাত্র-শ্রমিক, পেশাজীবী ও আলেমসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে নিয়ে এনসিপি এই ইফতার পার্টির আয়োজন করে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কারও অবদান কারও থেকে কম নয় বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী ছাত্রজনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের ফসল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী, আলেম, শ্রমিক ও সর্বোপরি সাধারণ জনতার অংশগ্রহণ ও সহায়তায় এই গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অসীম সাহসী ভূমিকা গণ-অভ্যুত্থানকে এক চূড়ান্ত রূপ দিতে সহায়তা করেছিল।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাইয়ের আমাদের নতুন বাংলাদেশের ঐক্য ও মিলনের জায়গা তৈরি হয়েছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের মধ্যে নতুন করে জাগ্রত হয়েছে। আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হতে পারে, নীতিগত বিরোধ হতে পারে, তর্কবিতর্ক হতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক সম্পর্ক, সংলাপ ও মিথস্ক্রিয়ায় যাতে কোনো ছেদ না পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে সম্পূর্ণভাবে বিলোপ বা পরাস্ত করা সম্ভব নয়। আমরা যাতে ভুলে না যাই দেশের বিপদ এখনো কাটেনি। বাংলাদেশবিরোধী শক্তিরা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদ ও অভ্যুত্থানের শক্তিদের মধ্যে অনৈক্য, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মাফিয়া, লুটেরা, ব্যবসায়িক শ্রেণি ও ষড়যন্ত্রকারী নানা বিদেশি শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে। তাই আমরা যাতে এ বিষয়ে সব সময় সচেতন থাকি।’

অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়ন দাবি

সংবিধান সম্পর্কিত বিষয় ছাড়া বাকি আরও যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রমগুলো চলছে (যেমন প্রশাসন, পুলিশ ইত্যাদি) অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাছে দাবি জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এনসিপি বাংলাদেশের শাসনকাঠামো পরিবর্তন চায়; শাসন কাঠামোয় মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি স্থাপন করতে চায়। তাই একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে একটি নতুন রিপাবলিকের (নতুন প্রজাতন্ত্র) কথা বলছি।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। আমরা সেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথাই বারবার বলে যাচ্ছি। ফ্যাসিবাদের যারা দোসর ছিল, তাদের দ্রুত বিচার আমাদের সবারই প্রত্যাশা। সেই দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম আমরা দেখতে চাই।’

বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা দাবি করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের কার্যক্রম চালাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে, তাদের প্রস্তাবিত জুলাই সনদ আমরা দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই। সে বিষয়ে আমরা সবাই সহযোগিতা করব। জুলাই সনদ কার্যক্রমের মাধ্যমে সংস্কারের রূপরেখা আমাদের সামনে স্পষ্ট হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পুরোনো রাজনীতিতে ফেরত যেতে চাই না। আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমল পরিবর্তন চাই। দলীয় লক্ষ্য ও আদর্শের বাইরেও মুজিববাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ও সম্প্রীতির পক্ষে আমরা জাতীয় ঐকমত্য চাই।’

আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন একই সঙ্গে করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান ও নতুন করে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ করতে পারবে দেশ। সরকার যে নির্ধারিত সময় দিয়েছে, সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া সম্ভব।

নাহিদ বলেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটতে হবে। এককভাবে সরকারের পক্ষে এ কাজ হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। তাই রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোকে সে ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলাতন্ত্র ও গণমাধ্যম নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নিতে হবে এবং দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।

ইফতার অনুষ্ঠানে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক বক্তব্য আলাদা হতে পারে। কিন্তু আমরা সবাই ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষ। আমাদের একটাই দাবি হওয়া উচিত। জুলাই অভ্যুত্থানে নারকীয় হত্যা চাপিয়ে দেওয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একমত হয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হতে হবে।’

এনসিপি নতুন সংস্কৃতি ও বন্দোবস্তের রাজনীতি চায় উল্লেখ করে আখতার আরও বলেন, সেখানে আদর্শ ও নীতির প্রতিযোগিতা থাকবে, জনসেবার প্রতিযোগিতা থাকবে; কিন্তু চাঁদাবাজি, মারামারি, টেন্ডারবাজির স্থান হবে না।

অংশ নেন বিভিন্ন দলের নেতা ও বিশিষ্টজনেরা

এনসিপির এই ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন।

রাজনীতিবিদদের মধ্যে আরও ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসানসহ বিভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও প্রতিনিধি।

লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ ও সদস্য মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমানও যোগ দিয়েছিলেন ইফতারে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারাও এনসিপির ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন মতের ছাত্রসংগঠনের নেতাদেরও দেখা গেছে এই আয়োজনে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম র জন ত ক ব আম দ র স ন র জন ত র র জন ত র রহম ন এনস প র ইফত র সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রূপালী ব্যাংকের ঢাকা উত্তর বিভাগীয় ব্যবসায়িক পর্যালোচনা সভা

সরকারি মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক পিএলসি’র ঢাকা উত্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের আওতাধীন শাখা ব্যবস্থাপকদের অংশগ্রহণে ‘ব্যবসায়িক পর্যালোচনা সভা ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার দিলকুশাস্থ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।

বিভাগীয় কার্যালয় ঢাকা উত্তর কর্তৃক আয়োজিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারসুমা আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের ঢাকা উত্তর বিভাগীয় প্রধান ও মহাব্যবস্থাপক শেখ মুনজুর করিম।

এ সময় বিভাগের আওতাধীন ৩ জন জোনাল ম্যানেজার, ৪৭টি শাখা ব্যবস্থাপক এবং ৪টি উপশাখার ইনচার্জ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ