অস্ত্র সমর্পণ করে গাজা ছাড়তে হবে হামাসকে
Published: 11th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজা ছেড়ে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এ কথা বলেছেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের দোহায় চলমান আলোচনায় অংশ নিতে গতকাল সোমবার মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে তিনি মন্তব্য করেন।
ফক্স নিউজকে উইটকফ বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হামাসের সামরিক শাখার অস্তিত্ব থাকবে এবং ইসরায়েলের প্রতি হুমকি তৈরি করবে, তত দিন শান্তি অর্জন সম্ভব নয়। তিনি মূলত ইসরায়েলের দাবির বিষয়টিই পুনর্ব্যক্ত করলেন।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত বলেন, ‘গাজা ছেড়ে যাওয়া ছাড়া তাদের জন্য যৌক্তিক ও যুক্তিসংগত কোনো বিকল্প নেই। যদি তারা ছেড়ে যায়, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর সবকিছু আলোচনার টেবিলে আছে বলি আমি মনে করি।’
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলের আলোচনা চলছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর ও আমেরিকার কূটনীতিকদের মধ্যকার খুবই গোপনীয় বৈঠকের বিষয়ে কিছুই জানা যাচ্ছে না। এর আগে মিসরের কায়রোয় অনুষ্ঠিত বৈঠকে হামাস নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে।
দুই পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি মাঝামাঝি অবস্থানে আসার চেষ্টা করছে মধ্যস্থতাকারীরা। এখন মূল বিষয় হলো, চলমান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ পুরো রমজান মাস পর্যন্ত বাড়ানো হবে, নাকি দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতা হবে। হামাস চায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি শুরু হোক।
কিন্তু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে এখানে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে বাজেট পাস করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী মিত্ররা বাজেট পাস আটকে দিতে পারে। এতে সরকারের পতন হলে ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এ পথে হাটতে রাজি নন নেতানিয়াহু। তাই তিনি চলমান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী।
এদিকে দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আজ মঙ্গলবার ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন নিহত হয়েছেন মধ্য গাজায় নেতজারিম করিডর এলাকায়। এর আগে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় নিহত হন এক নারী। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৪৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হলেন।
এ ছাড়া ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ ও জ্বালানির প্রবেশ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তীব্র শীতের মধ্যে অন্ধকারের মধ্যে তাদের থাকতে হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বেকারি। অন্যান্য খাদ্যপণ্যের সংকটও দেখা দিয়েছে। পানি শোধনাগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ
ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।
বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।