মানুষের ভালোর জন্য যেকোনো বিষয়ে হতে পারে আলোচনা: তারেক রহমান
Published: 11th, March 2025 GMT
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষ ও দেশের ভালোর জন্য যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছি ভালো একটা পরিবর্তনের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ও কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। এখন নানাজন বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলছেন। আমরা আড়াই বছর আগে প্রথম এটি উপস্থাপন করেছি। তারপরও এটিকে স্বাগত জানাই।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএসএসএফ কনভেনশন হলে (শুটিং ক্লাব) জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একজন আরেকজনের বাস্তবধর্মী সমালোচনা অবশ্যই করব। সেটি করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি যাতে উদ্ভব না হয়, যেখানে দেশ ও জনগণের ইস্যুগুলো চিহ্নিত করতে ভুলে যাব। এটি হলে এদেশের সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতে পারে।’
তারেক রহমান বলেন, শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, সাংবিধানিক ব্যবস্থা এবং ভোটের ব্যবস্থা যেমন আলোচনা হওয়া উচিত, তারচেয়ে বেশি কিংবা সমান আলোচনা হওয়া উচিত– কীভাবে মানুষের সমস্যার সমাধান করবেন। এছাড়া আমরা রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সামনে পরিবেশ সংস্কারের ব্যাপারে কী সংস্কার উপস্থাপন করতে পারি না?
তারেক রহমান বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র। সেটি হচ্ছে একটি মানবিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের কথা বলার অধিকার থাকবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সংস্কার। আমরা সব রাজনৈতিক দল বিগত ১৫ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এই আন্দোলন করেছি ডাকাতি করে নেওয়া জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। সেটিতে আমরা সফল হয়েছি।
এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বামপন্থার পুনর্জাগরণ হচ্ছে না কেন
বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল এক চরম বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল অনেকের। বাস্তবে তা সফল হয়নি। বরং ১৯৭৫-এর পর বাংলাদেশ ক্রমে এক সুবিধাবাদী পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়, যেখানে বামপন্থা দুর্বল হতে থাকে।
সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন এখনও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বর্তমান বৈষম্য, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ প্রমাণ করে– একটি শক্তিশালী বামপন্থি আন্দোলন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থার উত্থান ঘটেছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। ১৯৮০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্রের পতন এবং পুঁজিবাদের আগ্রাসনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। সামরিক শাসন ও বহুজাতিক পুঁজিনির্ভর নীতি এ দেশে ডানপন্থার জন্য উর্বর ভূমি তৈরি করেছে। বামের বিরুদ্ধে ডানপন্থার যে দমন-পীড়ন, তা শুধু প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক দমনেই সীমাবদ্ধ নয়। ক্ষমতা শুধু দমনমূলক নয়; এটি প্রলুব্ধও করে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিকৃত করে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করা হয়, যেখানে মানুষ শোষণকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়।
ডানপন্থি শক্তিগুলো নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রাজনৈতিক পুনর্লিখন, অর্থনৈতিক উদারীকরণ, ধর্মীয় রাজনৈতিক শক্তির ব্যবহার, ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের চর্চা।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ অত্যন্ত জরুরি। তবে একে ঐতিহ্যগত মার্ক্সবাদী কাঠামোর বাইরে এনে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক পরিসরেও বামপন্থার পুনর্গঠন করতে হবে। নতুন শ্রেণিগত বিশ্লেষণ এবং শ্রমিক শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জটিল বাস্তবতা বুঝে নতুন শ্রেণিগত কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনীতিতে বর্তমানে অনেক দলই সক্রিয়। সক্রিয় বললে হয়তো একটু বাড়িয়ে বলা হয়, বাস্তবে এরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। তাদের মধ্যে একসময় সিপিবি (বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি) ছিল উল্লেখযোগ্য শক্তি। সেই শক্তি অনেক খর্ব হয়েছে বটে, এখনও এটি দেশের প্রধান বাম দল। মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন ও আদর্শ নিয়ে সিপিবি যে বিপ্লবী রাজনীতির পথ অনুসরণ করেছিল, তা ছিল বাংলাদেশের বামপন্থার মূলধারার প্রতিচ্ছবি। তবে সাম্প্রতিক কালে সিপিবির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে।
সিপিবি বারবার নিজেদের নিরপেক্ষ বা তৃতীয় শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করলেও কার্যত কোনো বাস্তবধর্মী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সিপিবি আদর্শগত লড়াইয়ের চেয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত হতে বেশি আগ্রহী। এর ফলে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জনগণের প্রকৃত সমস্যাগুলো নিয়ে সিপিবি বরাবরই সীমিত আন্দোলন করেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, শ্রমিক আন্দোলন এবং গ্রামীণ শোষণের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি তারা গড়ে তুলতে পারেনি। তাদের রাজনীতি এক ধরনের আভিজাত্যপূর্ণ বামপন্থার দিকে ঝুঁকে গেছে, যেখানে জনগণের বাস্তব অভিজ্ঞতার চেয়ে মতাদর্শিক বিতর্কই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সত্যিকার পরিবর্তন আনার জন্য সংগ্রামের বদলে বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে আপস করে চলেছে।
সিপিবির এই রাজনীতি এক ধরনের ‘ধোঁয়াশা’ সৃষ্টি করেছে। যে কারণে তারা নিজেদের বামপন্থি দাবি করলেও বাস্তবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। তাদের এই ধোঁয়াশামূলক অবস্থান বামপন্থার প্রতি জনগণের আস্থাকে ক্ষীণ করেছে এবং প্রকৃত বামপন্থি আন্দোলনের পথ আরও জটিল করে তুলেছে।
অভ্যন্তরীণ নানা সংকটে সিপিবির যতটুকু শক্তি আছে, তাও কাজে লাগাতে পারছে না। এ সমস্যা বাংলাদেশের গোটা বামপন্থি আন্দোলনকেই গ্রাস করেছে। শোষিত ও নিপীড়িত শ্রেণি-গোষ্ঠীকে একটি সাধারণ (কমন) ছাতার নিচে এনে আন্দোলন করার পরিবর্তে তারা অনেক সময় শাসক শ্রেণির সঙ্গে সমন্বয়ের রাজনীতি করে। সেটি নিঃসন্দেহে বামপন্থার মূল আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ক্ষমতা শুধু দমনমূলক নয়, বরং এটি এমনভাবে কাজ করে, যাতে মানুষ স্বেচ্ছায় শাসিত হতে চায়। বাংলাদেশে বামপন্থার পতন এবং ডানপন্থার উত্থান মূলত এ ধরনের ক্ষমতা বিন্যাসের ফলাফল। তবে ইতিহাস সাক্ষী– পরিবর্তন অনিবার্য। বাংলাদেশে বামপন্থার প্রয়োজনীয়তা এখনও অটুট এবং নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বামপন্থার উত্তরণই পারে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তুলতে। এখন প্রয়োজন সত্যিকার বামপন্থার পুনর্জাগরণ, যেখানে জনগণের প্রকৃত সমস্যার ওপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠবে। এই পুনর্গঠনের জন্য নতুন বামপন্থি নেতৃত্বের উত্থান জরুরি, যারা ক্ষমতার জটিলতাগুলো বুঝে লড়াই করবে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।
রিমেল সরকার: সংগীতশিল্পী