ভর্তির ৭ মাসেও পরিচয়পত্র পাননি চবি শিক্ষার্থীরা
Published: 11th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র হাতে পাননি প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ৭ মাসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয়পত্র হাতে পাননি তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্য সেবা, গ্রন্থাগার থেকে বই সংগ্রহ ও নিজের পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। অনেক সময় বিভিন্ন দপ্তর ও জরুরি কাজেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, আইডি কার্ড পাওয়ার আগ পর্যন্ত ভর্তি রশিদ (ব্যাংক স্লিপ) সঙ্গে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ছাত্রশিবির অতিমাত্রায় পলিটিক্স পছন্দ করে না: নুরুল ইসলাম
ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী কণ্ঠ
এ বিষয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো.
তিনি বলেন, “আইডি কার্ড না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, হোটেল, ক্যাফেটেরিয়া ও ল্যাব ব্যবহারে অসুবিধা, ডিসকাউন্ট সুবিধা না পাওয়া এবং প্রশাসনিক কাজে জটিলতাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “সেদিন আমরা কয়েকজন বন্ধু বড়দীঘিরপাড় থেকে ভাটিয়ারীর দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্টে আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘তোমরা হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যাচ্ছো, তোমাদের পরিচয় কি?’ তখন আমরা ব্যাংক স্লিপ দেখালে বলা হয়, ‘এটা হবে না, আমরা চাই আইডি কার্ড।”
তিনি বলেন, “এছাড়াও নানা সমস্যা রয়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের পরিচয় বহনকারী আইডি কার্ড দ্রুত প্রদান করা উচিত।”
ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসনাত হাসান রাহাত বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ল্যাব, লাইব্রেরি, হাসপাতাল, ট্রান্সপোর্ট ও ব্যাংকিং সেবাসহ বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণে প্রয়োজনীয়। অনেক নবীন শিক্ষার্থী এখনো কার্ড না পাওয়ায় এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সেক্টর গতিশীল থাকলেও প্রতি বছর আইডি কার্ড প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা লক্ষণীয়। কর্তৃপক্ষের উচিত ভর্তির পর দ্রুততম সময়ে নবীন শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রদান করা।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রবিউল হোসেন চৌধুরী বলেন, “২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রস্তুতের কাজ চলছে। আগামী ঈদের পরই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবেন।”
তিনি বলেন, “করোনার সময় থেকে আইডি কার্ড প্রদানে বিলম্ব হচ্ছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আইডি কার্ড গত মাসে দেওয়া হয়েছে। সামনে থেকে ভর্তির দুই-তিন মাসের মধ্যেই আইডি কার্ড প্রদান করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “৭ মাসেও শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড পায়নি শুনে আমি খুবই দুঃখ প্রকাশ করছি। এটা তো শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমি বিষয়টি জরুরিভাবে দেখছি।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষ বর ষ র র আইড
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ বাড়ছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টে শেয়ারদর, চার দিনে বাড়ল ৬৩ টাকা
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতে চমক দেখিয়েছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। মাত্র চার কার্যদিবসে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬৩ টাকা বা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তাতে গত ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আগে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২১৪ টাকা। ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় গত রোববার। ওই দিন বাজারে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম সাড়ে তিন টাকা কমেছিল। এর পরের চার দিন মূল্যবৃদ্ধিতে কোম্পানিটি বড় চমক দেখায়। চার দিনেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৩ টাকা। তাতেই সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নেয়। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৭৪ টাকায়।
হঠাৎ গত সপ্তাহে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামনে বছর শেষের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে কোম্পানিটি। গত ডিসেম্বরে কোম্পানিটির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। শেয়ারবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, বিমা খাতের কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে হিসাব বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিন বা চার মাসের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করতে হয়। সাধারণত পরিচালনা পর্ষদের যে সভায় বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়, সেই সভা থেকেই বছর শেষে শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী, হাইডেলবার্গ সিমেন্টকে চলতি মাসের মধ্যে ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে লভ্যাংশের ঘোষণা দিতে হবে। এই ঘোষণা সামনে রেখে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি হঠাৎ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
* চলতি মাসের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে কোম্পানিটিকে।* সিমেন্ট খাতের ৭ কোম্পানির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার।
* ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ, ২৭৪ টাকা।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ স্ক্যান ও রুবি ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বাজারজাত করে থাকে। শেয়ারবাজারে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার। ঢাকার শেয়ারবাজারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দেশীয় মালিকানাধীন আর বাকি দুটি বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি। সিমেন্ট খাতের দেশীয় কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর গণনা হয় দেশের অর্থবছরের সঙ্গে সংগতি রেখে, অর্থাৎ জুলাই-জুনকেন্দ্রিক। আর বিদেশি কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর মূলত ক্যালেন্ডার বছর বা জানুয়ারি-ডিসেম্বরকেন্দ্রিক।
গত বছরের প্রথম ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৪১ কোটি টাকার মুনাফা করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি টাকা কম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৫১ কোটি টাকা। গত বছর কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ বিক্রি বা ব্যবসা কমে যাওয়া। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটি ব্যবসা কমেছে ২৭১ কোটি টাকার। একদিকে ব্যবসা কমেছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই কারণে মুনাফা কমে গেছে।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক বা ৯ মাসের মধ্যে শেষ ৩ মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ওই প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এক প্রান্তিকে লোকসানের পরও আগের দুই প্রান্তিকের মুনাফার কারণে এটি শেষ পর্যন্ত মুনাফার ধারাতেই ছিল।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি আড়াই টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর এই লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল নগদ ১০ শতাংশ। এখন শেয়ারধারীরা অপেক্ষায় আছেন গত বছরের লভ্যাংশের জন্য। যে লভ্যাংশ সামনে রেখে কোম্পানির শেয়ারের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে গত সপ্তাহে।
হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি মাঝারি মূলধনের একটি কোম্পানি। কোম্পানিটির মূলধন ৫৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে এটির শেয়ারের প্রায় ৬১ শতাংশেরই মালিকানায় ছিলেন উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। বাকি ৩৯ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৬ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারধারণ-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারধারীর সংখ্যা ছিল মোট ১০ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৯১৭ জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, যাঁদের হাতে কোম্পানিটির ৫ হাজারের কম শেয়ার রয়েছে। এসব বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ৬ শতাংশ ধারণ করেন। আর ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ২২৬ জন। ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ শেয়ার রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩৮ জন। আর ২ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে ৮ জন বিনিয়োগকারীর হাতে। ৫ লাখ থেকে ১ কোটি শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ৬ জন। এক কোটির বেশি শেয়ার রয়েছে শুধু কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে।