কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে ক্ষোভ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘একটি বিশেষ দল সম্পর্কে কোনো সাংবাদিক, কোনো সংবাদপত্র কিছুই লিখছেন না। কিছুই লিখছেন না আপনারা। শুধু লিখছেন বিএনপি সম্পর্কে, যতটুকু পারেন ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাড়িয়ে লিখছেন।’ তিনি বলেন, ‘আরও অনেক কিছু আছে তো। পর্দার অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটছে, আপনারা কিছুই লিখছেন না।’

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশানের একটি হোটেলে ‘গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, ফটো সাংবাদিক ও ভিডিও সাংবাদিকদের সম্মানে’ আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মির্জা আব্বাস। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে বিএনপির একটি সেল এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে যাঁরা গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পাশে থাকতে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে একটি সেল ২০২৪ সালের মার্চ মাসে গঠন করা হয়েছিল। ওই বছরের ২২ মার্চ বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাজধানীর নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সেল করা হয়েছে।

আজকের ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কোন ব্যবসায়ীর হেলিকপ্টারে কে বেড়াতে যায়, কোন ব্যবসায়ী কত টাকা দেয়, কোন ব্যবসায়ী আজকে আমাদের অনেক রাজনৈতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে? যাদের নামে হত্যা মামলা থাকার পরও একটি দুটি নয়, এই ঘটনার পরও অনেক ঘটনা রয়ে গেছে। জুলাই– আগস্ট ছাড়াও হত্যার ঘটনায় অনেক ব্যবসায়ী জড়িত আছে, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে কিছুই লিখছেন না।’ এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, জাতির ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে কেন এসব ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিবেদন হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তোলেন মির্জা আব্বাস।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের সম্মেলন নিয়েও ইফতার অনুষ্ঠানে কথা বলেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে কারা কারা ছিল, কারা কারা গ্রেপ্তার হয়েছে, কারা কারা গ্রেপ্তার হয়নি, কেন হয়নি, এটা আপনাদের তুলে ধরা দরকার। কারণ, এই সমস্ত লোক যারা অবৈধভাবে গত ১৭ বছরে টাকা কামিয়েছে, আগামী ১৭ বছর এই টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ ধ্বংস করার পেছনে। সুতরাং আপনারা দয়া করে ওই সমস্ত ব্যক্তিদের তুলে ধরেন। সাবধান করেন।’

ওই সব ব্যবসায়ীকে নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ওরা মনে করে টাকা হলেই বোধ হয় সবাইকে পকেটে নেওয়া যায়। কিন্তু এটা ওরা জানে না টাকা হলে সব সাংবাদিকদের কেনা যায় না। ওই লোকগুলো যদি অবৈধ টাকা নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে বাংলাদেশের কোনো মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবে না। এ দেশের মানুষকে, গণতন্ত্রকে তারা রুদ্ধ করে ফেলবে।’

সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, সচিবালয়েও খোঁজ নেন, আওয়ামী লীগের দোসররা কীভাবে সেখানে বসে আছে। আওয়ামী লীগের দোসররা সচিবালয়, থানা, ইউনিয়ন পরিষদ সমস্ত জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। সুতরাং ওদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসররা আজকে কে কোথায় অবস্থান করছে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন কোন রাজনৈতিক দলের কার কী অবস্থান, কোথায় অবস্থান, এটা আজকে আপনাদের পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।’

ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন এই সরকার আজকে পর্যন্ত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট যে নামেই বলেন না কেন, সেই আইন আজকে পর্যন্ত কেন বাতিল হলো না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ব্যতিরেকে কোনো দিন গণতন্ত্র হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইফতার অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানী) প্রমুখ। সাংবাদিক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা অংশ নেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় অবস থ ন ব যবস য় আওয় ম আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। 

আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন:

নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি

বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান

মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।

সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।” 

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ