ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, সেরা বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন। 

মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি' শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আমাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ, দেশের জনগণ ও চীনা জনগণের জন্য। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বা কোন দেশের অভ্যন্তরে যে পরিবর্তনই হোক না কেন, আমাদের নীতি স্পষ্ট। চীন অংশীদার হিসেবেই থাকবে। চীন সবসময় একটি দেশ ও তার জনগণের সঙ্গে থাকে, কোনো নির্দিষ্ট সরকারের সঙ্গে নয়।

আগামী ২৬-২৯ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীন বিশ্বের সব দেশের প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানায় এবং এ মুহূর্তে এ সফরের অগ্রাধিকার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের কোনো সার্বজনীন রূপ নেই এবং এটি দেশ থেকে দেশে ভিন্ন হতে পারে। কোনো দেশের জনগণ এটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ইতিবাচক দেখছেন ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন। আর নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন প্রায় ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপে উত্তরদাতাদের ৬১ শতাংশ মত দিয়েছেন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার পর অলটারনেটিভস ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শিরোনামে শীর্ষক ওই জরিপ প্রকাশ করেছে।

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তি এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে জরিপটি চালায় সেন্টার ফল অলটারনেটিভস। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেশের ৩২টি জেলায় ৫ হাজার ৩৫৫ জনের মধ্যে অনলাইন-অফলাইনে এ জরিপ চালানো হয়। এঁদের মধ্যে ২ হাজার ৬৮১ জন অফলাইনে এবং ২ হাজার ৬৭৪ জন অনলাইনে জরিপে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি নিয়ে এ নিয়ে তৃতীয়বার এ ধরনের জরিপ চালানো হলো।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সেন্টার পর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোন পথে এগোচ্ছে জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক বলে মত দেন। আর ভালো কিংবা মন্দ কোনোটাই নয় এমন মত দেন ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ–চীন সম্পর্কের বিষয়ে ভালো মত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের ভালো সম্পর্কের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ৭৯, ৭৪ ও ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে কীভাবে দেখে জানতে চাওয়া হয় উত্তরদাতাদের কাছে। এ বিষয়ে যথাক্রমে চীনের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ নেতিবাচক উত্তর দিয়েছেন।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করেছে, যা ওই সম্পর্কের বিষয়ে ঐকমত্যের ব্যাপকতার প্রতিফলন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাদের আস্থার বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদ দেখিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্বিতীয়ত জনগণের সঙ্গে জনগণের আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশি জনগণের মতামত এবং পরামর্শের প্রতি তাদের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ইয়াও ওয়েন বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের যে ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য চীনে ব্যক্তিগতভাবে যেতে বা তাঁদের সন্তানদের পাঠাতে ইচ্ছুক। এই হার ২০২২ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। প্রায় ২৯ শতাংশ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, জরিপের ফলাফল থেকে এই আভাস রয়েছে যে বাংলাদেশি জনগণ চীনে ভ্রমণ, পড়াশোনা এবং ব্যবসা করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংকট মেটানোর লক্ষ্যে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আদি নিবাসে ফিরতে পারে, সেই জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।’

চীনের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেরা বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মহসিন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আমেনা মোহসিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ইতিবাচক দেখছেন ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা
  • মানুষের ভালোর জন্য যেকোনো বিষয়ে হতে পারে আলোচনা: তারেক রহমান
  • সিকদার গ্রুপের ১৪ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  • সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক, তাঁর মা মনোয়ারা সিকদারসহ পরিবারের ১৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ছাত্র ফ্রন্টের
  • ট্যাগিং রাজনীতি যে সর্বনাশ ডেকে আনবে
  • পুলিশের জবাবদিহির দাবিতে চট্টগ্রামে থানা ঘেরাও
  • সিকদার গ্রুপের ৪২টি বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ
  • মাগুরার ঘটনা গোটা মানবতার ওপর ছুরিকাঘাত: জামায়াতের আমির