ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে বেইজিং বেশ এগিয়ে। অন্যদিকে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর অলটারনেটিভসের ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

ওই জনমত জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতার ৬১ শতাংশ মত দিয়েছেন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হচ্ছে। ঢাকা বেইজিংয়ের সম্পর্ক বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মনে করেন। ঢাকা নয়াদিল্লির সম্পর্কের বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন মাত্র ১১ শতাংশ উত্তরদাতা। 

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ওই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তি এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দেশের ৩২ জেলায় অনলাইন-অফলাইনে জরিপটি চালানো হয়। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৬৮১ জন অফলাইনে এবং দুই হাজার ৬৭৪ জন অনলাইনে জরিপে অংশ নেন। বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি নিয়ে এ নিয়ে তৃতীয়বার এ ধরনের জরিপ চালানো হলো।

জরিপের ফল উপস্থাপন করেন সেন্টার পর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মহসিন। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোন পথে এগোচ্ছে জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মত দেন। ভালো অথবা মন্দ কোনোটাই নয় এমন মত দেন ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ চীন সম্পর্কের বিষয়ে ভালো মত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের ভালো সম্পর্কের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮ শতাংশ। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ৭৯, ৭৪ ও ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে কীভাবে দেখে, তা জানতে চাওয়া হয় উত্তরদাতাদের কাছে। এ বিষয়ে যথাক্রমে চীনের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মত দিয়েছেন। জরিপের পাঁচটি দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে নেতিবাচক মত দিয়েছেন উত্তরদাতারা, যা ৫৯ শতাংশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইয়াও ওয়েন বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীর বেশির ভাগ উত্তরদাতা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করেছেন, যা সম্পর্কের বিষয়ে ঐকমত্যের ব্যাপকতার প্রতিফলন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাদের আস্থার বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদ দেখিয়েছেন। 

ইয়াও ওয়েন বলেন, এটি আমাদের জন্য আনন্দের যে, ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে ব্যক্তিগতভাবে যেতে বা তাদের সন্তানদের পাঠাতে ইচ্ছুক। এই হার ২০২২ সালের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। প্রায় ২৯ শতাংশ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা ২০২২ সালের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, জরিপের ফল থেকে এই আভাস মিলেছে, বাংলাদেশিরা চীনে ভ্রমণ, পড়াশোনা ও ব্যবসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংকট মেটানোর লক্ষ্যে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আদিনিবাসে ফিরতে পারেন সেই জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।

চীনের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেরা বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত দ য় ছ ন র জন ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নাম চায় ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের বর্তমান নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে নাগরিকতন্ত্র ও জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ চালুর প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তবে নতুন এ প্রস্তাবনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ তথা ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ নামের প্রস্তাব দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে সংস্কার প্রস্তাব তুলে দেয় ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে দলটি ১৩০টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টি দ্বিমত এবং ১১টিতে আংশিকভাবে একমত। এ ছাড়া দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, রাষ্ট্রের নাম হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’। কারণ, এই নামের মধ্যেই জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।

আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সুশাসন, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা চারটি মৌলিক প্রস্তাব পেশ করেছি, যা বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। আর এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। প্রস্তাবগুলো হলো আত্মশুদ্ধি, জবাবদিহি, শরিয়াহ আইন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন।’

বিদ্যমান আইনে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চুরি, ধর্ষণসহ অন্যায়-অনাচার বন্ধ করা যায়নি জানিয়ে শরিয়াহ আইন করার দাবি জানান আশরাফ আলী আকন। সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে বলে কমিশন মনে করে না। কমিশনের পক্ষ থেকে মতামতগুলো পর্যালোচনা করা হবে বলেন তিনি।

আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিনই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। আগামী ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করা হবে বলেন তিনি। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার কথা জানান।

ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ সেখ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।

এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলকে পছন্দ করে না যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষ
  • দেশের নাম ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ চায় ইসলামী আন্দোলন
  • সংস্কার প্রস্তাবনার ওপর মতামত জানাল ইসলামী আন্দোলন
  • ‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নাম চায় ইসলামী আন্দোলন
  • যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষ ইসরায়েলকে পছন্দ করেন না: জরিপ
  • ১৯ বার বৈঠকের পর জোট গঠনে ঐকমত্য
  • ঐকমত্য কমিশনে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদের মতামত
  • বাংলাদেশ বিনিয়োগ আকর্ষণে কেন পিছিয়ে
  • সংস্কার নিয়ে মতামত দিল আরও দুই দল
  • এনসিপির সঙ্গে হেফাজতের বৈঠক, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐকমত্য