তৃতীয় দিনে বেক্সিমকোর আরও ১১ হাজার শ্রমিক পাওনা বুঝে পেলেন
Published: 11th, March 2025 GMT
গাজীপুরে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৪টি কারখানার আরও ১১ হাজার ২৯৩ শ্রমিককে পাওনা বাবদ ৫১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে পাওনা পরিশোধের তৃতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবার এ বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়। এ নিয়ে গত তিন দিনে ২৭ হাজার ৬৮০ জন শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে।
বেক্সিমকোর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান খালিদ শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বেক্সিমকো শিল্পপার্কে গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নারী-পুরুষ শ্রমিকেরা দলে দলে কারখানায় প্রবেশ করে তাঁদের পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিচ্ছেন। এরপর হিসাব শাখায় গিয়ে তাঁদের বকেয়া পাওনার হিসাব করছেন। পরে সেই হিসাব অনুযায়ী টাকা তাঁদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হচ্ছে। বকেয়া পাওনা পেয়ে অনেক শ্রমিক খুশি। আবার অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা যে পাওনা পাওয়ার কথা, সে অনুযায়ী পাচ্ছেন না। বেক্সিমকোর বন্ধ এক কারখানার অপারেটর হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি সোমবার ব্যাংক হিসাবে টাকা পেয়েছেন। তাঁর পাওয়ার কথা ছিল ৮২ হাজার টাকা; কিন্তু পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা।
বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিল্পপার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিকসংখ্যা ৩১ হাজার ৬৭৯। আর কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৬৫। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ৬ মার্চ বেক্সিমকোর বন্ধ ঘোষিত এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে সরকার। ঋণ হিসেবে কোম্পানিটিকে এই অর্থ দিয়েছে সরকার। ওই দিন বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কায়সার চৌধুরীর কাছে ওই চেক হস্তান্তর করেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ওই সময় জানানো হয়, ৯ মার্চ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। সেই অনুযায়ী গত রোববার পাওনা পরিশোধের প্রথম দিনে ২৪৫ জন শ্রমিককে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, শ্রমিকদের পাওনা বাবদ দেওয়া অর্থ নগদে পরিশোধ করা হয়নি। পাওনার পুরো অর্থ মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা এমএফএস হিসাবে বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বেক্সিমকো তার শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল ১১ হাজার ২৯৩ জন শ্রমিকের পাওনার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা করেছে। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে মোট ২৭ হাজার ৬৮০ জন শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান। ১৩ আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠানটির ঋণপত্র বা এলসি-সুবিধাও বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো। কাঁচামালের সংকটে কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এমন পটভূমিতে সরকারের পক্ষ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সিদ্ধান্তে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া অর্থে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ধ ঘ ষ ক র বন ধ রহম ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দাপট দেখাতেন মেজর পরিচয়ে, সেনাবাহিনীর পোশাক-ব্যাজসহ খেলেন ধরা
মেজর পরিচয় দিয়ে দাপট দেখাতেন। সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি সেনা ক্যাম্পে জানান। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ওই ব্যক্তিকে আটক করার পর জানা গেল তিনি মেজর নন, সেনাবাহিনী থেকে পলাতক সৈনিক।
বাসিদুর রহমান (৩৮) নামের ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী দাবি করা হামিদা বেগমকে (৪০) আজ সোমবার সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি দল জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের হরিপুর গ্রাম থেকে আটক করে। বাসিদুর কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আঞ্জাপুর গ্রামের সাইমুল হকের ছেলে। হামিদা বেগম হরিহরপুর গ্রামের প্রয়াত মখলিছ মিয়ার মেয়ে। বাসিদুরের দাবি, হামিদা বেগম তাঁর স্ত্রী। যদিও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাসিদুর রহমান কয়েক দিন আগে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের হরিপুর গ্রামে আসেন। হামিদা বেগমকে তাঁর স্ত্রী দাবি করে দুজন মিলে হামিদার চাচা লন্ডনপ্রবাসী দানিছ মিয়ার খালি বাড়িতে ওঠেন তাঁরা। হামিদার আগেও বিয়ে হয়েছিল। তাঁর স্বামী, সন্তান আছে, তাঁরা লন্ডনে থাকেন। স্থানীয় লোকদের কাছে বাসিদুর নিজেকে সেনাবাহিনীর একজন মেজর হিসেবে পরিচয় দেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, হামিদা বেগমের পরিবারের সঙ্গে একই গ্রামের রাসেল মিয়ার পরিবারের জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। একপর্যায়ে হামিদার পরিবারের পক্ষ নিয়ে বাসিদুর রহমান রাসেল মিয়ার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেন এবং নিজের দাপট দেখান। বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজনের সন্দেহ হলে তাঁরা উপজেলার সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগ করে বিস্তারিত বলেন। এরপর আজ সকালে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি দল ওই গ্রামের গিয়ে বাসিদুর রহমান ও হামিদা বেগমকে আটক করে। এ সময় জগন্নাথপুর উপজেলায় দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর মেজর আল জাবির মোহাম্মদ আসিব ও জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, দুজনকে আটকের পর বাসিদুরের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর মেজর পদমর্যাদার এক সেট ইউনিফর্ম, বুট, একটি ড্রোন ক্যামেরা, দুটি পাসপোর্ট, র্যাব-৯ লেখাসংবলিত একটি ক্রেস্ট, কিছু প্রসাধনসামগ্রী, দা, ছুরি, চাকু উদ্ধার করা হয়। বাসিদুর রহমান ২০০৪ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালে ৩৭ রেজিমেন্টে করপোরাল হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ছুটিতে এসে তিনি পলাতক।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়দানকারী বাসিদুর রহমান ও এক নারীকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।