কথায় কথায় হুমকি দিতেন মারইয়াম, ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে অংশ নিতেন প্রশাসনের সভায়
Published: 11th, March 2025 GMT
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর টাঙ্গাইলের অন্য সমন্বয়কদের থেকে আলাদা হয়ে যান মারইয়াম মুকাদ্দাস (মিষ্টি)। নিজের কিছু অনুসারী নিয়ে চলাচল শুরু করেন। তবে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে অংশ দিতেন প্রশাসনের বিভিন্ন সভায়। কথায় কথায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার হুমকি দিতেন। টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায়ও নেতৃত্ব দেন।
সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করে ‘পাগলের আশ্রম’ চালু করার ঘটনায় গত রোববার দিবাগত রাতে মারইয়ামকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা–পুলিশের একটি দল। জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খানের করা মামলায় সোমবার (১০ মার্চ) তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মারইয়াম মুকাদ্দাসের বাড়ি বাসাইল উপজেলার যশিহাটী গ্রামে। তিনি নিজেকে আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেও বর্তমানে প্ল্যাটফরমটির কোনো কমিটিতে নেই। ফলে তাঁর কোনো অপকর্মের দায় নিতে রাজি নন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে কোটা বাতিলের আন্দোলন শুরু হলে মারইয়াম মুকাদ্দাস তাতে যোগ দেন। তবে শুরু থেকেই তাঁর আচরণ ছিল রহস্যজনক। নিজেকে কখনো মাদ্রাসার, কখনো সরকারি এম এম আলী কলেজের, আবার কখনো ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিতেন।
আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে সাবেক এমপির বাড়ি দখল করে ‘পাগলের আশ্রম’ চালু০৮ মার্চ ২০২৫ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত নেতারা বলছেন, আন্দোলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উগ্র বক্তৃতা দিয়ে সবার নজরে আসেন মারইয়াম মুকাদ্দাস। কথায় কথায় আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়ার হুমকি দিতেন। এ নিয়ে আন্দোলনে সমন্বয়কদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে সমন্বয়ক পরিচয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় তাঁকে অংশ নিতে দেখা গেছে। সেসব ছবি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করতেন। ছিন্নমূল মানুষকে নিয়ে মারইয়ামের একটি আশ্রম রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি মারইয়াম নিজের কিছু অনুসারী নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম এবং সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই বাড়িগুলোর মালামাল লুটপাট হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর করারও ঘোষণা দেন।
গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মারইয়াম মুকাদ্দাস ফেসবুকে লিখেছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসা ‘পাগলের আশ্রম’, প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খানের বাসা ‘প্রতিবন্ধীদের আশ্রম’, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বাসা ‘অ্যানিমেল শেল্টার’, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামানের বাসা ‘বৃদ্ধ আশ্রম’, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বাসা ‘এতিমখানা’ এবং আওয়ামী লীগ অফিস ‘পাবলিক টয়লেট’ করা হবে।
টাঙ্গাইলের সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের শহরের আকুরটাকুর পাড়ার ছয়তলা বাসভবন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম রইয় ম ম ক দ দ স জ য় হ র ল ইসল ম র সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
টেলিভিশনে কার্টুন দেখানোর কথা বলে বাড়িতে এনে দুই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা
টেলিভিশনে কার্টুন দেখানোর কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাত বছরের দুই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জনতা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
গ্রেপ্তার মমিনুর ইসলাম (৫৪) পেশায় একজন ছাগল ব্যবসায়ী। ঘটনার পর রাতে ভুক্তভোগী এক শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়।
ভুক্তভোগী দুই শিশুকে গতকাল রাতে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ির সামনে রাখা একটি স্কুলভ্যানের ওপর ওই দুই শিশু খেলছিল। এ সময় প্রতিবেশী মমিনুর ইসলাম তাঁর বাড়িতে টেলিভিশনে কার্টুন দেখানোর কথা বলে ওই দুই শিশুকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। ওই দুজনকে নিয়ে তিনি ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। পাশের বাড়ির এক শিশু ইফতারি দিতে এসে এ ঘটনা দেখে এবং ভুক্তভোগী এক শিশুর বাড়িতে জানায়। ওই শিশুর পরিবারের সদস্য মমিনুরের বাড়িতে আসেন। তখন শিশু দুটি ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। ঘটনা জানাজানি হলে মমিনুর ইসলাম বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে এলাকার লোকজন তাঁকে আটক করে পুলিশে দেন।
ওসি মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছরের দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। রাতে এক শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। আটক মমিনুর ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আসামিকে আজ বুধবার দিনাজপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।