প্রতীকী ছবি

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দেয়াল ছাড়া কিছুই অক্ষত নেই

সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখর থাকত। এখন সেখানে আবর্জনা আর ইটের স্তূপ। অনেকে ব্যবহার করেন শৌচাগার হিসেবে। মলমূত্র জমে থাকায় উৎকট গন্ধ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে প্রবেশ করা দূরের কথা, দুর্গন্ধে সামনে দিয়ে হেঁটে পার হওয়াও যেন দুষ্কর। 
খুলনার বৈকালী মোড় ও আড়ংঘাটা বাজারে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দুটি কার্যালয়ের বর্তমান চিত্র এটি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবন দুটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আসবাব ও জানালা-দরজা খুলে নিয়ে যাওয়ায় ধ্বংস্তূপে অবশিষ্ট আছে শুধু ইটের দেয়াল।
শুধু এ দুটি কার্যালয়ই নয়; গণঅভ্যুত্থানের পর এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে খুলনা আওয়ামী লীগের ছোটবড় শতাধিক কার্যালয়। গত ৮ মাস দলীয় কার্যালয়ের ধারেকাছেও যাননি নেতাকর্মীরা। 
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, আগস্টে ছাত্র-জনতা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এ 
পরিস্থিতি থেকে সব রাজনৈতিক দলেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত।
 ৪ আগস্ট নগরীর শঙ্খ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। হামলা হয় পরের দিনেও। ইটের দেয়াল ছাড়া কিছুই অক্ষত নেই। ধ্বংসস্তূপে পরিণত কার্যালয়টি এখনও সেভাবে পড়ে আছে। সিঁড়ির মুখে গেটটিতে কে বা কারা তালা লাগিয়ে রেখেছে। 
রেলওয়ে এলাকায় পানির ট্যাঙ্কের পাশে ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ৬ নম্বর ঘাটে গ্রীনল্যান্ড আবাসন ইউনিট কার্যালয় ও জাতীয় রিকশা ভ্যান শ্রমিক লীগ কার্যালয়, ৭ নম্বর ঘাটে রুজভেল্ট জেটি জাতীয় শ্রমিক লীগ কার্যালয়, জোড়াগেট ইউনিট ট্রাক টার্মিনাল শাখা কার্যালয়, জোড়াগেট রেললাইনের পাশে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের কার্যালয়, খালিশপুরে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়, খালিশপুর নয়াবাটি এলাকায় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাটি ইউনিট কার্যালয় এখন অস্তিত্বহীন। 
ডুমুরিয়া বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে থাকা ২৩টি কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। 
আত্মগোপনে থাকা ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়াদ্দারের সঙ্গে কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপে। তিনি বলেন, হামলা-মামলার ভয়ে নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বর্তমানে ডুমুরিয়ার কোথাও আওয়ামী লীগের কোনো কার্যালয় অক্ষত নেই।
উত্তাল আগস্টে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাড়া করা ভবনের কার্যালয়টি। ৬ মাস পর কার্যালয়টির সামনের দেয়ালে ‘কিছুক্ষণ আড্ডা ক্যাফে অ্যান্ড মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট’ নামে সাইনবোর্ড টানানো হয়। ভাঙচুরের পর মেরামত করে ইসরাফিল হোসেন নামের একজনের কাছে ভাড়া দিয়েছেন বাড়ির মালিক। 
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল ফুলতলা বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বেজেরডাঙ্গা এলাকায় ফুলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়। ফুলতলা বাজারের কার্যালয়ের জায়গায় দিদারুজ্জামান মোল্লা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছেন। তাঁর দাবি, জোর করে তাঁর জমিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় করা হয়েছিল। 
রূপসা উপজেলার সামন্তসেনা এলাকায় অবস্থিত কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয়। এ কার্যালয়ের দেড় শতাধিক চেয়ার ও ৫টি সিলিং ফ্যান লুট করার পর আগুন দেওয়া হয়। দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী পিপলস ঘাট ও চন্দনী মহলে আওয়ামী লীগের দুটি কার্যালয়টিও এখন অস্তিত্বহীন। একই অবস্থা পাইকগাছা উপজেলা সদরের। ভাঙচুরের পর বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরের কার্যালয়টির শুধু ইটের অবকাঠামো অবশিষ্ট রয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু দাকোপ ও তেরখাদা উপজেলায়। এ দুটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের কোনো কার্যালয় কেউ ভাঙচুর না করলেও গত ৮ মাস ধরে সেগুলো তালাবদ্ধ। দলের নেতাকর্মীরা কেউ সেখানে যাওয়ার ‘দুঃসাহস’ দেখাচ্ছেন না।
খুলনা মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোনো কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ অভিযোগ 
করেনি। অভিযোগ করবে কে? দলটির কেউ কি প্রকাশ্যে আছেন?

সম্পর্কিত নিবন্ধ