নাটোরে আদালতে ছবি তোলায় সাংবাদিকের ওপর হামলা বরখাস্ত পুলিশ সুপারের
Published: 11th, March 2025 GMT
নাটোরে স্ত্রীর করা নির্যাতনের মামলায় বরখাস্ত পুলিশ সুপার ফজলুল হককে (৪৫) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময় সাংবাদিকেরা ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাঁদের ওপর হামলা করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা তাঁকে হাজতখানায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাঁকে কারাগারে নিয়ে যায়।
এর আগে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বরখাস্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ফজলুল হক ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ছিলেন। পরে তাঁকে বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর। তিনি নাটোর সদর উপজেলার জংলী গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ফজলুল হকের স্ত্রী মেহেনাজ আক্তার (৪২) গত বছরের ২৮ অক্টোবর আদালতে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসাইন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করেন। তদন্তে স্ত্রীর করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ট্রাইব্যুনাল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। গতকাল সোমবার জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি আজ দুপুরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালত পুলিশ ট্রাইব্যুনাল থেকে ফজলুর রহমানকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাংবাদিকেরা তাঁর ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে তিন সাংবাদিক বারান্দার মেঝেতে পড়ে যান। কয়েকটি ভিডিও ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ দ্রুত তাঁকে হাজতখানার ভেতরে ঢোকান।
খবর পেয়ে শহরের অন্য সাংবাদিকেরা আদালতে ছুটে আসেন। তাঁরা ঘটনার বিচারের দাবিতে হাজতখানার সামনে অবস্থান নেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সাংবাদিকেরা তাঁকে একজন সাধারণ কয়েদির মর্যাদায় হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হলে তাঁকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকসহ উপস্থিত লোকজন ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ তাঁর ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন।
হামলার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন সময় টেলিভিশনের আল মামুন, এখন টেলিভিশনের মাহবুব হোসেন ও দেশ টিভির খান মামুন। তাঁরা বলেন, অন্য আসামির মতো তাঁরা বরখাস্ত ওই পুলিশ সুপারের ছবি তুলছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন এবং কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। কেউ কেউ নিচে পড়ে যান। মুঠোফোন ও ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে তাঁরা আসামি ফজলুল হককে কারাগারে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। তাঁরাও ধারণা করতে পারেননি, তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হবেন।
নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আমরা ফজলুল হকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করতে চাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইনের সঙ্গে জেলার সাংবাদিকেরা বিষয়টি নিয়ে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত একজন বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁকে তাঁরা পুলিশ হিসেবে দেখছেন না। তিনি আদালতের নির্দেশে কয়েদি। তাঁর দ্বারা সাংবাদিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বরখ স ত হ জতখ ন র ওপর এ ঘটন ফজল ল
এছাড়াও পড়ুন:
হত্যা মামলায় আবারও ৩ দিনের রিমান্ডে পলক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর ধানমন্ডি থানার হত্যা মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আবারও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এছাড়াও একই মামলায় চার দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে। তারা হলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির সূর্য সেন হলের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের প্রত্যেকের পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।
অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল ও আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট ধানমন্ডি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী রিয়াজ। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা শাফিয়া বেগম।
গত ১৪ আগস্ট খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা হতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে অনেকগুলো হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দফায় দফায় রিমান্ড ভোগ করেন তিনি।
এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামকে রাজধানীর আদাবর এবং নাঈমকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আটক করে পুলিশ।