‘আমলনামা–নির্মিত হয়েছে সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে’ ট্রেলার প্রকাশের আগে এমন দাবি করেছিলেন নির্মাতারা। দর্শকের কৌতূহল বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটুকুই ছিল যথেষ্ট। ট্রেলার প্রকাশের পর শুধু দর্শকের কৌতূহল নয়, একই সঙ্গে উঠে এসেছে কিছু প্রশ্ন আর দর্শকের নানা জল্পনা-কল্পনা। ট্রেলারটি শুরু হয় একটি কবিতা দিয়ে।

যার লাইন এমন, ‘আমাকে এবার পিছমোড়া করো, চোখ বেঁধে ফেলো প্রভু; আমি কোনোখানে  কোনো মানুষের হৃদয় দেখিনি কভু।’ কবিতার এই লাইন ছাড়াও ট্রেলারের ক্যাপশনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘সাদা পোশাকের কালো থাবায় যারা হারিয়ে গেছে, তারা কি আর কখনও ফিরবে?’

প্রশ্নের পাশাপাশি সংলাপে তুলে ধরা হয়েছে একটি বাক্য, ‘মধ্যরাতে সাদা পোশাকে যাদের নিয়ে যায় ধরে, তাহারা কি সবাই আবার ফিরে আসে ঘরে?’ অর্থাৎ ক্যাপশনের কথাটি সংলাপের মধ্য দিয়ে তুলে আনা হয়েছে ট্রেলার। এখানেই শেষ নয়, ‘আমলনামা’র পূর্বাভাস ভিডিওর ক্যাপশনও দারুণভাবে দর্শককে চমকে দিয়েছে। কারণ, এর ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘অবিচার যখন হয়ে উঠেছিল বিচারের মাপকাঠি’; যা দর্শকের মনে ধারণা এনে দিয়েছিল, এটি হয়তো মাদকবিরোধী অভিযানের কথা বলে একজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কাহিনি।

এরপর এসেছে থিমেটিক পোস্টার। যেখানে দেখা গেছে, ভাঙা ফ্রেমের ভেতর দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে এক ব্যক্তির ছবি। তবে বাবার মুখটি ছবিতে নেই। বুলেটের আঘাতে বাবার মুখের জায়গাটি ছিদ্র হয়ে গেছে, ভেঙে গেছে ওপরের কাচ। আর প্রতীকীভাবে সেই ভাঙা অংশ দিয়ে বেয়ে পড়ছে রক্ত; যার ক্যাপশনে লেখা, ‘যেই অবিচার আমরা চোখ বুজে সহ্য করে এসেছি!’

এ সবই পরিচালক রায়হান রাফীর ওয়েব সিনেমা ‘আমলনামা’ নিয়ে দর্শক কৌতূহলের পারদ, চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। কী হতে পারে এর গল্প, কোন ঘটনার ছায়া নিয়ে এটি নির্মিত– এমন অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে দর্শক মনে। যারা ট্রেলার দেখে একে একে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন ঘটনার সূত্র। এত গেল মুক্তির আগের কথা। অবশেষে সব প্রশ্ন আর জল্পনা-কল্পনার মাঝে আজ যখন চরকিতে ‘আমলনামা’ এলো তখন দেখার বিষয় এটাই, এটি দর্শক মনে কতটা ছাপ ফেলে।

যদিও নির্মাতা ওয়েব সিনেমাটি নিয়ে আশাবাদী হতেই পারেন। কারণ, এর আগে সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত ‘দহন’, ‘জানোয়ার’, ‘ফ্রাইডে’, ‘টান’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ সিরিজ ও সিনেমাগুলো দর্শকের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। সত্যি ঘটনার ছায়ায় যখন আরেকটি সিনেমার রাফী দর্শকের সামনে তুলে ধরছেন, তখন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়া আস্বাভাবিক নয়। তবে উত্তরটা সময়ই বলে দেবে। তাই এখন আমরা যেনে নিতে পারি, কোন শিল্পীরা রাফীর গল্পে প্রাণসঞ্চার করতে নিরলস কাজ করে গেছেন।

‘আমলনামা’ সিনেমার সুবাদে অনেকদিন পর ওটিটিতে দেখা যাবে নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসানকে। তাঁর সহশিল্পী হিসেবে গাজী রাকায়েত, তমা মির্জা, সারিকা সাবরিনের পাশাপাশি আছেন কবি, গীতিকার ও নির্মাতা কামরুজ্জামান কামু।

এ ছাড়াও গীতশ্রী চৌধুরী, হাসনাত রিপন, জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক, ইনায়া আর্যা অভিনয় করেছেন বিভিন্ন চরিত্রে। যাদের সবাই এখন অপেক্ষায় বাস্তব ঘটনায় ছায়ায় লেখা রায়হান রাফী ও এসএম নজরুল ইসলামের এই ফিকশন কাহিনি নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়ার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ক য পশন আমলন ম ক ত হল ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘কাউরে না কাউরে আমার লাগবে, উপর থেকে প্রেশার আছে’

এটা বললে বাড়াবাড়ি হবে না, সময়ের আলোচিত নির্মাতা রায়হান রাফী সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় সিনেমা নির্মাণে সফল। ‘জানোয়ার’, ‘ফ্রাইডে’, ‘টান’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’র পর এবার সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে তিনি নিয়ে আসছেন ‘আমলনামা’। অল্পবিস্তর প্রায় সবাই জানেন, চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘আমলনামা’ও সত্য কোনো ঘটনার ছায়া অবলম্বনে। ফিকশনের আশ্রয়ে রাফী এবার কোনো এক অঞ্চলের অদেখা দৃশ্য ও অনুভূতি দর্শকের সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। সিনেমাটি চরকিতে আসছে ১২ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে (১৩ মার্চ)।

‘আমলনামা’র অফিশিয়াল পোস্টার প্রকাশ পায় ৩ মার্চ। পোস্টারে সিনেমার চরিত্রের ছবি তো আছেই, কিন্তু তার পেছনে ঝাপসা অক্ষরে লেখা ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শব্দগুলো। সেই থেকে দর্শকের ধারণা স্পষ্ট, ‘আমলনামা’র গল্পও এগিয়েছে সেই পথেই। ৮ মার্চ প্রকাশ পেয়েছে সিনেমাটির ট্রেলার। সেখানেও নানান ইঙ্গিত রয়েছে গল্পটির। ট্রেইলারের শেষে ইমরান জামান চরিত্রটির কণ্ঠে শোনা যায়, ‘কাউরে না কাউরে আমার লাগবে, ওপর থেকে প্রেশার আছে।’এ ছাড়া ট্রেলারে কিছু বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে এমন, ‘মধ্যরাতে সাদাপোশাকে যাদের নিয়ে যায় ধরে’, ‘তাহারা কি সবাই আবার ফিরে আসে ঘরে?’

শুধু তা–ই নয়, ট্রেলারটি শুরু হয়েছে কবিতা দিয়ে। যার লাইন এমন—‘আমাকে এবার পিছমোড়া করো, চোখ বেঁধে ফেল প্রভু/ আমি কোনোখানে কোনো মানুষের হৃদয় দেখিনি কভু।’ কামরুজ্জামান কামুর ‘আমাকে এবার পিছমোড়া করো’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে লাইন দুটি। মজার বিষয় হলো, ট্রেলারের জন্য আবৃত্তি করেছেন কবি নিজেই। সিনেমাটিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন। কামু বলেন, ‘এই সিনেমায় অভিনয়ের অন্যতম কারণ হলো, আমার ও নির্মাতার ভাবনার মিল। রাফী যখন চরিত্রটির জন্য আমাকে বলেন, তখন ভেবে দেখলাম, যে কথা তিনি বলতে চান, সে কথা তো আমিও বলেছি, বলতে চাই। চরিত্রটি অনেক কিছু বলে এবং এটা বলা দরকার।’
‘আমলনামা’ ওয়েব সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে এমন ‘বলা দরকার’-এর তাগিদ থেকেই। যে তাগিদ অনুভব করেছেন নির্মাতা রায়হান রাফী। তাঁর ভাষ্যে, ‘গল্পটা অনেক বছর আগেই ভাবা। যখনই কোনো ঘটনা আমাকে পীড়া দেয়, তখনই আমি সেটা নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটির চেষ্টা করি। যে ঘটনাটা নিয়ে এবার কাজ করেছি, সেটা এখনই বলতে পারছি না, কিন্তু ঘটনাটা আমাকে অনেক ভাবিয়েছে এবং কাঁদিয়েছে। এটা অনেক ইমোশনাল গল্প। যখন এটা নিয়ে আগাচ্ছিলাম, তখন চোখে পানি চলে আসছিল।’

রাফীর মতে, এ ধরনের কাজ তিনি যখনই করতে গেছেন, যখনই সমাজকে প্রশ্ন করেছেন, সিস্টেমকে প্রশ্ন করতে গেছেন, তখনই কোনো না কোনো সমস্যা এসেছে তাঁর সামনে। কিন্তু সেগুলো কখনোই আটকাতে পারেনি রাফীকে। তিনি বলেন, ‘আমি সিনেমা বানাই এবং সিনেমাই আমার প্রতিবাদের ভাষা। আমরা একটা সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণা নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু এটা মূলত ফিকশন। আমরা ঘটনার ইনার ফিলিংটা ধরার চেষ্টা করেছি। এমন ঘটনা অনেক হয়েছে, দর্শকেরা সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।’
সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে কোনো কনটেন্ট বা সিনেমা নির্মাণ করলে রায়হান রাফী সেভাবেই নির্মাণ করতে চান, যেন অপরাধী দেখলেও আতঙ্কিত হয়, বুঝতে পারে, সে কী করেছে। ‘আমলনামা’তেও রাফী সেই চেষ্টা করেছেন বলে জানান। রাফী বলেন, ‘একটি ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিলেও সিনেমাটিতে নানা রকমের ঘটনা রয়েছে। তবে আমি বিশেষভাবে বলতে চাই, এটা একজন বাবারও গল্প।’

সিনেমায় পারভীন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তমা মির্জা। ট্রেলারের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে তাঁর ছোটাছুটি। স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁর আকুতি বিভিন্ন দৃশ্যে স্পষ্ট। চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘চরিত্রটা আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর ওই জগৎ থেকে আমি আর বের হতে পারিনি। আমার মনে হচ্ছিল যে চোখের সামনে সব ঘটছে। খুবই বাস্তবধর্মী একটি চরিত্র এবং চরিত্রটির যে টেনশন, সেটা দর্শকদেরও চিন্তিত করে তুলবে বলে আমার মনে হয়।’
সিনেমায় ইমরান জামানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। তিনি একজন পুলিশ সদস্য। তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে আছেন সারিকা সাবরিন। সিনেমায় আরেকটি পরিবারে দেখা যাবে কামরুজ্জামান কামু ও তমা মির্জাকে। গাজী রাকায়েত, গীতাশ্রী চৌধুরী, হাসনাত রিপন, জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক, এ কে আজাদ সেতু, ইনায়া আর্যা অভিনয় করেছেন সিনেমায়। রায়হান রাফীর গল্পে ‘আমলনামা’র চিত্রনাট্য করেছেন রায়হান রাফী ও এস এম নজরুল ইসলাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’...‘আমলনামা’ সিনেমায় কিসের ইঙ্গিত
  • ‘কাউরে না কাউরে আমার লাগবে, উপর থেকে প্রেশার আছে’