কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদের বিধান নেই
Published: 11th, March 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের জোরালো দাবি উঠেছে। তবে ২০০৬ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোন বিধান যুক্ত করা হয়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে একাট্টা। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় বছরের পর বছর তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে ছাত্র সংসদ না থাকায় দক্ষ নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না বলে ভাবছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ছাত্র সংসদ গঠন করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন:
ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী কণ্ঠ
কুবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের দাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর সাধারণ শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, গণতন্ত্রের চর্চা, সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতার বিকাশ, ক্যাম্পাসের শান্তি বজায় রাখা, লেজুড়বৃত্তিক ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে মুক্তি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করা।
উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেওয়ার প্রায় ২ মাস পেরিয়ে গেলেও ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোন উদ্যোগ। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইভা বলেন, “দেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও নোংরা রাজনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। বর্তমানে বলা হয়ে থাকে, কুবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। আদতে কতটুকু নিষিদ্ধ আমি জানি না।”
তিনি বলেন, “হয়তো আমার মতো অন্যরাও এমনটাই ভাবে! নির্বাচন হয়ে গেলেই দেখা যাবে ক্ষমতা আবার একটা পক্ষের কাছে কুক্ষিগত হয়ে যাবে। এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা হলে নেতৃত্বের দক্ষতা, সমস্যার সমাধান, ডেমোক্রেটিক প্রক্রিয়ার চর্চা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।”
থিয়েটার কুবির সাধারণ সম্পাদক হান্নান রহিম বলেন, “প্রতিটা ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরাজনীতির কণ্ঠরোধ করবে। রাজনৈতিক দলগুলো কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না, তা বোঝার জন্য রকেট সাইন্টিস্ট হওয়ার দরকার নেই। তাদের থাকে হীন উদ্দেশ্য।”
তিনি বলেন, “প্রতিটা ক্যাম্পাসেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে জোর আওয়াজ তোলা উচিত, এটা সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীরা তাদের নেতৃত্ব সিলেক্ট করবে। এতে উঠে আসা নেতৃত্ব অধিকতর ছাত্রবান্ধব হবে, তারা কারো উপর বসগিরি-দাদাগিরি চালাবে না। হল-ক্যাম্পাস হয়ে উঠবে নির্মল শান্তির জায়গা।”
কুবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে প্রশাসন থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি একটি সাংবিধানিক অধিকার। এটা বন্ধ হওয়া কখনো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসতে পারে না। কুবি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”
প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ।
তিনি বলেন, “আমরা ছাত্র সংসদের বিপক্ষে না। প্রশাসন যদি সব ছাত্র সংগঠনগুলোকে উন্মুক্তভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে, তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে ক্রিয়াশীল কোন ছাত্র সংগঠনকে যদি রুদ্ধ রেখে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হব।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ যেমন, কুবির ছাত্র সংসদও তেমন হবে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র স গঠন র জন ত সমস য গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের তেল আবিবে ড্রোন হামলার দাবি হুতিদের
ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর তেল আবিবে নতুন করে ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী।
শনিবার (১২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) আল-মাসিরাহ টিভিতে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুতির সামরিক শাখার মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, “আমাদের বিমান বাহিনী তেল আবিবে দুটি ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে একটি গুণগত সামরিক অভিযান চালিয়েছে, দুটি ড্রোন ব্যবহার করে।”
আরো পড়ুন:
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ শনিবার
ইসলামী ফ্রন্টের বিক্ষোভ
‘ইসরায়েলের পণ্য বর্জনের জিহাদ শুরু করতে হবে’
মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে এই হামলা চালানো হয়েছে।
হুতির সামরিক মুখপাত্র আরো বলেন, “আমরা নিশ্চিত করছি যে, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন আগ্রাসনের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও আমরা গাজার প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন থেকে পিছু হটবো না।”
ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভ নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলে পৌঁছানোর আগেই জর্ডানের আকাশসীমার মধ্যে মৃত সাগরের কাছে একটি ইয়েমেনি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জর্ডানের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, একটি অজ্ঞাত ড্রোন জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং মৃত সাগরের কাছে মাদাবা গভর্নরেটের মাইন এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গত মাস থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল নতুন করে তীব্র হামলা শুরু করার পর থেকে, হুতিরা ইসরায়েলি এবং মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে ঘন ঘন আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
আগের দিন বৃহস্পতিবার , হুতির সামরিক মুখপাত্র উত্তর লোহিত সাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী, ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান এবং অন্যান্য মার্কিন যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে নতুন আক্রমণের দাবি করেন।
এদিকে, মার্কিন সেন্ট্রল কমান্ড সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, বিমানবাহী রণতরীটির ওপর ‘হুথিদের হামলার অদ্ভুত দাবি’ সত্ত্বেও তারা হুতিদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই দিন-রাতে অবিরাম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
হুতি পরিচালিত সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, শুক্রবার ভোর থেকে উত্তর ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানা, সংলগ্ন তেল সমৃদ্ধ প্রদেশ মারিব এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় হোদেইদাহের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি স্থানে হুতিদের স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
সানার বাসিন্দারা সানার পূর্ব উপকণ্ঠে অবস্থিত মাউন্ট নুকুম এবং বানি হাশিশ জেলায় হামলা চালানোর আগে এবং পরে যুদ্ধবিমানের বিকট শব্দ শুনতে পান। এছাড়াও, রাজধানীর দক্ষিণ উপকণ্ঠে অবস্থিত সানহান জেলার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়।
ইয়েমেনে সম্ভাব্য বিমান হামলার বিষয়ে বাসিন্দাদের আগাম সতর্ক করার জন্য কোনো সতর্কীকরণ সাইরেন সিস্টেম নেই।
চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে সানার একজন বাসিন্দা মোহাম্মদ বলেন, “আমরা যা শুনি তা হলো, আঘাত হানার এবং বিস্ফোরিত হওয়ার এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ, তারপর আমরা পূর্ণ গতিতে যুদ্ধবিমানের শব্দ শুনতে পাই।”
গত ১৫ মার্চ, মার্কিন সামরিক বাহিনী লোহিত সাগরে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখতে হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা পুনরায় শুরু করে।
উত্তর ইয়েমেন নিয়ন্ত্রণকারী হুতি গোষ্ঠী বলেছে, ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করলে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশের অনুমতি দিলে তারা আক্রমণ বন্ধ করবে।
ঢাকা/ফিরোজ