যে অভিযোগে গ্রেপ্তার ফিলিপাইনের দুতার্তে
Published: 11th, March 2025 GMT
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তে সম্প্রতি হংকং সফর শেষে দেশে ফেরার পরপরই পুলিশ তাকে আটক করে।
দুতার্তের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ এবং তার মাদকবিরোধী অভিযানের নামে পরিচালিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে আইসিসি। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে (২০১৬-২০২২) এবং তার আগে দাভাও শহরের মেয়র থাকাকালে, তার নেতৃত্বে পরিচালিত ‘ড্রাগ ওয়ার’-এ হাজারো মানুষ নিহত হয়।
গ্রেপ্তারের পর দুতার্তে বলেছেন, “আমি কী অপরাধ করেছি?”—এই প্রশ্ন তুলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুতার্তে তার শাসনামলে মাদকবিরোধী অভিযান ‘ওয়ার অন ড্রাগস’ বা ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ নামে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অভিযানে ৬,২৫২-এর বেশি সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে, তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। অধিকাংশ ভুক্তভোগী ছিলেন শহুরে দরিদ্র সম্প্রদায়ের তরুণ পুরুষ।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই বাড়িতে অভিযান চালানো হতো এবং আত্মসমর্পণ না করলে সরাসরি গুলি চালানো হতো। তবে বড় মাদক ব্যবসায়ীরা কখনোই ধরা পড়েনি।
দুতার্তে একবার ফিলিপাইন সংসদে বলেছিলেন, “আমার নীতির সমালোচনা করবেন না। আমি কোনো দুঃখপ্রকাশ করব না। আমি যা করেছি, তা আমার দেশের জন্য করেছি।”
এর আগে ফিলিপাইন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) তদন্তকারীদের দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের ঘোষিত ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’-এর ফলে হাজারো মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে, সরকারের বাধা সত্ত্বেও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড.
২০২১ সালের জুলাই থেকে, ড. ফর্তুন ৯০টিরও বেশি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন এবং একাধিক অসংগতি খুঁজে পেয়েছেন। অনেক বন্দুকধারীর মৃত্যুর সার্টিফিকেটে “প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যু” লেখা হয়েছে, যেখানে গুলির চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। এমনকি কিছু প্রতিবেদনে কপি-পেস্ট করা তথ্য পাওয়া গেছে, যা প্রকৃত মৃত্যুর কারণের সঙ্গে কোনো মিল নেই।
সরকারি হিসাবে, ২০১৬ সালে দুতের্তে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুলিশের গুলিতে ও অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হাতে ৬,২৫২ জন নিহত হয়েছেন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি হতে পারে। পুলিশের দাবি, নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী এবং অভিযানের সময় ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু অনেক পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের প্রিয়জন শুধুমাত্র ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাকার কারণেই প্রাণ হারিয়েছেন।
সেই সময় মানবাধিকার কর্মী ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী ছিলেন যে, তাদের সংগ্রহ করা প্রমাণ একদিন আন্তর্জাতিক আদালতে পৌঁছাবে এবং এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো দুতার্তের গ্রেপ্তারকে “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আইসিএইচআরপি (ICHRP)-এর চেয়ারম্যান পিটার মারফি বলেছেন, “ন্যায়বিচারের চাকা ধীরে চলে, কিন্তু আজ তা সঠিক পথে এগোচ্ছে। দুতার্তের গ্রেপ্তার তার নৃশংস শাসনের জন্য জবাবদিহির সূচনা।”
তবে দুতার্তের সাবেক প্রেসিডেন্টিয়াল মুখপাত্র সালভাদর পানেলো তার গ্রেপ্তারকে “অবৈধ” বলে দাবি করেছেন। তার যুক্তি, ফিলিপাইন ২০১৯ সালে আইসিসি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই আদালতের এখতিয়ার দেশটির ওপর নেই। তবে আইসিসি জানিয়েছে, ফিলিপাইন সদস্য থাকা অবস্থায় সংঘটিত অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।
দুতার্তে সম্প্রতি দাভাও শহরের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ম্যানিলা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তার গ্রেপ্তার এড়াতে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের সমর্থকেরা বিক্ষোভে নামতে পারেন, তাই সরকার দ্রুত তাকে হেফাজতে নিয়েছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মারকোস জুনিয়র প্রথমে আইসিসির তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি হননি। তবে সম্প্রতি দুতার্তে পরিবারের সঙ্গে তার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলে তিনি অবস্থান বদলান। ২০২২ সালের নির্বাচনে দুতার্তের কন্যা সারা দুতার্তে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হলেও, পরবর্তীতে দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
আইসিসি ২০১৬ সালেই ফিলিপাইনের এই মাদকযুদ্ধের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে এবং ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর আওতায় ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সংঘটিত অপরাধগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল প ইন ফ ল প ইন আইস স সরক র তদন ত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প-পুতিন দুজনই জেলেনস্কির বিদায় চান, তা কি সম্ভব
ইউক্রেন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুজনই দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি তাঁদের প্রচণ্ড অসন্তোষের দিক দিয়ে একবিন্দুতে এসেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয় দেশের নেতারাই চাইছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে জেলেনস্কি সরে যান।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প দাবি করেন, ‘আমরা এমন একটি অবস্থায় আছি, যেখানে ইউক্রেনে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি, যেখানে সামরিক শাসন চলছে এবং বলতে কষ্ট লাগছে যে তাঁর (জেলেনস্কি) জনপ্রিয়তা ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।’
ইউক্রেনের সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, সামরিক শাসন চলাকালে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং যুদ্ধ চলাকালে নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব।এর পাঁচ দিন পর পুতিন ট্রাম্পের বক্তব্যকে সমর্থন জানান। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আসলে তাঁর (জেলেনস্কির) কত শতাংশ জনসমর্থন আছে, সেটা বড় কথা নয়, তা ৪ শতাংশ বা যা-ই হোক না কেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, তাঁর জনপ্রিয়তা তাঁর সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় ঠিক অর্ধেক।’ রুশ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইউক্রেনের সাবেক শীর্ষ জেনারেল ভালেরি জালুঝনির দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন। এই জেনারেলকে গত বছর চাকরিচ্যুত করেছিলেন জেলেনস্কি।
ট্রাম্প ও পুতিন দুজনই জেলেনস্কির জনপ্রিয়তার বিষয়ে ভুল ছিলেন।
কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশিওলজির জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির কূটনৈতিক টানাপোড়েন ইউক্রেনের ভেতরে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। ডিসেম্বরে তার জনপ্রিয়তা ছিল ৫২ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ শতাংশে।
অবশ্য জরিপ অনুযায়ী, ৩৭ শতাংশ ইউক্রেনীয় জেলেনস্কিকে বিশ্বাস করেন না।
সমালোচকেরা জেলেনস্কির বিরুদ্ধে নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া তিনি নিজের রাজনৈতিক দল ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল’–এর ভেতর দুর্নীতি বন্ধে ব্যর্থ হয়েছেন, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর ভেতরে দুর্নীতি বন্ধে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জালুঝনিকে বরখাস্ত করার জন্যও তাঁর সমালোচনা হয়।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জালুঝনির ব্যাপারে ঠিকই বলেছিলেন পুতিন। কারণ, জালুঝনিই ইউক্রেনের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি জেলেনস্কিকে হারাতে পারেন।
শক্তপোক্ত, স্বল্পভাষী এই জেনারেলের ৬২ শতাংশ জনসমর্থন রয়েছে। তবে তিনি একাধিকবার বলেছেন, যুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
জালুঝনি গত সপ্তাহে ইউক্রেনের বার্তা সংস্থা আরবিসি–ইউক্রেনকে বলেছেন, ‘যখন যুদ্ধ চলছে, তখন আমাদের সবার উচিত দেশকে রক্ষার জন্য কাজ করা, নির্বাচনের ব্যাপারে চিন্তা করা নয়।’
সে যা–ই হোক না কেন ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার আগে জেলেনস্কি যেসব কৌশল গ্রহণ করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন, সেগুলোই জালুঝনিও চতুরতার সঙ্গে করে চলেছেন।
জালুঝনি কদাচিৎ সাক্ষাৎকার দেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁর উপস্থিতি সীমিত করে রেখেছেন, যেন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়ে ভোটাররা আন্দাজ করতে থাকেন।
জালুঝনি ট্রাম্পের প্রতি মাত্র একবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ৬ মার্চ লন্ডনের চাথাম হাউসে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংসের’ এবং ‘পশ্চিমা বিশ্বের ঐক্য নিয়ে সন্দেহ তৈরির’ অভিযোগ তোলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনে দ্রুত একটি ভোটের আয়োজন করার দাবি করলে এর জবাবে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
এর অন্তর্নিহিত বার্তাটি ছিল স্পষ্ট, নিশ্চিত জয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জালুঝনি এখন জেলেনস্কিকে চ্যালেঞ্জ করছেন না।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্পের প্রতিনিধিদল বারবার জেলেনস্কির বেসামরিক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, যদিও তাঁদের জনপ্রিয়তা খুবই কম।
মার্চের শুরুতে ট্রাম্পের সহকারীরা ইউক্রেনের বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও দুবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টিমোশেঙ্কোর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।
একসময় যিনি তাঁর চুলের ‘হালো বিনুনি’ স্টাইলের জন্য পরিচিতি পেয়েছিলেন।
কমেডিয়ান থেকে রাজনীতিতে আসা জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার আগপর্যন্ত ২০১৯ সালের নির্বাচনে জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন টিমোশেঙ্কো।
কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১০ দশমিক ৬ শতাংশ টিমোশেঙ্কোর প্রতি আস্থা রাখেন বলে কিয়েভভিত্তিক জরিপ সংস্থা রোজুমকভ সেন্টারের ২৫ মার্চের জরিপে উঠে এসেছে। টিমোশেঙ্কো ইউক্রেনের বাতকিভশচিনা (ফাদারল্যান্ড) নামের দলের প্রধান।
জেলেনস্কির পূর্বসূরি এবং প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পোরোশেঙ্কো অবশ্য জনপ্রিয়তায় টিমোশেঙ্কোর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন।
জরিপ অনুযায়ী, ১৭ শতাংশ ইউক্রেনীয় পেট্রো পোরোশেঙ্কোর প্রতি আস্থা রাখেন। ইউক্রেনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া পোরোশেঙ্কো ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ভাষা ও জাতিগত বিভেদ ভুলে সব ইউক্রেনীয়কে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ওই নির্বাচনে জয় পান।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পোরোশেঙ্কো নানা দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি জেলেনস্কির কাছে পরাজিত হন।
পোরোশেঙ্কো নিশ্চিত করেছেন, ট্রাম্পের সহকারীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে বৈঠকটি আগাম নির্বাচন নিয়ে ছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা তিনি অস্বীকার করেছেন।
পোরোশেঙ্কো ফেসবুকে লিখেছেন, শুধু যুদ্ধবিরতি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার শর্তে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরই ইউক্রেনে নির্বাচন সম্ভব।
ইউক্রেনের সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, সামরিক শাসন চলাকালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং যুদ্ধ চলাকালে নির্বাচন আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব।
কারণ, ইউক্রেনে ভোট গ্রহণের জন্য প্রায় সাত লাখ সেনাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিতে হবে, যাতে তাঁরা ভোট দিতে পারেন বা চাইলে তাঁদের কেউ প্রার্থী হতে পারেন ও প্রচার চালাতে পারেন। এটি কার্যত অসম্ভব, বিশেষ করে যখন রুশ বাহিনী ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার (৭৫০ মাইল) দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনজুড়ে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মার্চে রুশদের নতুন এলাকা দখলের অগ্রগতি ছিল কম।
বিশ্লেষণধর্মী টেলিগ্রাম চ্যানেল খোরটিটসিয়ার তথ্যমতে, রুশ বাহিনী মার্চ মাসে মাত্র ১৩৩ বর্গকিলোমিটার (৫১ বর্গমাইল) এলাকা দখল করতে পেরেছে, যার বেশি ভাগই দনবাসের। গত নভেম্বরে দখল করা ৭৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার তুলনায় যা একেবারেই কম।
অবশ্য পুতিন তাঁর বাহিনীর ‘বড় জয়ের’ আশা করছেন এবং তিনি ট্রাম্প প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য একের পর এক নতুন শর্ত সামনে আনছেন।
ভোটের সময় জনসমাগম অনিবার্য, তাই রাশিয়ার প্রায় প্রতিদিনকার গোলাবর্ষণ ইউক্রেনের শহরগুলোর জন্য বড় নিরাপত্তা হুমকি।
সাধারণত ইউক্রেনে সরকারি বিদ্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করা হয়। কিন্তু যুদ্ধে ইতোমধ্যে হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে।
চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সোভিয়েত যুগ–পরবর্তী ইউক্রেনের প্রতিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ নেওয়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবে না কিয়েভ।