মানুষের পাশে ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’
Published: 11th, March 2025 GMT
“সংসারে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী-ছেলে মেয়ে রয়েছে। সারা দিন রিকশা চালাই। কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা কামাই হয়। রিকশা ভাড়া আড়াইশ’ টাকা দিয়ে ইনকাম থাকে আড়াইশ’ থেকে ৩০০ টাকা। তা দিয়ে সংসার চালামু না কি ইফতার করুম? সারা দিন বাইরে বাইরে থ্যাইকা রিকশা চালাই। তাই বাসায় যাইতে পারি না। এইখানে ইফতার করায়, তাই চইল্যা আসি ইফতার করনের লাইগ্যা।”
গোপালগঞ্জে শহরের পৌর পার্কে ইফতার করতে এসে এ কথাগুলোই বলছিলেন রিকশা চালক মো.
এক বেলার ইফতার নিয়ে এমন সব মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ।’ প্রতিদিন কর্মহীন মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করছে তারা।
ইফতারে বসেছেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা
গোপালগঞ্জে শহরের লঞ্চঘাট এলাকার শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন দুপুর থেকে ইফতার তৈরির কাজ শুরু করে ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ এর একদল সদস্য। এরমধ্যে কেউবা স্কুল আবার কেউ বা পড়ছে কলেজে। এসব সদস্যরা নিজেদের হাত খরচ, পরিবার আর পরিচিতজনদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মুখে এক বেলা ইফতার তুলে দিচ্ছেন। এসব ইফতারের মধ্যে কোনদিন রয়েছে মুড়ি-ছোলা-বেগুনি, কোন দিন দই-চিড়া, কোন দিন খিচুড়ি আবার কোনদিন রয়েছে বিরিয়ানী। যেদিন যেমন আর্থিক সাহায্য পান সেই সেইরকমই খাবার তৈরি করেন তারা।
পরে ইফতারের আগে খাবারগুলো নিয়ে আসা হয় গোপালগঞ্জে শহরের পৌর পার্ক চত্ত্বরে। সেখানেই এসব অসহায় ও দিনমজুর মানুষেকে ইফতার করানো হয়।
ইফতার করতে আসা কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের বাসিন্দা রিকশা চালক আব্দুস সত্তার শেখ বলেন, “প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা রোজগার করি। রিকশা ভাড়া দিয়ে পরিবারের জন্য ইফতার কিনতে পারি না। এখান থেকে প্রতিদিন ইফতার নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার করছি।”
অপর রিকশা চালক লিটন মোল্লা বলেন, “আগের মত তেমন একটা আয় রোজগার নেই। পরিবারের জন্য ভাল কোন ইফতার কিনতেও পারি না। প্রতিদিন চলতি পথে এনাদের থেকে ইফতার নিয়ে যাই। কোন কোন দিন বাসায় যেতে না পারলে এখানে বসেই ইফতার করি।”
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ এর সদস্য মো. নূর নবী, আসিফ করিম বলেন, “আমরা নিজেদের হাত খরচ, পরিবার ও প্রতিবেশি এবং পরিচিতজনদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এসব খাবার বিতরণ করছি। নিজেদের মনের আনন্দ পেতে কষ্ট হলেও কিছুটা করার চেষ্টা করছি। বিত্তবানদের কাছে আমাদের আবেদন তারা যেন এসব অসহায় মানুষদের দিকে একটু সাহায়্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।”
খিচুড়ি রান্নায় ব্যস্ত ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ - এর সদস্যরা
সংগঠনের অপর সদস্য আহম্মদ আলী থান, শীরিন আক্তার তানহা বলেন, “অনেক দুঃস্থ, অসহায়, গরিব মানুষ আর্থিক সমস্যার কারণে ঠিকমত ইফতার করতে পারছে না। আমরা তাদের কথা বিবেচনা করে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী রান্না করা ইফতার বিতরণ করছি। প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মাঝে এসব খাবার বিতরণ করে থাকি।”
‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ - এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরী বলেন, “২০১৭ সাল থেকে আমরা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবারের মত এবারের রোজাদার ও কর্মহীন মানুষের মুখে একবেলা ইফতার তুলে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী রান্না করা ইফতার এসব মানুষেদের হাতে তুলে দিচ্ছি। যাতে তারা অন্তত এক বেলা পেট ভরে খাবার খেতে
পারে।”
তিনি আরো বলেন, “সমাজের বিত্তবানেরও এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তারা আর্থিক বা বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এসব মানুষের এক বেলার খাবার যোগাতে পারেন। তারপরেও যতটুকু সম্ভব পুরো রমজান মাস ধরে আমাদের এ কার্যক্রম চলবে।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইফত র করত ইফত র ক ত র কর পর ব র এক ব ল র সদস সদস য অসহ য়
এছাড়াও পড়ুন:
টেলিভিশনে কার্টুন দেখানোর কথা বলে বাড়িতে এনে দুই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা
টেলিভিশনে কার্টুন দেখানোর কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাত বছরের দুই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জনতা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
গ্রেপ্তার মমিনুর ইসলাম (৫৪) পেশায় একজন ছাগল ব্যবসায়ী। ঘটনার পর রাতে ভুক্তভোগী এক শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়।
ভুক্তভোগী দুই শিশুকে গতকাল রাতে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ির সামনে রাখা একটি স্কুলভ্যানের ওপর ওই দুই শিশু খেলছিল। এ সময় প্রতিবেশী মমিনুর ইসলাম তাঁর বাড়িতে টেলিভিশনে কার্টুন দেখানোর কথা বলে ওই দুই শিশুকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। ওই দুজনকে নিয়ে তিনি ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। পাশের বাড়ির এক শিশু ইফতারি দিতে এসে এ ঘটনা দেখে এবং ভুক্তভোগী এক শিশুর বাড়িতে জানায়। ওই শিশুর পরিবারের সদস্য মমিনুরের বাড়িতে আসেন। তখন শিশু দুটি ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। ঘটনা জানাজানি হলে মমিনুর ইসলাম বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে এলাকার লোকজন তাঁকে আটক করে পুলিশে দেন।
ওসি মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছরের দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। রাতে এক শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। আটক মমিনুর ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আসামিকে আজ বুধবার দিনাজপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।