দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা এখন প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ। প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হন এবং কিডনি বিকল হয়ে মারা যান। আরও ২৪ থেকে ৩০ হাজার রোগীর হঠাৎ কিডনি বিকল হয়। তাঁদেরও সাময়িক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে কিডনি রোগ এড়ানো যায়।

আজ মঙ্গলবার বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে দেশের কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এই মন্তব্য করেছেন।

প্রতিবছর ১৩ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আপনার কিডনি কি ভালো আছে’। এবারের প্রতিপাদ্যের মধ্যে কিডনির সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। সে কারণে প্রতিপাদ্যের আলোকে ‘কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। দেশের অন্যতম কিডনিবিষয়ক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস–এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা.

এম এ সামাদ। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগ ক্রমাগত বাড়ছে। বিশ্বে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যা ডায়াবেটিক রোগীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এবং ক্যানসার রোগীদের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ। মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি রোগ ১৯৯০ সালে ছিল ১৯তম স্থানে, বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সপ্তম স্থানে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে চলে আসবে পঞ্চম স্থানে। উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে কিডনি রোগের হার সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই রোগের বৃদ্ধির হার খুবই উদ্বেগজনক। কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে রোগীর ব্যক্তিগত জীবনই শুধু বিপর্যস্ত হয় না, তার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপরও বিশাল অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ মেটাতে না পেরে রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন।

অধ্যাপক এম এ সামাদ বলেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি প্রদাহ (নেফ্রাইটিস) ও স্থূলতা কিডনি রোগের প্রধান কারণ। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার, জন্মগত ও বংশগত কিডনি রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও পাথুরে রোগীরাও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

মূল প্রবন্ধে আশার কথা শুনিয়ে বলা হয়, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করে, তাহলে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য পূর্বে কোনো কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে, তাদের বছরে অন্তত দুবার প্রস্রাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা উচিত। প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা। ক্যাম্পস ‘কিডনি রোগ জীবননাশা-প্রতিরোধই বাঁচার আশা’ এই স্লোগান নিয়ে গত ২১ বছর ধরে কাজ করে আসছে।

গোলটেবিলে দেশের বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ কিডনি রোগকে ‘নীরব দুর্যোগ’ উল্লেখ করে বলেন, কিডনির ৭০ থেকে ৯০ ভাগ অংশ অকেজো না হলে এই রোগের লক্ষণ বিশেষ দেখা যায় না। আর এই পর্যায়ে এলে তখন চিকিৎসায় ফল পাওয়া যায় না। রোগের জটিলতা ও অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচের কারণে প্রতিরোধ করাই হচ্ছে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায়।

আইএসএন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক চেয়ার  চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল আলম কিডনি রোগ প্রতিরোধে একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বিশেষ করে শিশু ও তরুণেরা যাতে কিডনি রোগে আক্রান্ত না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, রোগীর তুলনায় কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা কম। সারা দেশে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে ডায়ালাইসিস কেন্দ্র আছে ১৪৪টি। যার ৭০ শতাংশই রাজধানীতে। প্রান্তিক পর্যায়ে এই সেবা অপ্রতুল।

পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম বলেন, অপরিণত বয়সে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করে তাদের কিডনিও অপরিণত থাকে। পরে তাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। তাদের সতর্কভাবে জীবন যাপন করা উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, ‘শরীরটা আমার, রোগটাও আমার। সে কারণে আমাকেই সচেতন হতে হবে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিডনির পরীক্ষা খুব ব্যয়বহুল নয়। নিয়মিত পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হবে। রোগপ্রতিরোধ সহজ হবে।’

জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং যুবসমাজের মাঝে যাতে কিডনি রোগ প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত খেলাধুলা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড, অলসতার প্রবণতা থেকে মুক্ত করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও লেখক শাহ সানাউল হক, বিশিষ্ট লেখক, রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের, সদস্যসচিব সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহাদ হাসান চৌধুরী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, ক্যাম্পস–এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন, সাংবাদিক আশরাফ আলী। চিকিৎসাসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন রোগী মিজানুর রহমান খান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক পর য য় চ ক ৎসক এই র গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ

ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির আওতায় সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এটি বিকেল ৪টার দিকে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

আরো পড়ুন:

লাল-সবুজের জার্সিতে খেলবেন সামিত, জানিয়ে দিলেন আনুষ্ঠানিক সম্মতি

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: বেনাপোল বন্দর থেকে ফেরত গেছে ৪ ট্রাক

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, হেফাজতে ইসলাম, আহলে হাদীস, হাইয়াতুল উলইয়া, বেফাকুল মাদারিস, দারুন্নাজাত মাদরাসা, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলনের নেতারা অংশ নেন। 

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামারা।

ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে শনিবার (১২ এপ্রিল) ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। ফিলিস্তিনের পতাকা ও ফিলিস্তিনের মুক্তির স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ যেন এক টুকরো ফিলিস্তিন! নারী-পুরুষ-শিশুদের পদচারণায় সোহরাওয়াদী উদ্যানসহ এর আশপাশের এলাকায় তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। 

সকাল থেকে রাজধানীর শনিরআখড়া-যাত্রবাড়ী রুট, টঙ্গী, উত্তরা, কেরাণীগঞ্জ, গাবতলী, শ্যামলী দিয়ে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে এবং মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় আসতে শুরু করেন লাখো মানুষ। দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর মোড় থেকে নারী-পুরুষের স্রোত যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে।

মিছিলের সম্মুখে কাপড়ে মোড়ানো কয়েকটি লাশের প্রতিকৃতি নিয়ে তারা সোহরাওয়ার্দীর অভিমুখে যাচ্ছিলেন। সে সময় তাদের ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন; ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলের পণ্য, বয়কট বয়কট; ট্রাম্পের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে; ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, ইসরাইলের আস্তানা; নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবরসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাজধানীর শাহবাগে যেন জনসমুদ্র। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত গোটা শাহবাগ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ