সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিলুপ্তপ্রায় গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। 

বাংলাদেশের ২৬১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে গোটালি (বৈজ্ঞানিক নাম Crossochelius latius)) একটি গুরুত্বপূর্ণ সুস্বাদু ছোট মাছ। মাছটি অঞ্চলভেদে কালাবাটা নামেও পরিচিত। 

মিঠাপানির জলাশয়, বিশেষ করে পাহাড়ি ঝর্ণা ও অগভীর স্বচ্ছ নদী গোটালি মাছের আবাসস্থল। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, আত্রাই ছাড়াও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, কংস, সিলেটের পিয়াইন, পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে একসময় মাছটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। 

জলাশয় দূষণ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদীতে বানা ও কারেন্ট জালের ব্যবহার, খরা মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এবং নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরাসহ নানা কারণে বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় দিন দিন অন্যান্য দেশীয় ছোট মাছের মতো গোটালি মাছের প্রাপ্যতাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। 

আইইউসিএন (২০১৫) এর তথ্য অনুযায়ী, গোটালি মাছ এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, সৈয়দপুরের বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালে তিস্তা নদীর তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে মাছটি সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের গবেষণা পুকুরে অভ্যস্তকরণ ও কৃত্রিম প্রজননের জন্য গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করেন। 

২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গোটালি মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়। গবেষণায় নেতৃত্বে দেন প্রধান বৈজ্ঞানিক র্কমকর্তা ড.

আজহার আলী। গবেষকদলে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. সোনিয়া শারমীন, মালিহা হোসেন মৌ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা। 

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ মাছের পোনা উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় মাছটি চাষের আওতায় চলে আসবে; যা উত্তর জনপদে তথা দেশের মৎস্য খাতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে এবং মাছটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ত র ম প রজনন

এছাড়াও পড়ুন:

সাংহাইয়ের জলাভূমিতে বিরল ডালমেশিয়ান পেলিকানের ফিরে আসা

বিশ্বের বৃহত্তম জলচর পাখি ডালমেশিয়ান পেলিকান, যা পূর্ব এশিয়ায় অত্যন্ত বিরল। মানুষের শিকার ও আবাসস্থল সংকটের কারণে এরা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে সম্প্রতি সাংহাইয়ের একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগারে দেখা গেছে ২৬টি ডালমেশিয়ান পেলিকান, যা এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির ইঙ্গিত।

ডালমেশিয়ান পেলিকান ‘পেলিকান’ প্রজাতির বৃহত্তম সদস্য। এটি চীনের প্রথম শ্রেণির জাতীয় সুরক্ষার তালিকাভুক্ত। সাধারণত, এর দৈর্ঘ্য ১.৬ থেকে ১.৮ মিটার এবং ওজন ১০ কেজির বেশি হয়। পূর্ণবয়স্ক পাখির ডানার বিস্তার ৩ মিটারেরও বেশি এবং ওজন হতে পারে ১৫ কেজি পর্যন্ত।

বড় ঠোঁটের জন্য পেলিকান সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হলেও পূর্ব এশিয়ায় ডালমেশিয়ান পেলিকানের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এরা মূলত পশ্চিম মঙ্গোলিয়ায় প্রজনন করে এবং শীতকালে চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে চলে আসে।

আরো পড়ুন:

বিরল প্রজাতির সোনালি ঈগল উদ্ধার

সান-এলেক্সের বিরল ভালোবাসা

ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লাইফ সায়েন্সেসের এভিয়ান ইকোলজির অধ্যাপক মা ছিচুন জানান, মঙ্গোলিয়ার প্রজনন এলাকায় মানুষের শিকার ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে এদের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে, যা এদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

সম্প্রতি, সাংহাইয়ের চিওতানশা ওয়েটল্যান্ড ন্যাচার রিজার্ভে ২৬টি বিরল ডালমেশিয়ান পেলিকান দেখা গেছে। এটি শহরের পরিবেশ সংরক্ষণ ও বাস্তুসংস্থান উন্নয়নের ইতিবাচক ফলাফল।

জানুয়ারিতে পৃথক দুটি পর্যবেক্ষণে ১৭টি পেলিকান শনাক্ত করা হয়, যা এ অঞ্চলে এদের পুনরাবির্ভাবের ইঙ্গিত দেয়। এর আগে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এখানে মাত্র একটি পেলিকান দেখা গিয়েছিল।

সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের কর্মকর্তা চৌ তাওই জানান, ডালমেশিয়ান পেলিকান সাধারণত হ্রদ, নদী, জলাভূমি ও উপকূলীয় এলাকায় বাস করে। বিশেষ করে, যেখানে মানুষের হস্তক্ষেপ কম এবং বাস্তুসংস্থান সমৃদ্ধ, অর্থাৎ যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, কাঁকড়া, শামুক ও ব্যাঙ পাওয়া যায়।

চিওতানশা ওয়েটল্যান্ড ন্যাচার রিজার্ভটি ইয়াংজি নদী ও পশ্চিম চীন সাগরের মিলনস্থলে অবস্থিত। এই জনবসতিহীন অঞ্চলে মানুষের হস্তক্ষেপ নেই বললেই চলে, যা পাখিদের জন্য আদর্শ আশ্রয়স্থল।

২০২৩ সালের জুনে সংরক্ষণাগারটি ৬৩ প্রজাতির উচ্চতর উদ্ভিদ, ১২৬ প্রজাতির ম্যাক্রোফৌনা এবং ১৩৫ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত হয়। এছাড়াও আশেপাশের জলাভূমিতে ২৩৬ প্রজাতির পাখি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি প্রজাতি চীনের প্রথম শ্রেণির জাতীয় সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত এবং ৪১টি প্রজাতি দ্বিতীয় শ্রেণির সুরক্ষার আওতায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংহাই জলাভূমি সংরক্ষণে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চীনের হলুদ সাগর-বোহাই উপসাগরের উপকূলীয় শহর চংমিং তোংতান বার্ড ন্যাচার রিজার্ভ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে সেখানে ১৮টি ডালমেশিয়ান পেলিকান পর্যবেক্ষণ করা হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে সাংহাই জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা চালু করে। এর আওতায় ছয়টি মূল ক্ষেত্রের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়— সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার, ব্যবস্থাপনা, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ, জনসাধারণের সম্পৃক্ততা এবং টেকসই ব্যবহার।

সাংহাইয়ের এই প্রচেষ্টা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং ডালমেশিয়ান পেলিকানের মতো বিরল প্রজাতির পুনরাবির্ভাবের মাধ্যমে এর ইতিবাচক ফলাফল স্পষ্ট হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: সিসিটিভি

ঢাকা/হাসান/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সফলতার দিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন আলোচনা
  • আইপিএলের সময়ে সিরিজ, পাকিস্তানের বিপক্ষে কাদের নিয়ে খেলতে নামছে নিউজিল্যান্ড
  • নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কি কেবল বলেই যাব, কিছুই করব না আমরা
  • সাংহাইয়ের জলাভূমিতে বিরল ডালমেশিয়ান পেলিকানের ফিরে আসা
  • বুয়েট ও কুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি ও পড়ালেখা অনিশ্চিত শান্ত বিশ্বাসের
  • প্রথমবার এসেই মেয়েদের প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন শেল্‌টেক্‌