সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আল মিজান মাহিনকে বহিষ্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

‘জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী’ রুবেল মিয়ার ওপর ৯ মার্চ (রোববার) বিকেলে রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ হামলা হয় বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আল মিজান।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাইদুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আল মিজান মাহিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট শাখার আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশী হলেও সদস্যসচিব পদ পেয়েছিলেন। এই ক্ষোভ থেকে ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ান। এ নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের বিভিন্ন হুমকি দেন। এমনকি তিনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নিয়েও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব নিয়ে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা রুবেল মিয়া প্রতিবাদ করায় ৯ মার্চ বিকেলে রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে রুবেলের ওপর হামলা করেন মাহিন ও তাঁর সহযোগীরা। রুবেলের মাথায় ও ঘাড়ে কিল–ঘুষি মেরে তাঁকে আহত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় সোমবার (১০ মার্চ) রাজারহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখায়ও তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এর আগেও মাহিন বিভিন্ন অরাজকতা করলে তাঁর সহকর্মী আরিফুল প্রতিবাদ জানান। এ কারণে আরিফুলকে মারধর করেন মাহিন। এ নিয়ে থানায় মামলা হয়। দায়িত্বশীলরা মাহিনকে বহিষ্কার করেন। পরবর্তী সময়ে মাহিন নিজের প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব জিসান ইসলাম, হামলার শিকার রুবেল মিয়া, শিক্ষার্থী আসিফ মিয়া, রাকিবুল হাসানসহ অন্য শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আল মিজান মাহিন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় রুবেল মিয়ার পোস্ট নিয়ে কথা–কাটাকাটি হলেও কোনো প্রকার সংঘাত হয়নি। তিনি এটিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর রেশ ধরে মাহিনের বাড়িতেও তাঁরা হামলা হয়েছেন। যা রাজারহাট থানার ওসি ও ইউএনও অবগত আছেন। বিষয়টি জেলা কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটি অবগত রয়েছে।

এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুল আজিজ বলেন, ‘মাহিনের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের তদন্ত সেল তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সদস যসচ ব আল ম জ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলনের সময় জাতিসংঘের কোনো বার্তা পায়নি সেনাবাহিনী: আইএসপিআর

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে দমন–পীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে ‘সতর্ক’ করেছিলেন বলে কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। তবে হাইকমিশনার থেকে এ বিষয়ক কোনো ইঙ্গিত কিংবা বার্তা সম্পর্কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবগত নয়।

সোমবার (১০ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।  

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘হার্ডটক’-এ গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের মন্তব্য নিয়ে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবাধিকারের তাৎপর্য যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে এবং যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে, তবে অধিকতর সঠিকতা ও স্বচ্ছতার উদ্দেশ্যে উক্ত মন্তব্যের কিছু বিষয়ে স্পষ্টকরণ প্রয়োজন বলে মনে করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার থেকে এ বিষয়ক কোনো ইঙ্গিত কিংবা বার্তা সম্পর্কে অবগত নয়। যদি এ সংক্রান্ত কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়ে থাকে, তবে তা তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়ে থাকতে পারে, সেনাবাহিনীকে নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করে এবং সর্বদা আইনের শাসন ও মানবাধিকার নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে, মি. ভলকার তুর্কর মন্তব্য কিছু মহলের মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি এবং এর পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

নিরপেক্ষতা ও সততার মহান ঐতিহ্য ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অতীতের ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষত ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনো জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেনি। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময়ও সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং কোনো পক্ষপাত বা বাহ্যিক প্রভাব ছাড়াই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তির বর্ণনা অনুযায়ী, বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্জিত আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ শান্তিরক্ষীরা পেয়ে থাকেন এবং এর সিংহভাগ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যার পরিমাণ গত ২৩ বছরে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করে এবং দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেনাবাহিনীর ভূমিকা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে উদ্বেগ অথবা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে তা গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে ফলপ্রসূভাবে সমাধান করা সম্ভব বলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মনে করে।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্দোলনের সময় জাতিসংঘের কোনো বার্তা পায়নি সেনাবাহিনী: আইএসপিআর