Prothomalo:
2025-03-12@05:36:07 GMT

সামুদ জাতির উট হত্যা

Published: 11th, March 2025 GMT

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা হিজর ও সুরা নাহল তিলাওয়াত করা হবে। পড়া হবে ১৪তম পারা। এই অংশে খুঁটিহীন আকাশ নির্মাণ, আসমানে হরেক রকম গ্রহ-নক্ষত্র, আসমানের সুরক্ষা, জমিন, জমিনের পেটে পাহাড় আর সব ধরনের বৃক্ষ, লতাগুল্ম, বন, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ, মানুষের জীবিকার উপকরণ, অবারিত বাতাস, উড়ে বেড়ানো মেঘমালা, পানি পানে সৃষ্টির তৃষ্ণা মেটানো, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে জীবন-মৃত্যু, তাঁর কুদরত ও একত্ববাদ, বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, পশুপাখির জীবনাচরণে মানুষের শিক্ষা, কন্যাসন্তান আল্লাহর নিয়ামত, মানুষ সৃষ্টির ইতিকথা, জান্নাত-জাহান্নাম, বিশ্বাসের দৃঢ়তা, কিয়ামত দিবসে কাফেরদের আফসোস, শয়তানের ধোঁকা, আল্লাহর নিয়ামত ভুলে যাওয়া, ইবরাহিম (আ.

)-এর সন্তান লাভ, লুত (আ.) ও তাঁর জনপদের কাহিনি এবং কাফেরদের প্রশ্নের খণ্ডনসহ অনেক কথার বিবরণ রয়েছে।

আরও পড়ুনএক শ বছর পর জীবিত১৮ মার্চ ২০২৪সামুদ জাতির উট হত্যা

৯৯ আয়াতবিশিষ্ট সুরা হিজর মক্কায় অবতীর্ণ। কোরআন কারিমের ১৫তম সুরা এটি। এ সুরায় হিজরবাসীদের কথা আলোচনা হওয়ায় সুরার নাম হিজর রাখা হয়েছে।

 হিজাজ ও সিরিয়ার মধ্যস্থলে ‘ওয়াদিউল কোরা’ প্রান্তরে তাদের বসতি ছিল। বর্তমানে তা ‘ফাজ্জুহ নাকাহ’ নামে প্রসিদ্ধ। তারা ছিল অর্থশালী ও শক্তিশালী। তারা বড় বড় প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে দালানকোঠা নির্মাণ করত। তাদের ছিল সবুজ-শ্যামল উদ্যান। সোনা-রুপার প্রাচুর্যে মোড়ানো জীবন। কিন্তু তারা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। তাদের কাছে নবী হয়ে এলেন সালেহ (আ.)। তিনি তাদের আল্লাহর পথে ডাকলেন। দুর্বল ও নগণ্য গুটিকয়জন ছাড়া কেউ তাঁর ডাকে সাড়া দিল না। তারা তাদের প্রাসাদ, অর্থবৈভব ও বিলাসসামগ্রী নিয়ে গর্ব-অহংকার করতে লাগল। তারা সালেহ (আ.)-এর কাছে নবী হওয়ার দলিল চাইল। তারা দাবি করল, আপনি যদি বাস্তবিকই আল্লাহর রাসুল হন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে দেখান।

সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী উট বেরিয়ে এল পাথরময় পাহাড় থেকে। এ বিস্ময়কর মোজেজা দেখে কিছু লোক তৎক্ষণাৎ ইমান আনলেও অনেকে বিরত থাকল। এই উট হত্যা করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তারা অবাধ্য হয় এবং উটটি হত্যা করে।

 এক শনিবার প্রভাতের সময় গগনবিদারী গর্জন, মুহুর্মুহু বিজলির চমক আর ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাদের প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল। তারা নিজ নিজ ঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল সামুদ জাতি। এ সুরার ৮০ থেকে ৮৪ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে।

আরও পড়ুনবাদশাহ ও এক বুদ্ধিমান বালকের ঘটনা১১ মার্চ ২০২৪জাহান্নামের ৭ দরজা

সুরা হিজরের ৪৩ নম্বর আয়াতে জাহান্নামের সাতটি দরজার কথা উল্লেখ হয়েছে। তাফসিরের বিভিন্ন কিতাবে সে নাম পাওয়া যায়। যেমন: ১. জাহান্নাম (আগুনের গর্ত), ২. সায়ির (উজ্জ্বল অগ্নি), ৩. জাহিম (জ্বলন্ত আগুন), ৪. হুতামা (চূর্ণবিচূর্ণকারী), ৫. হাবিয়া (অতল গহ্বর), ৬. লাজা (অতি উত্তপ্ত) এবং ৭. সাকার (যা ঝলসিয়ে ও গলিয়ে দেয়)।

 ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমান ও কওমে লুতের কাহিনি

সুরা হিজরের ৫৫ থেকে ৭৪ নম্বর আয়াতে ইবরাহিমের কাছে মেহমানের বেশে ফেরেশতাদের আগমন, তাঁকে সন্তানের সুসংবাদ প্রদান ও তাদের সঙ্গে লুত (আ.)-এর জাতির আচরণ এবং তাদের ধ্বংসের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স তখন ১২০ বছর। তাঁর স্ত্রীরও বেশ বয়স সে সময়। দুজন ফেরেশতা এলেন তাঁর কাছে মানুষের বেশে। পুত্রসন্তানের সুখবর দিলেন। আনন্দিত হলেন ইবরাহিম। তাঁদের মেহমানদারি করলেন।

 নবীর থেকে বিদায় নিয়ে তাঁরা গেলেন লুত (আ.)-এর কাছে। তাঁর জাতির লোকেরা সুন্দর যুবক দুজনকে দেখে কু-বাসনার কল্পনায় আনন্দ-উল্লাস করতে লাগল। লুত (আ.) তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। কন্যাদের কথা বললেন। আল্লাহর ভয় দেখালেন। কাজ হলো না। তিনি আল্লাহর আদেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহর ছাড়লেন। আল্লাহ তাদের জনপদ উল্টে দিলেন। তাদের ওপর বর্ষণ করলেন কঙ্করের প্রস্তর।

আরও পড়ুনঅবাধ্যতার শাস্তি১৩ মার্চ ২০২৪সুরা নাহলে মৌমাছির জীবন

কোরআন মজিদের ১৬তম সুরা নাহল মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াতের সংখ্যা ১২৮। নাহল অর্থ মৌমাছি। মৌমাছির জীবনচক্র ও মধুর আলোচনা রয়েছে এ সুরায়, ফলে নাম রাখা হয়েছে সুরা নাহল।

এই সুরার ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিতে এ নির্দেশ দিয়েছেন, ঘর তৈরি করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে ঘর নির্মাণ করে তাতে। এরপর প্রতিটি ফল থেকে কিছু কিছু আহার করো আর তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য যে পথ সহজ করে দিয়েছেন, সে পথ অনুসরণ করো। এর উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়। যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।’

আল্লাহর বিস্ময়কর ও অপূর্ব সৃষ্টি মৌমাছি। মৌমাছি সাধারণ মাছির মতোই আকৃতিতে ছোট। মৌমাছির দিকে তাকালে বিস্ময় না হয়ে পারা যায়। মৌমাছির সুশৃঙ্খল সংঘবদ্ধ জীবন, দক্ষ নেতৃত্ব, একনিষ্ঠ আনুগত্য, কর্মদক্ষতা, উদ্যমী মনোভাব, চাক বানানো, বনবনানি ও ফসলি খেত থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে মধু সংগ্রহসহ সবকিছুই মুগ্ধ হওয়ার মতোই ব্যাপার। তাদের তৈরিকৃত বাসায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কক্ষ থাকে, যেগুলো মধু সংগ্রহের পর তা রাখার জন্য স্টোররুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য থাকার আলাদা ঘর আছে। আছে ময়লার রাখার গুদামঘর। (তাইসিরুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৬৫)

আরও পড়ুনগাভির গল্প১৭ মার্চ ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.) মধু পছন্দ করতেন। মধু অসংখ্য রোগের ওষুধ। এটি বেহেশতের পানীয় বিশেষ। মহানবী (সা.) মধু খেতে খুব ভালোবাসতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, ১২১)

আদেশ ও নিষেধ নিয়ে ৬ নির্দেশ

সুরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিনটি বিষয়ের আদেশ এবং তিনটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন। আদেশ তিনটি হলো ন্যায়পরায়ণতা, সদাচার ও নিকটাত্মীয়দের সহায়তা প্রদান। নিষেধ তিনটি হলো অশ্লীল কাজ, অসংগত কাজ ও সীমা লঙ্ঘনমূলক কাজ।

রায়হান রাশেদ: আলেম ও লেখক

আরও পড়ুনহাতির গল্প১৬ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইবর হ ম র আয় ত র জন য আল ল হ করল ন ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

পর পর ৩ ডাকাতি, ‘আতঙ্কের জনপদ’ যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়

যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ের ঢাকা-রংপুর-রাজশাহী মহাসড়কে আবারও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কামারখন্দ উপজেলার ‘কোনাবাড়ী এলাকার ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে’র সামনে রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ‘জামায়াতপন্থি একদল শিক্ষক বহনকারী’ মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাত দল আচমকা ইট-পাটকেল ছুড়ে মাইক্রোবাসের গতি রোধ করে। গাড়িটি থামলে ৮-১০ জনের একদল ডাকাত শিক্ষকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। ভয় দেখিয়ে নগদ প্রায় ৬০ হাজার টাকা ও সাতটি মোবাইল ও দুটি পরিধেয় কোর্ট লুট করে পালিয়ে যায়। 

গত এক মাসে এই মহাসড়কে আরও দুটি যাত্রীবাহী প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এক মাসের ব্যবধানে পর পর তিনটি ডাকাতির ঘটনায় যাত্রী-চালকদের কাছে ‘আতঙ্কের জনপদ’ বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ের মহাসড়ক। 

পুলিশ বলছে, কামারখন্দ উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকায় সাসেক-২ প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার সম্প্রসারণ কাজ চলছে। ফলে সেখান দিয়ে চলাচলকারী ঢাকা-উত্তরাঞ্চগামী যানবহন ধীরগতিতে চলে। এ সুযোগে ডাকাতরা ছোট ছোট মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে সহজেই ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। 

এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সয়দাবাদ থেকে নলকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় মহাসড়কের দুপাশে  ভুট্টা, আঁখ ও ফসলের ক্ষেত থাকায় বিশেষ করে রাতে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সেতুর টহল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ডাকাতদল প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসে ডাকাতি করে সহজে পালিয়ে যায়।

ডাকাতি হওয়া শিক্ষক বহনকারী মাইক্রোবাসের চালক রাজশাহীর আশেক আল রহমান সমকালকে বলেন, রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাইক্রোবাসে করে কামারখন্দ উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকার ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পার হচ্ছিলাম। এ সময় ডাকাত দল আচমকা ইট-পাটকেল ছুড়ে আমাদের মাইক্রোবাসের গতি রোধ করা হয়। গাড়িটি থামলে ৮-১০ জনের একদল ডাকাত অস্ত্রের মুখে আমাদের জিম্মি করে। ভয় দেখিয়ে নগদ প্রায় ৬০ হাজার টাকা ও সাতটি মোবাইল ও দুটি পরিধেয় কোর্ট লুট করে পালিয়ে যায়। 

তিনি আরও বলেন, সেখানে আরও কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। সেই আতঙ্কের মধ্যেই আবার ডাকাতির কবলে পড়লাম।

বঙ্গবন্ধু পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনারুল ইসলাম সোমবার ভোরে জানান, ‘একদল শিক্ষক সেতুর পশ্চিমপাড়ের কোনাবাড়িতে রোববার রাতে ডাকাতির কবলে পড়েন। এ ঘটনায় রাতেই মামলা হলেও অপরাধীদের চিহ্নিত বা লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’

ওসি আরও জানান, টহল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত এক মাসের ব্যবধানে পশ্চিম পাড়ের মহাসড়কে পরপর তিনটি ডাকাতের ঘটনা ঘটেছে। কোন ডাকাতির ঘটনায় অপরাধীদের ধরা এখনো সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর পর ৩ ডাকাতি, ‘আতঙ্কের জনপদ’ যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়