আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা হিজর ও সুরা নাহল তিলাওয়াত করা হবে। পড়া হবে ১৪তম পারা। এই অংশে খুঁটিহীন আকাশ নির্মাণ, আসমানে হরেক রকম গ্রহ-নক্ষত্র, আসমানের সুরক্ষা, জমিন, জমিনের পেটে পাহাড় আর সব ধরনের বৃক্ষ, লতাগুল্ম, বন, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ, মানুষের জীবিকার উপকরণ, অবারিত বাতাস, উড়ে বেড়ানো মেঘমালা, পানি পানে সৃষ্টির তৃষ্ণা মেটানো, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে জীবন-মৃত্যু, তাঁর কুদরত ও একত্ববাদ, বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, পশুপাখির জীবনাচরণে মানুষের শিক্ষা, কন্যাসন্তান আল্লাহর নিয়ামত, মানুষ সৃষ্টির ইতিকথা, জান্নাত-জাহান্নাম, বিশ্বাসের দৃঢ়তা, কিয়ামত দিবসে কাফেরদের আফসোস, শয়তানের ধোঁকা, আল্লাহর নিয়ামত ভুলে যাওয়া, ইবরাহিম (আ.
৯৯ আয়াতবিশিষ্ট সুরা হিজর মক্কায় অবতীর্ণ। কোরআন কারিমের ১৫তম সুরা এটি। এ সুরায় হিজরবাসীদের কথা আলোচনা হওয়ায় সুরার নাম হিজর রাখা হয়েছে।
হিজাজ ও সিরিয়ার মধ্যস্থলে ‘ওয়াদিউল কোরা’ প্রান্তরে তাদের বসতি ছিল। বর্তমানে তা ‘ফাজ্জুহ নাকাহ’ নামে প্রসিদ্ধ। তারা ছিল অর্থশালী ও শক্তিশালী। তারা বড় বড় প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে দালানকোঠা নির্মাণ করত। তাদের ছিল সবুজ-শ্যামল উদ্যান। সোনা-রুপার প্রাচুর্যে মোড়ানো জীবন। কিন্তু তারা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। তাদের কাছে নবী হয়ে এলেন সালেহ (আ.)। তিনি তাদের আল্লাহর পথে ডাকলেন। দুর্বল ও নগণ্য গুটিকয়জন ছাড়া কেউ তাঁর ডাকে সাড়া দিল না। তারা তাদের প্রাসাদ, অর্থবৈভব ও বিলাসসামগ্রী নিয়ে গর্ব-অহংকার করতে লাগল। তারা সালেহ (আ.)-এর কাছে নবী হওয়ার দলিল চাইল। তারা দাবি করল, আপনি যদি বাস্তবিকই আল্লাহর রাসুল হন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে দেখান।
সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী উট বেরিয়ে এল পাথরময় পাহাড় থেকে। এ বিস্ময়কর মোজেজা দেখে কিছু লোক তৎক্ষণাৎ ইমান আনলেও অনেকে বিরত থাকল। এই উট হত্যা করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তারা অবাধ্য হয় এবং উটটি হত্যা করে।
এক শনিবার প্রভাতের সময় গগনবিদারী গর্জন, মুহুর্মুহু বিজলির চমক আর ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাদের প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল। তারা নিজ নিজ ঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল সামুদ জাতি। এ সুরার ৮০ থেকে ৮৪ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে।
আরও পড়ুনবাদশাহ ও এক বুদ্ধিমান বালকের ঘটনা১১ মার্চ ২০২৪জাহান্নামের ৭ দরজাসুরা হিজরের ৪৩ নম্বর আয়াতে জাহান্নামের সাতটি দরজার কথা উল্লেখ হয়েছে। তাফসিরের বিভিন্ন কিতাবে সে নাম পাওয়া যায়। যেমন: ১. জাহান্নাম (আগুনের গর্ত), ২. সায়ির (উজ্জ্বল অগ্নি), ৩. জাহিম (জ্বলন্ত আগুন), ৪. হুতামা (চূর্ণবিচূর্ণকারী), ৫. হাবিয়া (অতল গহ্বর), ৬. লাজা (অতি উত্তপ্ত) এবং ৭. সাকার (যা ঝলসিয়ে ও গলিয়ে দেয়)।
ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমান ও কওমে লুতের কাহিনি
সুরা হিজরের ৫৫ থেকে ৭৪ নম্বর আয়াতে ইবরাহিমের কাছে মেহমানের বেশে ফেরেশতাদের আগমন, তাঁকে সন্তানের সুসংবাদ প্রদান ও তাদের সঙ্গে লুত (আ.)-এর জাতির আচরণ এবং তাদের ধ্বংসের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স তখন ১২০ বছর। তাঁর স্ত্রীরও বেশ বয়স সে সময়। দুজন ফেরেশতা এলেন তাঁর কাছে মানুষের বেশে। পুত্রসন্তানের সুখবর দিলেন। আনন্দিত হলেন ইবরাহিম। তাঁদের মেহমানদারি করলেন।
নবীর থেকে বিদায় নিয়ে তাঁরা গেলেন লুত (আ.)-এর কাছে। তাঁর জাতির লোকেরা সুন্দর যুবক দুজনকে দেখে কু-বাসনার কল্পনায় আনন্দ-উল্লাস করতে লাগল। লুত (আ.) তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। কন্যাদের কথা বললেন। আল্লাহর ভয় দেখালেন। কাজ হলো না। তিনি আল্লাহর আদেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহর ছাড়লেন। আল্লাহ তাদের জনপদ উল্টে দিলেন। তাদের ওপর বর্ষণ করলেন কঙ্করের প্রস্তর।
আরও পড়ুনঅবাধ্যতার শাস্তি১৩ মার্চ ২০২৪সুরা নাহলে মৌমাছির জীবনকোরআন মজিদের ১৬তম সুরা নাহল মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াতের সংখ্যা ১২৮। নাহল অর্থ মৌমাছি। মৌমাছির জীবনচক্র ও মধুর আলোচনা রয়েছে এ সুরায়, ফলে নাম রাখা হয়েছে সুরা নাহল।
এই সুরার ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিতে এ নির্দেশ দিয়েছেন, ঘর তৈরি করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে ঘর নির্মাণ করে তাতে। এরপর প্রতিটি ফল থেকে কিছু কিছু আহার করো আর তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য যে পথ সহজ করে দিয়েছেন, সে পথ অনুসরণ করো। এর উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়। যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।’
আল্লাহর বিস্ময়কর ও অপূর্ব সৃষ্টি মৌমাছি। মৌমাছি সাধারণ মাছির মতোই আকৃতিতে ছোট। মৌমাছির দিকে তাকালে বিস্ময় না হয়ে পারা যায়। মৌমাছির সুশৃঙ্খল সংঘবদ্ধ জীবন, দক্ষ নেতৃত্ব, একনিষ্ঠ আনুগত্য, কর্মদক্ষতা, উদ্যমী মনোভাব, চাক বানানো, বনবনানি ও ফসলি খেত থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে মধু সংগ্রহসহ সবকিছুই মুগ্ধ হওয়ার মতোই ব্যাপার। তাদের তৈরিকৃত বাসায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কক্ষ থাকে, যেগুলো মধু সংগ্রহের পর তা রাখার জন্য স্টোররুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য থাকার আলাদা ঘর আছে। আছে ময়লার রাখার গুদামঘর। (তাইসিরুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৬৫)
আরও পড়ুনগাভির গল্প১৭ মার্চ ২০২৪রাসুলুল্লাহ (সা.) মধু পছন্দ করতেন। মধু অসংখ্য রোগের ওষুধ। এটি বেহেশতের পানীয় বিশেষ। মহানবী (সা.) মধু খেতে খুব ভালোবাসতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, ১২১)
আদেশ ও নিষেধ নিয়ে ৬ নির্দেশ
সুরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিনটি বিষয়ের আদেশ এবং তিনটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন। আদেশ তিনটি হলো ন্যায়পরায়ণতা, সদাচার ও নিকটাত্মীয়দের সহায়তা প্রদান। নিষেধ তিনটি হলো অশ্লীল কাজ, অসংগত কাজ ও সীমা লঙ্ঘনমূলক কাজ।
রায়হান রাশেদ: আলেম ও লেখক
আরও পড়ুনহাতির গল্প১৬ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইবর হ ম র আয় ত র জন য আল ল হ করল ন ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরায় ৩০ বিঘা খাস জমি উদ্ধার
সাতক্ষীরার আলিপুরে আব্দুস সবুর ও তার ভাই আব্দুর রউফের দখলে থাকা প্রায় ৩০ বিঘা সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় জমি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খাস জমি দখল মুক্ত করণে টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এতথ্য জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ।
সভায় জানানো হয়, ভূমিদস্যুদের দখলে যে সমস্ত খাস জমি রয়েছে সেগুলো উদ্ধারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খাস জমি উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদের আওতাধীন জেলার বিভিন্ন স্থানে যে সমস্ত খাস জমি অবৈধভাবে দখলে রয়েছে সেগুলো স্ব স্ব বিভাগকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে ওইসব জমি উদ্ধার করা হবে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “গত দুইদিনে সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নে আব্দুস সবুর ও তার ভাই আব্দুর রউফের দখলে থাকা প্রায় ৩০ বিঘা (৯.৬৮ একর) সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যা সড়ক ও জনপদ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা। এসব খাস জমি অবৈধভাবে ভরাট করে ট্রাক টার্মিনালসহ স্থাপনা ও জল মহল করা হয়েছিল। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় অবৈধ স্থাপনাগুলো ইতিমধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “সাতক্ষীরার এক খণ্ড সরকারি জমি যাতে ভূমিদস্যু ও জবরদখলকারীর হাতে না থাকে সে লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন- সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট লাবিব, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন, আরডিসি মো. পলাশ আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিশ কুমার সরকার, সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দীন আহেমদ, এলজিইডির নির্বাহী প্রেকৌশলী কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ