‘অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর, গাজার মতো অবস্থা’
Published: 11th, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর, গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এজন্য এলডিসি গ্রাজুয়েশন পুনঃবিবেচনা করতে পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পুনঃবিবেচনার জন্য একটি কমিটি হয়েছে।’’
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কী করবো, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সেদিকেই যাবো, তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।’’
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘‘এই দায়িত্ব পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমি হয়তো কিছু করতে পারবো। বাংলাদেশে এখন ক্রাইসিস চলছে।’’
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে গাজার মতো অবস্থা চলছে। সব খাতেই দুর্নীতি হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি ও ভঙ্গুরতা আমরা এর আগে কোনো দেশে দেখিনি। আমাদের জিডিপির গ্রোথে প্রভাব না পড়লেও অন্যান্য খাতে ভঙ্গুরতা আছে। এখানে লুকোচুরি কোনো বিষয় নেই।
দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আপনারা কী কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি একটা বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই, সেটা হলো ভুয়া ডাটা বা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) যেতে চাচ্ছি। সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এটা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে। একই সাথে আমাদের অভ্যন্তরীণ যে রিসোর্সগুলো ভঙ্গুর হয়ে গেছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যে পরবর্তী বাজেট আসবে তার রিসোর্স কোথায়? আমাকে যদি আরো ঋণ নিতে হয়, তাহলে আরো চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। এই রিসোর্স মোবিলাইজ করা খুব সহজ না। তবে আমাদের উন্নতির মধ্যে শুধু আমাদের প্রত্যেকের আয় বেড়েছে। আমরা মধ্যম আয়ে চলে গেছি। সে অনুযায়ী আমাদের রাজস্ব বাড়ার কথা ছিলো, কিন্তু সেগুলো গেলো কোথায়? তাই মানুষকে ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত করতে হবে। আমি ট্যাক্স দেবো না, অথচ আশা করবো সরকার আমাকে সেবা দেবে।’’
এলডিসির জন্য যে সূচকগুলো ছিল, সেগুলো কি সবগুলোই ভুয়া? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী বলেন, ‘‘মনে করুন সব সঠিক, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি কী? আমরা যে বাজার সুবিধাটা পাই, সেটার ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। এখানে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। ২০১৮ সাল থেকে বলছি, আমরা এলডিসি থেকে বেড়িয়ে আসবো। আজকে ২০২৫ সাল, এই ৭ বছরে আমাদের একটা খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমলো না কেন?’’
তাহলে কি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত বা পুনঃমূল্যায়ন চাচ্ছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনও সেই সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে ব্যবসায়ী ও তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সাথে বসতে হবে। আমাদের পুনঃবিবেচনার জন্য কমিটি হয়েছে, দ্রুতই একটা সিদ্ধান্তে আসবো। তবে এখনই এটা বলতে পারবো না।’’
অনেক দিন ধরে দেখছি বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এবং অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ থেকে বুঝে নেবেন আপনারা দেশের অবস্থা কেমন। এই মুহূর্তে কি গাজায় কেউ বিনিয়োগ করবে? একটা আরেকটার সাথে লিংক।’’
‘‘এ ছাড়া আরেকটা কারণ হলো আপনারা বর্তমান সরকারকে বলছেন ইন্টার্নি। আমি যখন বিনিয়োগকারী হই, তখন আমি চিন্তা করবো একটা ইন্টার্নি সরকারের দেশে বিনিয়োগ করবো কী করবো না। মূলত রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক আছে। আমরা রাজনীতির চিন্তা করতে গিয়ে অর্থনীতির চিন্তা করিনি। আমরা একসাথে দুইটার চিন্তা করলে আজকে সব কিছুর চিন্তা করতে পারতাম।’’
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব বলে দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অনেকেই অফার করেছেন। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। যেসব স্থানে টাকা গিয়েছে তাতে সেসব দেশ উপকারভোগী।’’
তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আইন আছে যেহেতু তারা উপকারভোগী তাই সহজে তারা এটা ছাড়বে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাকে উনারাই অফার করছেন। এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য। আমরা অতি দ্রুত কাজ করছি। আশা করছি আমরা সফল হবো।’’
কারা অফার করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা বলা সম্ভব না। এগুলো বললে কাজে সমস্যা হবে। কিছুতো গোপনীয়তা মানতে হবে। যারা টাকা নিয়ে গেছে তারা তো বসে নেই। এজন্যই একটা গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এরমধ্যে যতটুকু বলা সম্ভব সেটুকুই বলছি। এর বেশি বললে আমাদের কাজটা বন্ধ হয়ে যাবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখানে আইনের ইস্যু আছে, প্রপার আইন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে মিল রেখে। আপনি ধরলেই তো টাকা ফেরত আনতে পারবেন না। এখানে কতগুলো মাধ্যম আছে। এসব বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাচ্ছি। বিশ্বব্যাংকসহ অনেকেই কাজ করছে।’’
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ জ র মত র অবস থ আম দ র র জন য সরক র এলড স
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ ট্রেন দেখে ‘হতবিহ্বল’ যুবদল নেতা রেললাইনে শুয়ে পড়েন, কাটা পড়ে মৃত্যু
নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় রেললাইনে বসে মুঠোফোনে কথা বলার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঘোড়াশাল পৌরসভার চামড়াব এলাকায় রেলক্রসিংসংলগ্ন স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম নোয়াব মিয়া (৪৮)। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চৌয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একই ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
রেলওয়ে পুলিশ ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে ঘোড়াশালের চামড়াব রেলক্রসিংসংলগ্ন এলাকায় রেললাইনে বসে নোয়াব মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর এগারোসিন্দুর ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। ওই ট্রেনে কাটা পড়েন নোয়াব। স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে পাওয়া তাঁর মানিব্যাগের ভেতর থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র খুঁজে পান। পরে নোয়াবের স্বজনদের খবর দিলে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের বিভিন্ন অংশ বাড়ি নিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের ভাষ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ জহুরুল ইসলাম বলেন, রেললাইনে বসে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন এক ব্যক্তি। ট্রেনটি খুব কাছাকাছি চলে আসার পর তিনি বিষয়টি খেয়াল করেন। হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। কী করতে হবে, বুঝতে না পেরে তিনি রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়েন। এর মধ্যেই তাঁর শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।