দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে প্রবাসীদের ভোট ব্যবস্থা চূড়ান্ত হবে: ইসি
Published: 11th, March 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন। তবে কোন পদ্ধতিতে তাদের ভোট নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে। সম্প্রতি কয়েক দফা বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টির আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.
তিনি বলেন, “গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নিশ্চিত করতে চাই। আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন করতে চাই। এই আলোকে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কমিটিকে দায়িত্ব প্রদান করে, যে একটা প্রস্তাব দেওয়ান জন্য বলে। ডাক বিভাগ, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হয় ও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবও বিশ্লেষণ করা হয়। আমরা দেখেছি চার ধরনের ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন। ৩৪ দেশে ৪৪টি মিশন অফিসে আমরা তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছিলাম। প্রবাসীদের সংখ্যা, মিশনগুলো সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট দেশে কী ব্যবস্থা রয়েছে। তারা অনলাইন ভোট, সশরীরের ভোট ও পোস্টাল ব্যালটে কথা বলেছে।”
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের বিপক্ষে না খেলে, আইপিএল খেলবেন স্যান্টনার-রাচিনরা
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেরা একাদশে ভারতের ৫, নিউ জিল্যান্ডের ৪, আফগানিস্তানের ২
তিনি বলেন, “পোস্টাল ব্যালট অচল ভোট ব্যবস্থা। গত সংসদ নির্বাচনে দেশের ভেতরে ৪৩৩টি ভোট হয়েছে। প্রবাসীরা কেউ ভোট দিতে পারেনি। কেন না, এতে ৪০ দিনের মতো লাগে। আর প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর সময় থাকে ১৫ দিনের মতো। আমাদের কমিটি তিনটি পদ্ধতি সুপারিশ করেছে৷ একটি হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং; তবে অনলাইন ভোটিং তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, আমরা চারটা দেশে দেখেছি। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিনস, এস্তোনিয়া এবং মেক্সিকো। পাশাপাশি আমাদের উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে পাইলটিং হিসেবে অনলাইন সিস্টেমে করছে। তারপর ইউএনডিপির সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। তারা বলেছে, এটা অনেকেই সফল হতে পারেনি। ফলে পূর্বের নিয়মে তারা ফিরে গেছে।”
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আরেকটি প্রস্তাব হলো প্রক্সি ভোট। অর্থাৎ একজন প্রবাসী বাংলাদেশির হয়ে কেউ একজন তার এলাকায় ভোটটা দিয়ে দেওয়া। আমাদের কমিটির কাছে বিষয় ছিল ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা; প্রোপার ট্রেইল, সাশ্রয়ী ও সর্বজনীন পদ্ধতি হতে হবে; যাতে করে সব ধরনের প্রবাসী ভোটটা দিতে পারেন। সব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতি ডেভেলপ করে ট্রায়ালের জন্য সাজেস্ট করেছে, যাতে করে টেস্ট করে দেখা যায় কোনটি বাস্তবায়নযোগ্য।পাশাপাশি তারা এটাও সাজেস্ট করেছে যদি আগামী নির্বাচনে সত্যিকার অর্থেই প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই তবে প্রক্সি ভোটিংয়ে যেতে হবে।বর্তমানে কয়েকটি দেশে বিভিন্ন পরিসরে প্রক্সি ভোটিং প্রচলিত আছে। তার মধ্যে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। আর ভারতে শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য এই ভোটিং সিস্টেম প্রচলিত।”
তিনি আরো বলেন, “প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির সুবিধা হলো, এটা প্রচলিত আছে, পাওয়ার অ্যাটর্নির মাধ্যমে তো জমিজমাও বিক্রি করে থাকি, তাহলে ভোটও তো অধিকার, যদি সেটাকে আমরা এভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তবে একটা ফলাফল আসবে। বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধীদের ভোট আরেকজন দিতে পারে, যদিও এটা প্রক্সি ভোটের সঙ্গে মেলানো যাবে না। তবে আমরা বলছি একটি সুযোগ রযেছে। এটাই খুব কম সময়ে রিয়েল টাইমে করা সম্ভব।”
এজন্য আগামী ৮ বা ৯ এপ্রিলের মধ্যে একটা কর্মশালা হবে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইএসটিকে সম্পৃক্ত করা হবে। এর বাইরেও কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সহায়তা করতে পারে, সংস্কার কমিশনের বিশেষজ্ঞকেও আমন্ত্রণ জানাব। নির্বাচন কমিশনের সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও এনজিওকেও আমন্ত্রণ জানাব।”
আবুল ফজল বলেন, “আমরা একটা সিস্টেম আর্কিটেকচার ডেভেলপ করতে চাই। এই তিন পদ্ধতির তিনটা। এরপর আমরা দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। এরপর যদি দেখি এইটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তখন সিস্টেম ডেভেলপমেন্টে যাব। পরে টেস্টিং ও অডিটিংয়ে যেতে হবে। এরপর আমাদের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। ফাইনালি ট্রায়াল রানে যাব। আমরা আশা করছি, যদিও এটা কন্ডিশনাল ব্যাপার, সব যদি করতে পারি প্রক্সি ভোটটা মোটামুটি পরিসরে আর বাকিগুলো ট্রায়াল বেসিসে বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আমাদের ধারণা।”
তিনি বলেন, “প্রবাসী ভোটার প্রকৃত তথ্য যদিও নেই। তবে যে ৪৪ মিশন থেকে আমরা তথ্য নিয়েছি সেখানে এক কোটি ৩২ লাখের মতো তথ্য রয়েছেন। যদি ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধরে নিই, তবে ভোটার তো এক কোটি। যাদের ভোটার তালিকায় নাম আছে তারাই কেবল প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন। এজন্য ৪০টি দেশে আমরা ভোটার কার্যক্রম চালাব, তবে আগামী নির্বাচনের আগে কতটুকু পারব জানি না। একটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্লোবালি একসেপ্টেড কোনো সিস্টেম আমাদের হাতে নেই। এরকম যদি থাকতো তাহলে সেটাই করতাম। এখন নতুন একটি সিস্টেম ডিভাইস করতে হচ্ছে। আশা করি সফল হব। নির্বাচন সংস্কার কমিশনও একটা পদ্ধতি সাজেস্ট করেছে। আশা করি কার্যকর পদ্ধতি বের করতে পারব। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষজ্ঞরাই আসলে বলতে পারবেন কতদিন লাগবে। তবে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আমরা বলতে পারব কত সময় লাগবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, “একজন ইনডিভিজ্যুয়াল ভোটারকে তার আস্থার ব্যক্তিকেই নির্বাচন করতে হবে। কেন না, তার প্রক্সি হবে সে যদি অন্য কাউকে ভোট দিয়ে দেয়। আমাদের আস্থার ঘাটতি, বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। তবে একজন ব্যক্তিকে অন্তত আস্থায় রাখতে হবে। প্রবাসী নিজেই পছন্দ করবেন কে তার ভোটটি দিয়ে দেবেন।”
ঢাকা/হাসান/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র স ট কর প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় চালকল মালিক সমিতির সভাপতির বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি
দেশের অন্যতম শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদের কুষ্টিয়া শহরের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে সীমানা প্রাচীরের বাইরে থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এসময় বাড়িতে উপস্থিত থাকা সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাবের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে কী কারণে এ গুলির ঘটনা তা এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের গোশালা রোডে অবস্থিত আব্দুর রশিদের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। বাড়িটি এখনো নির্মাণাধীন। পরিবারসহ আব্দুর রাশিদ ওই বাড়িতেই থাকতেন। ঘটনার সময় তিনি খাজানগরে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। বড় ছেলে ও পাহারাদার ঘটনার সময় বাড়ির ভেতরেই ছিলেন।
আব্দুর রশিদ বলেন, “ঘটনা জানতে পেরে আমি তাৎক্ষণিক বাড়িতে ফিরি। এরপর বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখতে পাই বেলা পৌনে দুইটার দিকে এক মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা দুইজন ব্যক্তি বাণী হলের দিক থেকে এসে বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। এরপর বাড়ি লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি চালিয়ে একই রাস্তা ধরা শহরের দিকে চলে যায়। এতে বাড়ির বাইরের কাচের গ্লাস ভেঙে যায়। বিষয়টি আমি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে জানিয়েছি।”
আব্দুর রশিদের ভাতিজা জিহাদুজ্জামান জিকু বলেন, “সম্প্রতি সদর উপজেলার আইলচারা হাট-বাজারের পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। আমি দরপত্রের শিডিউল কিনেছি। এরপর থেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু চাচা (আব্দুর রশিদ) আমাদের পরিবারের অভিভাবক। তার পরামর্শেই আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করি। সেই জায়গা থেকে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য আজকের এই ঘটনা ঘটাতে পারে। সদর থানা বিএনপির এক নেতা ও তার এক সহযোগী এই হাট নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছি।”
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশাররফ হোসেন বলেন, “গুলির ঘটনায় সিসি ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করব।”
প্রসঙ্গত, আব্দুর রশিদ দেশের অন্যতম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের মালিক। ঋণখেলাপির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের দায়ের করা মামলা চলমান রয়েছে। গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিকেলে প্রতারণা মামলায় কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস