পাবনার বেড়া উপজেলায় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এতিম শিশুদের জন্য ইফতারি ও রাতের খাবারের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’–এর নামে এবার নিয়ে পঞ্চম বছরের মতো এই আয়োজন করা হচ্ছে।

বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামে অবস্থিত হাটুরিয়া-জগন্নাথপুর বাজার কেন্দ্রীয় দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ৬০ থেকে ৬৫ এতিম শিশুকে পুরো রমজানে ইফতারি ও রাতের খাবার দেওয়া হয়।

২০১৬ সালে ঐতিহ্যবাহী সরকারি বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’টি গড়ে তোলে। তাঁরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শুরু করেন মানবকল্যাণমুখী নানা কর্মকাণ্ড। শুরুর দিকে তাঁরা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসংক্রান্ত সহায়তা দিতেন, সুস্থদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তাঁদের আন্তরিকতা দেখে অনেক সচ্ছল ও ধনী ব্যক্তি তাঁদের তহবিলে অর্থসহ নানা সামগ্রী দান করা শুরু করেন। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত আছেন বেড়া উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। তবে সংগঠনটির মূল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন প্রতিষ্ঠাকালের উদ্যোক্তারা। তাঁরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মেহরাব হোসেন এখন ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি ঢাকায় থাকলেও অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে এতিমখানাটির নানা দিক তিনি দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, সংগঠনের নামে তাঁদের একটি ফেজবুক পেজ আছে। রমজান মাসের কয়েক দিন আগে তাঁদের এই পেজে এতিমদের সহায়তার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে থাকে। এর পর থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো না কোনো দিনের ইফতারি ও রাতের খাবারের দায়িত্ব নিয়ে থাকে। এবারও ২৭ দিনের ইফতারি ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। বাকি তিন দিনের ব্যবস্থাও খুব শিগগির হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

এতিমখানা কর্তৃপক্ষ ও কয়েকজন শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইফতারে প্রতিদিন খেজুর, কলা, আপেল, আনারস, বিস্কুট, শরবত অথবা জুস, ছোলা, বুন্দিয়া, চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু ও নুডলস দেওয়া হয়। বেশির ভাগ দিন রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস ও ডাল দেওয়া হয়। বিশেষ বিশেষ দিনে গরুর মাংস ও মুরগির রোস্ট দেওয়া হয়।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও এতিমখানাটির তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা আসাদুল ইসলাম সিরাজী বলেন, এই মাদ্রাসাতে মোট ৮৫ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এসব শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই এতিম ও অতি দরিদ্র। মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে ৪০ এতিম শিশু থাকে। এ ছাড়া মাদ্রাসার আশেপাশে নিজেদের বাড়িতে থাকে বাকিরা। শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার ছাত্রবাসে থাকা ৪০ এতিম শিশু এবং আশেপাশে বসবাস করা ২০ থেকে ২৫ অতি দরিদ্র শিক্ষার্থী মিলিয়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ জনকে ইফতারি ও রাতের খাবার দেওয়া হয়।

পাঁচ বছর ধরে এতিম শিশুদের ইফতার ও রাতের খাবারের তত্ত্বাবধানে আছেন বিএ (সম্মান) শ্রেণির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। এতিমখানার পাশেই তাঁর বাড়ি। তিনি বলেন, ‘এতিম ও অতি দরিদ্র শিশুদের সামনে খাবার দিতে পেরে আমরা গর্বিত। তবে যেসব হৃদয়বান মানুষ বিশ্বাস করে আমাদের মাধ্যমে এসব এতিম ও দরিদ্রদের জন্য খাবার বা টাকা পাঠাচ্ছেন, তাঁদের আমরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এত ম শ শ সহয গ ত দর দ র স গঠন ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড়ে বর্ষবরণে শিশু-কিশোরদের ঘুড়ি উৎসব

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড়ে শিশু-কিশোরদের নিয়ে ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে সদর উপজেলার জগদল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই উৎসবের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ষড়ঋতু। 

উৎসবে প্রায় ২০০ শিশু-কিশোর অংশ নেয়। রং-বেরঙের ঘুড়ি ও নাটাই হাতে নিয়ে জগদল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আসেন তারা। প্রজাপতি, চিল, ঈগল ও মাছ আকৃতির ঘুড়ি আকাশে উড়ায় তারা। যার ঘুড়ি বেশি সময় আকাশে থেকেছে তাকে দেওয়া হয় পুরষ্কার। উৎসবকে আরো আনন্দময় করে তুলতে আয়োজন করা হয়েছিল লোকজ সঙ্গীতের। 

ঘুড়ি উৎসব ছাড়াও ষড়ঋতু সংগঠনটি বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করেছিল। এসব খেলা দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। 

আরো পড়ুন:

ডিআরইউতে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 

ষড়ঋতু সংগঠনটির সভাপতি রহিম আব্দুর রহিম বলেন, “আমাদের শৈশব কেটেছে ঘুড়ি উড়িয়ে। বারো মাস আমরা ঘুড়ি উড়াতাম। এখন শিশু-কিশোররা মোবাইলে আসক্ত। তাদের মধ্যে ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দ ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই আয়োজন। শিশু-কিশোররা দারুন উপভোগ করেছে এই ঘুড়ি উৎসব।” 

তিনি আরো বলেন, “ঘুড়ি উৎসব উদযাপন আবহমান গ্রামীণ বাংলার একটি ঐহিত্য। এ উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নিজেরাও শৈশবে ফিরে গেছি। ছোট বেলার কথা মনে পড়েছে, যখন এক টাকায় একটি রঙিন ঘুড়ি কিনতাম এবং একজন আরেকজনের ঘুড়ি কেটে দিতাম। এখন এই নীল আকাশে বেগুনি, নীল, সাদা রঙের ঘুড়ি উড়তে দেখে ভালোই লেগেছে।”

এদিকে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন লাঠি ও হা-ডু-ডুসহ গ্রামীণ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পঞ্চগড়ে বর্ষবরণে শিশু-কিশোরদের ঘুড়ি উৎসব
  • নানা আয়োজনে উদীচীর চৈত্রসংক্রান্তি উদ্‌যাপন
  • সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত, অপেক্ষা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
  • সয়াবিন তেলের লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত, অপেক্ষা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
  • সুদানে আধা সামরিক বাহিনীর হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত
  • সুদানের দারফুরে আধা সামরিক বাহিনীর হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত: জাতিসংঘ