পাবনায় ৫ বছর ধরে ইফতারি নিয়ে এতিমদের পাশে শিক্ষার্থীরা
Published: 11th, March 2025 GMT
পাবনার বেড়া উপজেলায় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এতিম শিশুদের জন্য ইফতারি ও রাতের খাবারের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’–এর নামে এবার নিয়ে পঞ্চম বছরের মতো এই আয়োজন করা হচ্ছে।
বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামে অবস্থিত হাটুরিয়া-জগন্নাথপুর বাজার কেন্দ্রীয় দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ৬০ থেকে ৬৫ এতিম শিশুকে পুরো রমজানে ইফতারি ও রাতের খাবার দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে ঐতিহ্যবাহী সরকারি বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’টি গড়ে তোলে। তাঁরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শুরু করেন মানবকল্যাণমুখী নানা কর্মকাণ্ড। শুরুর দিকে তাঁরা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসংক্রান্ত সহায়তা দিতেন, সুস্থদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তাঁদের আন্তরিকতা দেখে অনেক সচ্ছল ও ধনী ব্যক্তি তাঁদের তহবিলে অর্থসহ নানা সামগ্রী দান করা শুরু করেন। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত আছেন বেড়া উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। তবে সংগঠনটির মূল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন প্রতিষ্ঠাকালের উদ্যোক্তারা। তাঁরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মেহরাব হোসেন এখন ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি ঢাকায় থাকলেও অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে এতিমখানাটির নানা দিক তিনি দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, সংগঠনের নামে তাঁদের একটি ফেজবুক পেজ আছে। রমজান মাসের কয়েক দিন আগে তাঁদের এই পেজে এতিমদের সহায়তার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে থাকে। এর পর থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো না কোনো দিনের ইফতারি ও রাতের খাবারের দায়িত্ব নিয়ে থাকে। এবারও ২৭ দিনের ইফতারি ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। বাকি তিন দিনের ব্যবস্থাও খুব শিগগির হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
এতিমখানা কর্তৃপক্ষ ও কয়েকজন শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইফতারে প্রতিদিন খেজুর, কলা, আপেল, আনারস, বিস্কুট, শরবত অথবা জুস, ছোলা, বুন্দিয়া, চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু ও নুডলস দেওয়া হয়। বেশির ভাগ দিন রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস ও ডাল দেওয়া হয়। বিশেষ বিশেষ দিনে গরুর মাংস ও মুরগির রোস্ট দেওয়া হয়।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও এতিমখানাটির তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা আসাদুল ইসলাম সিরাজী বলেন, এই মাদ্রাসাতে মোট ৮৫ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এসব শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই এতিম ও অতি দরিদ্র। মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে ৪০ এতিম শিশু থাকে। এ ছাড়া মাদ্রাসার আশেপাশে নিজেদের বাড়িতে থাকে বাকিরা। শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার ছাত্রবাসে থাকা ৪০ এতিম শিশু এবং আশেপাশে বসবাস করা ২০ থেকে ২৫ অতি দরিদ্র শিক্ষার্থী মিলিয়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ জনকে ইফতারি ও রাতের খাবার দেওয়া হয়।
পাঁচ বছর ধরে এতিম শিশুদের ইফতার ও রাতের খাবারের তত্ত্বাবধানে আছেন বিএ (সম্মান) শ্রেণির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। এতিমখানার পাশেই তাঁর বাড়ি। তিনি বলেন, ‘এতিম ও অতি দরিদ্র শিশুদের সামনে খাবার দিতে পেরে আমরা গর্বিত। তবে যেসব হৃদয়বান মানুষ বিশ্বাস করে আমাদের মাধ্যমে এসব এতিম ও দরিদ্রদের জন্য খাবার বা টাকা পাঠাচ্ছেন, তাঁদের আমরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এত ম শ শ সহয গ ত দর দ র স গঠন ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
চাষাড়ায় রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ অটো স্ট্যান্ড, চাঁদাবাজি
একের পর এক সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যদিয়েই চলছে নারায়ণগঞ্জে দখলদারিত্ব। পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এখানকার রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, পরিবহন ও ঝুট সেক্টরসহ অনেক বড় বড় সেক্টরগুলো দখল হয়ে গেলেও এখনও বন্ধ করা যাচ্ছে এসব দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজী।
প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে উঠে আসছে এসব দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজীর খবর। এবার সেই খবরে যোগ হলো চাষাঢ়ার রেলওয়ের জায়গা দখল করে অটো স্ট্যান্ড ও চাঁদাবাজীর ঘটনা।
জানাগেছে, চাষাঢ়া আল জয়নাল ট্রেড সেন্টার সংলগ্ন রেলওয়ের জায়গাটি দখল করে অটো রিকশা ড্রাইভার-মালিক ঐক্যপরিষদের নামে ভূয়া একটি সংগঠন খুলে স্ট্যান্ড করা হয়েছে। যেখানে প্রতিটি অটো রিকশা থেকে নিয়মিত আদায় করা হচ্ছে চাঁদা।
যানজট নিয়ন্ত্রণে ৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের বেতন বাবদ ওই চাঁদা তোলা হয় বলে জানিয়েছেন ওই ভুঁইফোড় সংগঠনটির স্বঘোষিত সভাপতি মো: সাইদ। তবে তার কথার সাথে বাস্তবতার মিল বড় কঠিন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানাগেছে, চাষাঢ়া-পঞ্চবটি রুটে প্রায় ৩ শতাধীক অটো রিকশা চলাচল করে। এসব অটো রিকশা থেকে বর্তমানে ৩০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। হিসেব অনুযায়ী ৩শ অটো রিকশা থেকে দৈনিক প্রায় ৯ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
অথচ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা ৪ জনের বেতন বাবদ দৈনিক ৭শ টাকা করে হলে মোট ২ হাজার ৮শ টাকা হয়। বাকি টাকা চাঁদাবাজদের পকেটেই ঢুকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুঁইফোড় সংগঠনটির স্বঘোষিত সভাপতি মো: সাইদ পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে এখানে স্ট্যান্ড করেছেন বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, আগে আমাদের অটো রিকশাগুলো পঞ্চবটি থেকে অক্টো অফিস পর্যন্ত চলাচল করতো। চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটি যাওয়া যাত্রীগুলো অনেক সময় চাষাঢ়া থেকে রিকশা করে অক্টো অফিসে গিয়ে সেখান থেকে অটো রিকশা করে পঞ্চবটিতে যেতো।
কিন্তু শহরে মিশুক চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় ওরা চাষাঢ়া থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে সোজা পঞ্চবটিতে যায়। ফলে যাত্রী সংকটে পরে অটো রিকশা চালকরা। পরে আমরা এ নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করি। আমরা এসপি অফিসে গেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও টিআই এডমিন আমাদের এখানে স্ট্যান্ড করার অনুমতি দেন।
‘রেলওয়ের জায়গা স্ট্যান্ড করতে হলেতো রেলকর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। আপনারা কি সেই অনুমতি নিয়েছেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে সাইদ বলেন, নানা আমরা আপাতত কাউকে জানাইনি। আপাতত গাড়ীগুলো (অটো রিকশাগুলো) রাখাতাছি। পরে স্টেশন মাস্টারকে জানাবো।
এদিকে পুলিশের অনুমতি বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে টিআই আবদুল করিম শেখ বলেন, ওই জায়গাতো আমাদের না। আমরা কেন অনুমতি দেবো। আমাদের কথা হলো, অটো রিকশা যেখানেই চলুক আর যেখানেই রাখুক শহরে ঢুকতে পারবে না।