বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, চারজন গ্রেপ্তার
Published: 11th, March 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোথাও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আবার কোথাও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছিলেন গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। তাঁদের ব্যবহৃত একটি ব্যক্তিগত গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে জেলা শহরের ভাঙা ব্রিজ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লার দেবীদ্বার এলাকার মাহবুবুর রহমানের ছেলে তোফায়েল আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান এবং খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির আবদুল মতিনের ছেলে মোক্তাদির হোসেন ও গুইমারার মো.
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা গতকাল বেলা ১১টার দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার একটি ইটভাটায় গিয়ে নিজেদের বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য পরিচয় দেন। এরপর নানা ধরনের হুমকি দিয়ে ইটভাটা কর্তৃপক্ষের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায়ে হুমকির মুখে ইটভাটা মালিক তাঁদের এক লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। পরে এসব ব্যক্তিরা আলমগীর হোসেনের মালিকানাধীন ইটভাটায় গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে আলমগীর হোসেনকে হুমকি–ধামকি দিয়ে চলে আসেন।
পুলিশ জানায়, চাঁদা দাবির বিষয়ে খবর পেয়ে দীঘিনালা থেকে ফেরার পথে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়িটিও জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। চাঁদাবাজি করার সময় এসব ব্যক্তিদের সঙ্গে আরও অন্তত সাতজন ছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ওই ব্যক্তিরা বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য পরিচয়ে গতকাল দুপুরে তাঁর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকার নিয়ে পরে চলে যান।
খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে চারজন ভুয়া সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আজ আদালতে পাঠানো হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ম ড য় গ র প ত র কর স ল র সদস য ইটভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে মাউশির উপপরিচালকের দপ্তরে দুদক পেল আটকে রাখা ১৫১ ফাইল
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক আলমগীর কবিরের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আটকে রাখা ১৫১টি ফাইল পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফাইলগুলো পাঠানোর সময় পার হয়ে গেছে। টাকা ছাড়া ওই কর্মকর্তা ফাইল ছাড়েন না, এমন অভিযোগে মঙ্গলবার তাঁর দপ্তরে অভিযান চালায় দুদকের একটি দল।
দুর্নীতির অভিযোগে বদলির ৫ মাস ৭ দিনের মাথায় গত ১৮ নভেম্বর ওই কর্মকর্তাকে মাউশির রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক হিসেবে আবার পদায়ন করা হয়। এ নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই হলেন মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
আলমগীর কবিরের টেবিলে আটকে রাখা ফাইলগুলো বিভাগের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন, কলেজের এরিয়া বিলের আবেদনসংক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি ফাইল কলেজের বকেয়া বিলের। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে মাউশিতে ফাইল পাঠানোর সময় ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে।
১০ মার্চ দুদকের হটলাইনে অভিযোগ যায়, মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কলেজ শাখার উপপরিচালক আলমগীর কবির যোগদানের পর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ নিয়ে ফাইল অনুমোদন করেন। এমপিওভুক্তি ও বদলির ক্ষেত্রে অন্তত লাখ টাকা ঘুষ নেন তিনি। ঘুষ না দিলে ফাইল ওপরে ওঠে না। ছুটি কিংবা অনাপত্তিপত্র নিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয়। তাঁর চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে তিনি ফাইল অনুমোদন করেন না। বর্তমানে (অভিযোগের সময় পর্যন্ত) ১৮৩টি ফাইল আটকে রেখে তিনি ঘুষ দাবি করছেন বলে অভিযোগ পায় দুদক।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপপরিচালক ফজলুল বারী একটি টিম গঠন করে দেন। দলনেতা করা হয় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনকে। সদস্য রাখা হয় সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দিক, উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন ও কোর্ট পরিদর্শক আশরাফুল ইসলামকে। মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের এই দল মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযান চালায়।
অভিযানে দুদকের দল দেখে, আলমগীর কবিরের টেবিলে ১৫১টি ফাইল আটকে আছে। এসব ফাইল প্রথমে পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামানের কাছে দাখিল হয়েছে। এরপর তিনি সহকারী পরিচালক আলমাস উদ্দিনের কাছে পাঠান। নিয়মানুযায়ী আলমাস উদ্দিন তা উপপরিচালক আলমগীর কবিরের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আলমগীর কবির সেগুলো পরিচালকের কাছে পাঠাননি। তিনি ফাইল পাঠালে পরিচালক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেগুলো ঢাকায় পাঠাতে পারতেন।
দুদক দলের কাছে আলমগীর কবির দাবি করেন, অসুস্থ অবস্থায় ছুটিতে থাকায় ও তিন দিন সার্ভার ডাউন থাকায় তিনি ফাইল ছাড়তে পারেননি। দুদকের দল এ সময় তাঁর কাছে লিখিত বক্তব্য চান। লিখিত বক্তব্য দিতে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় নেন আলমগীর কবির। এ বিষয়ে কথা বলতে বিকেলে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কয়েক দফায় তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।
যোগাযোগ করলে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার কাছে ফাইল আসার পর আমি সর্বোচ্চ ১০ দিন রাখতে পারি। সহকারী পরিচালক সাত দিন ও উপপরিচালক পাঁচ দিন রাখতে পারেন। কিন্তু উপপরিচালক যথাসময়ে ফাইল ছাড়েন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকায় ফাইল পাঠাতে আমি তাঁকে ফোন করেছি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেছি, এমনকি তাঁর রুমে গিয়েও যেভাবে ভদ্রভাবে বলা দরকার বলেছি, তা-ও তিনি ছাড়েননি।’
মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘তাঁর কাছে মোট ২৮২টি ফাইল ছিল। তার মধ্যে ১৭৪টি আটকে রেখেছিলেন। ঢাকায় পাঠানোর সময় শেষ হলে তিনি আমাকে ২৩টা ফাইল দিয়েছেন। এসব ফাইল নিয়ে এখন আমার কোনো লাভ নেই, ঢাকায় পাঠানো যাবে না। আর ১৫১টি ফাইল তো তিনি ছাড়েনইনি।’ তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে তাঁর কানে কথা আসে, যেসব ফাইল ওই কর্মকর্তার টেবিলে আছে, সেগুলো অগ্রগামী করতে টাকা চেয়ে তিনি ‘থার্ড পার্টি’ কলেজের শিক্ষকদের ফোন করেন। তিনি কয়েকটি নম্বর তাঁকে দিয়েছেনও। কিন্তু ফোন করা ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন এই ফোনকলের সঙ্গে ফাইল আটকে রাখার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা তিনি জানেন না।
গত ডিসেম্বরে রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আসলাম আলী মাউশির আঞ্চলিক পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, উপপরিচালকের টেবিলে তাঁর কলেজের ৪৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ৯০ লাখ টাকা বকেয়া বিলের ফাইল আটকে আছে। ফাইল অনুমোদন করাতে ‘আমি মাউশি থেকে বলছি’ জানিয়ে এক নারী তাঁকে ফোন করে টাকা চেয়েছিলেন। তখন ফাইল আটকে রাখার কথা অস্বীকার করেছিলেন উপপরিচালক।
আলমগীর কবীর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি প্রথম যোগদান করেছিলেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে এমপিও দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তদন্ত চলাকালে তাঁকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মাউশিতে ফিরতে মরিয়া ছিলেন। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সবেতনে তিনি পরিচালক হতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। তাঁর আবেদনে সুপারিশ করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে তিনি সচিবকে লেখেন, ‘শূন্য পদ সাপেক্ষে পদায়নের ব্যবস্থা নিন।’ কিন্তু কাম্য যোগ্যতা না থাকায় তিনি পরিচালক হতে পারেননি। এরপর চুপচাপ ছিলেন আলমগীর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবার মাউশিতে ফেরার তৎপরতা শুরু করেন। এরপর গত ১৮ নভেম্বর তাঁকে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘তিনি ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ঘুষের জন্য তিনি ফাইল আটকে রাখেন বলেও অভিযোগ এসেছে। তাই আমরা অভিযান চালিয়ে যাচাই করেছি। কোন তারিখে কোন ফাইল এসে আটকে আছে, সেগুলো দেখেছি। আমরা পেয়েছি যে ১৫১টি ফাইল আটকে আছে। এ ব্যাপারে ওই কর্মকর্তার লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি রোববার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। জবাব আসার পর পর্যালোচনা করে আমরা ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠাব।’