জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বহাল, এবারের চূড়ান্ত তালিকায় নেই এম এ জি ওসমানী
Published: 11th, March 2025 GMT
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত রহিত করেছে সরকার। অর্থাৎ তাঁকে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার বহাল করা হয়েছে। ২০০৩ সালে তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ বছর ৭ বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে সরকার।
তবে এ বছরের চূড়ান্ত তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর নাম নেই। এর আগে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছিল এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় এম এ জি ওসমানীর নাম আছে। এম এ জি ওসমানী ১৯৮৫ সালে সমাজসেবায় স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছিলেন।
আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে। ২০২৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত বিশিষ্টজনদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (কবি আল মাহমুদ), সংস্কৃতিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম নকশাকার নভেরা আহমেদ, সমাজসেবায় ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (পপসম্রাট), শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর (বদরুদ্দীন উমর) এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
২০১৯ সালের অক্টোবরে বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। এই সাতজনের মধ্যে বদরুদ্দীন উমর ছাড়া বাকি ছয়জনই মরণোত্তর এই পুরস্কার পাচ্ছেন।
অবশ্য, কয়েক দিন আগে সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণার পরপরই বদরুদ্দীন উমর বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, এই পুরস্কার গ্রহণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে আমি এটা জানিয়ে দিচ্ছি।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে (মরণোত্তর) ২০০৩ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের পটভূমিতে ২০১৬ সালে সরকার পুরস্কার বাতিল করে সেই রায়ে তাঁকে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের কোনো নির্দেশনা নেই। এ জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসাধারণ অবদান বিবেচনায় তাঁর স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত রহিত করা হয়েছে।
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা, স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনএবার স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৮ জন০৬ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বদর দ দ ন এম এ জ এই প র সরক র ওসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
দখলদারদের তালিকা হলেও দুই যুগেও নেই উচ্ছেদ
দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে কুমিল্লার শহরের পাশ দিয়ে এক সময়ের প্রবহমান গোমতী নদী। মরা নদী নামেই এই নদীটি এখন বেশি পরিচিত। যে নদী হতে পারত নগরবাসীর জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র, সেখানে এখন পা ফেলার জায়গা নেই। সর্বত্র
উৎকট গন্ধ। মানচিত্রে নদীর আয়তন বিশাল থাকলেও দুই তীরের জলাধার দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনসহ নানা স্থাপনা। ২০০৩ সাল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ তালিকা করা হলেও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে আজও আলোর মুখ দেখেনি। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন দখলদার।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীপারের বাসিন্দাদের বাড়িঘরের ময়লা, শহরের ড্রেনের দূষিত আবর্জনা, মানববর্জ্য, কচুরিপানায় একাকার হয়ে নদীর পানি কালো-দুর্গন্ধময় ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন মরা নদীর দুই পারের বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় কুমিল্লা শহর ঘেঁষে প্রবহমান ছিল গোমতী নদী। তখন বর্ষাকালে বন্যায় নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করত। তাই শহর রক্ষার জন্য ষাটের দশকে এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এর পর থেকে শহরের উত্তর প্রান্তের কাপ্তানবাজার থেকে পূর্ব প্রান্তের শুভপুর এলাকা পর্যন্ত নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ পুরাতন বা মরা গোমতী নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। নদীর এপারের শহরের মানুষের সঙ্গে ওপারের যোগাযোগের জন্য কাপ্তানবাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, থানা রোড, হারুন স্কুল সড়ক ও চকবাজার এলাকায় পাঁচটি আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়। এই নদীর কূলে রয়েছে কুমিল্লা নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয়দের অনেকে প্রভাব খাটিয়ে মরা নদীর বিভিন্ন স্থানের দুই পার ও পানির অংশ ধীরে ধীরে অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ভরাট করে বহুতল ভবন, আধাপাকা বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে মরা নদীর দুই পারে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে এবং দখলযজ্ঞে নদীটি সরু খালের আকার ধারণ করেছে।
থানা রোডে পশ্চিমাংশে নদীতে বর্তমানে বেশির ভাগ অংশ কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে আছে। অন্য অংশগুলো মাছ চাষ করতে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে। গাংচরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, সরকারি একটি নদী শুধু দখলই নয়, নদীর পানিতে মরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুকুর-বিড়াল, পশু-পাখি ছাড়াও কচুরিপানা ও আবর্জনা ফেলা হয়। এখন দূষিত কালো পানি থেকে অস্বাস্থ্যকর গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাউবো
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। জেলা-পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে নদীর সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হবে।
আদর্শ সদর উপজেলা ভূমি অফিসের একটি সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুরাতন গোমতী নদীর দুই পারের ৭৭২ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়। তাদের উচ্ছেদের জন্য বিগত ২১ বছরে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নদীর মোট ২৫৮ একর জমি দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু উচ্ছেদ হয়নি।
তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ২১ বছরে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদীপারের চাঁনপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা নদীপারে বসবাস করে আসছে। সরকার উচ্ছেদ করতে চাইলে আমাদের পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করলে আপত্তি থাকবে না। অন্যথায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই প্রাকৃতিক জলাধারটি দখল-দূষণে অনেকটা বিলীনের পথে। এর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সভা-সেমিনার ও নানা কর্মসূচি পালনসহ স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। তবে নদীর জায়গা দখলমুক্ত করে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে
ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলা গেলে এ মরা নদী পর্যটনের এক নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাতে পারে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম বলেন, পুরাতন গোমতী নদীসহ কুমিল্লা নগর এলাকার বহুমাত্রিক উন্নয়নের জন্য ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর একনেক সভায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু নদী দখলমুক্ত না করে প্রকল্প শুরু করা যাচ্ছে না। নদীর জায়গা দখলমুক্ত করে সৌন্দর্য প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে কাজ চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রাচীন এ শহরের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে।