২০০ কোটি টাকার বেশি যাঁরা পাচার করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 11th, March 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু সেনসিটিভ কেসের (স্পর্শকাতর ব্যক্তির পাচার করা অর্থ) পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাচার করা টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন দেশ জড়িত, তবে পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ২০০ কোটি টাকার বেশি যাঁরা পাচার করেছেন, তাঁদের অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পাচার করা টাকা বিশাল অঙ্কের। সব টাকা ফেরত আনতে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আবার ওই সব আইনি পদক্ষেপগুলো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জড়িত। আগামী মাসে এসব বিষয়ে আরেকটু ভালো জানতে পারবেন।
কয়েক শ কোটি ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছেন, এটা কি সম্ভব? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা সম্ভব। ২০০ কোটি টাকার ওপর যাঁরা পাচার করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হয়তো আমরা আনতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু “সেনসিটিভি কেস” দেখছি।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৫ বছরে যে টাকা পাচার করা হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। অধ্যাদেশ আকারে খুব শিগগির এই আইন হবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল। শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ হ ন ত কর প চ র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশকে ফ্যাসিবাদী তৎপরতা ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। মেঘনা আলমের মুক্তি চেয়ে তারা বলেছে, গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাষ্ট্রে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’সহ নিপীড়নমূলক কোনো আইন থাকতে পারে না।
আজ শনিবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
গত বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। পরদিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী আদালত তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিন আটক রাখার আদেশ দেন। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
বিবৃতিতে এ ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি রাষ্ট্রের এরূপ ‘আইনি’ স্বৈরাচারী তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মেঘনা আলমকে দরজা ভেঙে আটক করতে অভিযান চালাচ্ছিল, তখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করছিলেন। ভিডিওতে তিনি ভাটারা থানা ও ৯৯৯ হটলাইনে সহায়তা চেয়ে পাননি। তিনি পুলিশের পরিচয় নিশ্চিত করা ও আটকের কারণ জানতে কাগজ চেয়েছেন, কিন্তু কিছুই মানা হয়নি। তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এক দিন গুম করে রাখা হয়। এ সময়ে ফেসবুকে তাঁর লাইভ ভিডিও ডিলিট করা হয় এবং পুলিশ ও ডিবি তাঁকে আটকের কথা অস্বীকার করে। ফেসবুকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে পরদিন আটকের কথা স্বীকার করে পুলিশ।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪) একটি ফ্যাসিবাদী আইন। জুলাইয়ে ছাত্র–জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার আবার ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ যে অভিযোগ দিয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জেরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং কূটনৈতিক প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীন নতজানুতা প্রকাশ পায়।
আরও পড়ুনমডেল মেঘনা আলমকে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ রাখার কারণ হিসেবে যা বলল পুলিশ১১ এপ্রিল ২০২৫বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মেঘনা আলমের মুক্তি ও বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪) বাতিলের দাবি জানায়। পাশাপাশি যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত বাহিনী হিসেবে একজন নাগরিকের অধিকারকে হরণ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও তুলেছে তারা। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকাও তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে যথাযথ কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
আরও পড়ুনবিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ, মডেল মেঘনা কারাগারে১১ এপ্রিল ২০২৫