পুলিশের ডিজিটাইজেশনে ৪ উদ্যোগ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘শর্টকোড’ চালুর সিদ্ধান্ত
Published: 11th, March 2025 GMT
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুলিশের ‘হটলাইন’ সেবার পাশাপাশি ‘শর্টকোড’ চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশের ডিজিটাইজেশনে সরকারের চার উদ্যোগের মধ্যে এটি অন্যতম। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পুলিশের সব ধরনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কমান্ড অ্যাপ তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সফটওয়্যার, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড, অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অনলাইনে বা শর্টকোডের মাধ্যমে মামলা বা এফআইআরসহ বহুবিধ আধুনিকায়নের কাজও শুরু হয়েছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্তমানে যে জাতীয় হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ রয়েছে, তার সঙ্গে আরেকটি ৩ যোগ করে ‘৩৩৩৩’ ডায়াল করে নারী নির্যাতনবিষয়ক যেকোনো অভিযোগ করা যাবে। অথবা ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে সেবা অপশনে গিয়ে ৩ চাপলেও পুলিশের কল সেন্টারে ফরোয়ার্ড হয়ে যাবে। নারীরা যাতে নিঃসংকোচে অভিযোগ জানাতে পারেন, সে লক্ষ্যে কল সেন্টারে শতভাগ নারী সদস্য রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু ‘৯৯৯’ জীবন রক্ষাকারী এসওএস সেবা এবং এর কল সেন্টার ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, তাই আপাতত এই ‘৩৩৩৩’ সেবাকে ‘৯৯৯ ’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। পাশাপাশি ‘৩৩৩৩ ’-এর কল সেন্টারের রিসিভার হিসেবে শতভাগ নারী কর্মী রাখারও চিন্তা সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, যুক্ত হচ্ছে অনলাইন এফআইআর পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে কল সেন্টারে প্রোফাইল ডাউনলোড হওয়ার পর কলটি সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানায় চলে যাবে। বর্তমানে থানার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ফোন নম্বরের ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা আইসিটি বিভাগ থেকে করা হবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, পুলিশের কমান্ড অ্যাপের প্রটোটাইপ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আলোচনা করে অ্যাপ্লিকেশনটির আরও উন্নয়নের কাজ চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তা ছাড়া তথ্য পাচারের ঝুঁকিও খুব বেশি। যেকোনো সদস্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে সব আলোচনা কপি করে নিয়ে যেতে পারেন। এ কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পুশ টু টক’ অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে তথ্য পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা থাকবে।
বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ কমান্ড অ্যাপে কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি স্তরে থাকবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, টিয়ার-১-এ থাকবেন পুলিশের আইজিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। পরের স্তরে থাকবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ জেলা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। আর সবশেষে থাকবেন দেশের সব থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।
তবে থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখনই কমান্ড অ্যাপে সংযুক্ত করা হবে না বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বর্তমানে যেকোনো অভিযোগ তদন্ত বা কোনো ঘটনা ঘটলে সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ও প্রচলিত অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পুলিশ কমান্ড সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা সারা দিন এসব কাজেই ব্যস্ত থাকেন। এ ধরনের যোগাযোগের পুরো বিষয়কে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আদলে একটি ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। এই ট্র্যাকিং সিস্টেমে সব ধরনের মেসেজ আদান-প্রদান ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করা হবে। ফলে যেকোনো অপরাধের ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমেই জানা যাবে। এর ফলে সেবা প্রদান সহজ ও সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের কাজের চাপও কমবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ন ড অ য প ব শ ষ সহক র কল স ন ট র কর মকর ত সব ধরন র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বিমা খাতে দুর্নীতি নির্মূল করবোই: বিআইএ সভাপতি
বিমা খাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। নিজে দুনীতি করবো না, অন্যকে করতে দেবো না। বিমা খাতে দুর্নীতি নির্মূল করবোই বলে অঙ্গীকার জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি সাঈদ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘‘বিমা আহরণের ক্ষেত্রে দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটা অসম প্রতিযোগিতা চলছে। এটাকে আমরা বন্ধের জন্য নীতি-নির্ধারকদের সাথে কথা বলবো। এই অসম প্রতিযোগিতা দেশের বিমা খাতকে আরো সমস্যায় ফেলবে।’’
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর পল্টনস্থ ক্যাপিটালে মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক-এ তিনি এ অঙ্গীকার করেন। সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
সাঈদ আহমদ বলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের বীমা খাত বৃদ্ধি পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ৮০টি বীমা কোম্পানির সংখ্যা আমার মতে কম। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরো সমন্বয় করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিমা খাতের এক অসাধারণ পরিবর্তনের সাক্ষী আমরা। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ, ১৯৭৩ সালে বীমা করপোরেশন আইন অনুযায়ী পুনর্গঠন, ১৯৮৪ সালে বেসরকারি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে অন্তর্ভুক্তিকরণ। প্রতিটি ধাপ এই খাতকে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
‘‘আমাদের দেশে ৮০টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। ৩৫টি জীবন বিমা এবং ৪৫টি সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা সম্মিলিতভাবে প্রায় ১.৮৯ কোটি ব্যক্তিকে বিমার আওতায় এসেছে। কিন্তু এতো অগ্রগতির পরেও বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স’র অবদান জিডিপির ০.৫ শতাংশ।’’
তিনি বলেন, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক কম। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১.২ শতাংশ, পাকিস্তানে ০.৮ শতাংশ।
বিআইএ সভাপতি বলেন, আমাদের বিমা খাতে বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে। যেমন কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বব্যাপী, দেশের অর্থনীতির অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নেতিবাচক রিজার্ভ ইত্যাদির কারণে বীমা খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।
বিমা খাতের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্য থেকেও বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলো জীবন বিমা খাতে প্রাইভেট বিমা কোম্পানিগুলোর উপার্জিত প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ২০২৩ সালে ১১ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বেসরকারি জীবন বিমা খাতের লাইফ ফান্ড ২০২৩ সালে ৩২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বেসরকারি জীবন বিমা খাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ ৩৬৮,৫৩৬ মিলিয়ন টাকা।
‘‘বেসরকারি খাতে জীবন বিমা কোম্পানির মোট সম্পদ ২০২৩ সালে ৪৪ হাজার ২২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বীমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ২০২৩ সালে ছিল চার হাজার ২৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ২০২৩ সালে সম্পদের পরিমাণ ১১ হাজার ৬৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বিমা খাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ ৫ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।
এই খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরে সাঈদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির পরেও আমাদের ইন্স্যুরেন্স শিল্প এখনও তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারেনি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। এর মধ্যে বিমা সচেতনতা ও সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা এখনও বিমার গুরুত্ব ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এর ভূমিকা পুরোপুরি বোঝে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নীতিমালার সংস্কার চলমান থাকলেও, কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে আরো সমন্বয় প্রয়োজন। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে, গ্রাহকদের আরো সহজে বিমার আওতায় আনা প্রয়োজন। বিশ্বাসের অভাব ও দ্রুততম সময়ে দাবি নিষ্পত্তি, স্বচ্ছতা এবং উন্নত সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
বর্তমান বিমা খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বিমার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি, সময়মত সকল প্রকার দাবি পরিশোধ, এনজিও কর্তৃক বীমা করার অধিকার রহিতকরণ, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের জীবনবীমা পলিসি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব, বিমা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন, ভ্যাট/ট্যাক্স সংক্রান্ত সমস্যাবলীর সমাধান, মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলককরণ, বেসরকারি খাতে পুনঃবিমা কোম্পানি গঠন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে ভ্যাট, দ্বৈতকর ও করহার হ্রাসকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিমা করা বাধ্যতামূলককরণ। তবে, প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সম্ভাবনা থাকে। নতুন উদ্ভাবন, নীতিমালা সংস্কার এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব কাজে লাগিয়ে আমরা বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স শিল্পের প্রকৃত সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে পারবো।
প্রশ্নের জবাবে সাঈদ আহমদ বলেন, বিমা কোম্পানি সেবামূলক কাজ করছে। সেখানে তারা সেবার নামে কেন টাকা নেবে, এটা হতে দিতে পানি না। সেবার নামে বাণিজ্য করবেন তা হতে দেবো না।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণের টাকা তছরুপ করবে ছিনিমিনি খেলবে বিআইএ তা হতে দেবে না। আমরা তা মানবো না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। কয়েকটি সংস্থার জন্য পুরো খাত প্রশ্নের মুখে পড়বে এটা হতে দেব না। তিনি বলেন, এই খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা বেশি। কারণ এই খাতের উন্নয়নে পলিসি করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে খাতটির বিকাশ ঘটবে এবং জিডিপিতে অবদান বাড়বে।
ঢাকা/এনটি/এনএইচ