বরগুনায় চাচাকে হত্যায় অভিযুক্ত ভাতিজা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার
Published: 11th, March 2025 GMT
বরগুনা সদরের পাতাকাটা এলাকায় কৃষক আনোয়ার হাওলাদার হত্যা মামলায় তার ভাতিজা মো. ছগির হোসেন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৮।
সোমবার (১০ মার্চ) রাতে পটুয়াখালীর নজিবপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে বরগুনা থানায় হস্তান্তর করেন তারা।
বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক বিরোধের জেরে বিষ পান করিয়ে চাচা আনোয়ার হোসেনকে হত্যার চেষ্টা করেন ছগির। এরপর আনোয়ার হোসেন দুই দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। চাচার মৃত্যুর দায়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি ছগির হোসেনকে আসামি করে পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর থেকেই ছগির পলাতক ছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত ছগিরের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ সাতটি মামলা রয়েছে।
ছগির বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামের মৃত দেলোয়ার হাওলাদারের ছেলে।
ঢাকা/ইমরান/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শখের ছাগলে স্বাবলম্বী মোকলেছার, কিনছেন গাভি ও জমি
ছোটবেলা থেকেই ছাগলের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা মোকলেছার রহমানের। সেই ভালোবাসা থেকেই শখ করে একটি ছাগল কিনে পালন শুরু করেন। একটি, দুটি করে এখন তাঁর খামারে ৫০টি ছাগল। শৈশবের শখ বর্তমানে পরিণত হয়েছে পেশায়। বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার। ছাগল বিক্রি করে তাঁর মাসে আয় হচ্ছে গড়ে ২৫ হাজার টাকা।
মোকলেছার রহমানের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের ডারারপাড় গ্রামে। কাঁচা–পাকা সড়ক ধরে মোকলেছারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানের মতো ছাগল পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। উঠানে কাঁঠালপাতা, খড় ও ভুসি খাওয়াচ্ছিলেন। এই প্রতিবেদককে দেখে উঠে এসে বসতে দিয়ে শোনান ছাগল পালনে সফলতার গল্প।
মোকলেছার রহমান জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই বাবু মিয়া লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করেন। বাবা রফিকুল ইসলামও তারাগঞ্জ ও/এ দাখিল মাদ্রাসায় চাকরি করেন। ২০০৬ সালে মোকলেছার দাখিল পাস করেন। ২০১৪ সালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বড়ভিটা গ্রামের মোকছেদুল ইসলামের মেয়ে মোতাহারা আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর চাকরির পেছনে ছোটেন। চাকরি না পেয়ে হতাশ হন।
মোকলেছার জানান, হতাশার মধে৵ তাঁকে ভরসা এনে দেয় লেখাপড়ার সময়ে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে কেনা শখের ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের ছাগল। ২০১৬ সালে স্ত্রী মোতাহারার পরামর্শে ছাগল পালন শুরু করেন। এক বছরে ছয়টি ছাগল ২৪টি বাচ্চা দেয়। ১২টি বিক্রি করে ৬০ টাকা আয় আসে। এই আয় মোকলেছারের চোখ খুলে দেয়। এরপর পুরোদমে ছাগল পালনে নেমে পড়েন। এখন তাঁর খামারে ৫০টি ছাগল। বর্গা দেওয়া আছে আরও ২০টি ছাগল। ছাগল পালনের টাকায় গাভি ও জমি কিনেছেন। তাঁকে দেখে গ্রামের অনেকে এখন ছাগল পালন করে বাড়তি আয় করছেন। মোকলেছারের স্বপ্ন—গ্রামের প্রতিটি উঠানে ছাগল পালন করা হবে। সচ্ছলতার হাসি থাকবে প্রতে৵ক মানুষের মুখে।
মোলেছার জানান, দেশি জাতের ছাগল বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। একটি ছাগল সর্বোচ্চ চারটি বাচ্চা দেয়। ছয় মাস বয়সী একটি ছাগল বিক্রি হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায়। একটি ছাগল ছয় মাসে খড়, কাঁচা ঘাস ও ভুসি খায় দুই হাজার টাকার।
মোকলেছার রহমান বলেন, ‘বাবা-ভাই দুজন চাকরি করেন। আমিও দাখিল পাসের পর চাকরির জন্য এদিক–সেদিক হন্যে হয়ে ঘুরেছি; কিন্তু চাকরি হয়নি। শখের বসে কেনা ছাগল দিয়ে খামার গড়ার পরিকল্পনা করি। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার খামারে ৫০টি ছাগল। বর্গা দিয়েছি আরও ২০টি। ছাগল পালন করে মাসে ২৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। চাষাবাদ আর ছাগল পালনের টাকায় সুখে সংসার চলছে। আমার ইচ্ছা ২০০ ছাগলের একটি খামার করার।’
মোকলেছার রহমানের দেখে ওই গ্রামের সাদেক হোসেন ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন। সাদেক বলেন, ‘মোকলেছারের পরামর্শে তাঁর খামার থেকে ছাগল কিনে খামার করেছি। আমার খামারে এখন ২০টি ছাগল আছে। ছাগল পালনে মনে প্রশান্তি আসে। খরচ অনেক কম। ছাগল বিক্রি করে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।’
শুধু সাদেকই নন; গ্রামের সাইফুল ইসলাম, এনামুল হক, আশরাফুল ইসলাম ছাগলের খামার করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন। ছাগল বিক্রির টাকায় কেউ গাভি, আবার কেউ জমি কিনেছেন। ওই গ্রামের গৃহবধূ ময়না খাতুনের ভিটামাটি ছাড়া কিছু ছিল না। এখন টিনের বাড়ি, ৭ শতাংশ নিজের জমি আছে। গাছগাছালিতে ঘেরা বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে মাসে ছয় হাজার টাকা আয় করছেন। ময়না খাতুন বলেন, ‘ভাই মোর স্বামী কিষান খাটে। রান্না, ঘর গোছানোর কাম করি মুই অলস বসি আছনু। মোকলেছার ভাই মোক একটা ছাগল বর্গা দিছে। এ্যালা মোর ৫টা ছাগল। ছাগল পালনের টাকায় সংসার ভালোয় চলোছে।’
অভাবের কারণে সোমেদার ঝগড়াবিবাদ লেগেই থাকত। গালমন্দ ছিল নিত্যদিনের বিষয়; কিন্তু এসব থেকে মুক্তি দিয়েছে ছাগল পালন। সোমেদা বলেন, ‘অল্প জায়গায়, অল্প টাকায় ছাগল পালন করা যায়। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তিন বছর আগে মোকলেছারের কাছে ছাগল কিনে তাঁর পরামর্শে ছাগল পালন শুরু করছি। বিক্রি বাদ দিয়ে এখন তাঁর ছয়টি ছাগল আছে।’
সয়ার ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন পাইলট জানান, মোকলেছার শিক্ষিত বেকার যুবকদের মডেল। তাঁর পথ অনুসরণ করে অনেকেই ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, মোকলেছার রহমান একজন আদর্শ খামারি। তিনি শুধু নিজেই নন, এলাকার অন্তত ১০টি পরিবারকে নিজের ছাগল বর্গা দিয়ে ছাগল পালনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর দেখানো পথে এলাকার অনেকেই হাঁটছেন। তাঁর কর্মকাণ্ড অনুকরণীয়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে তাঁকে সব সময় সহযোগিতা করা হচ্ছে।