ঠিকাদারের সঙ্গে ঘুষের টাকা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা, প্রকৌশলী বললেন, ‘তর্ক করেন না তো’
Published: 11th, March 2025 GMT
মেহেরপুরে গাংনী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঠিকাদারের কাছে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের টাকা নিয়ে তাঁর সঙ্গে এক ঠিকাদারের বাগ্বিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি গাংনী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।
২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিও একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওটিতে এম এ মান্নান নামের ওই ঠিকাদারের সঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামকে তাঁর কার্যালয়ে কথা বলতে শোনা যায়। শহিদুলের উদ্দেশে মান্নান বলেন, ‘১ পার্সেন্ট কীভাবে নেবেন আপনি?’ জবাবে শহিদুল বলেন, ‘তর্ক করেন না তো।’ মান্নান আবার বলেন, ‘না, না তর্ক করা না তো। আপনি সাইটে গেলেও ২–৩ হাজার করে নেবেন এক দিনে। আবার এদিকে ট্যাকা ১ পার্সেন্ট করেও নেবেন। হেই আমি কীভাবে দেব?’ এ সময় শহিদুলকে বলতে শোনা যায়, ‘চেঁচাচ্ছেন কেন?’
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাংনীর রায়পুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রাম্য বাজার থেকে কৃষিমাঠ পর্যন্ত ৬৯৩ মিটার পাকা সড়ক তৈরির কাজ পেয়েছেন মেহেরপুর পৌর শহরের বাসিন্দা কাজী শাহিন বিশ্বাস। তবে কাজটি করছেন গাংনী উপজেলার এম এ মান্নান। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে শেষ হওয়ার কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রোববার উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের কার্যালয়ের যান ঠিকাদার এম এ মান্নান। তখন তাঁদের মধ্যে এসব কথোপকথন হয়। ওই কার্যালয়ের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ওয়ার্ক অর্ডারের ভিত্তিতে প্রতি প্রকল্প থেকে ১ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করেন উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। কিছু প্রকল্পে তিনি চাহিদামতো ঘুষের টাকা পাননি। এ জন্য তিনি আরও বেশি টাকা দাবি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন ঠিকাদার এম এ মান্নান। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।
ঠিকাদার এম এ মান্নান অভিযোগ করেন, প্রকৌশলী শহিদুল নিয়মিতভাবে ঘুষ আদায়ে চাপ দেন। চলমান কাজ পরিদর্শনের সময় প্রতিদিন ৩-৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে কাজের বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। অনেক সময় বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়, না হলে কাজ আটকে যায়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার এম এ মান্নান একটি কাজের বিল উত্তোলনের জন্য কয়েক দিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন। কাজ শেষ না করে বিল দিলে ঝামেলায় পড়তে হবে, এ কারণে তাঁকে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। তিনি একজনকে সঙ্গে এনে ভিডিও ধারণ করে নিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি একাই কথা বলছেন। আমাকে হেয় করার জন্য ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
ঘুষের টাকার লেনদেনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন। মেহেরপুর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ মিয়া বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ ঘুষ নেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঠ ক দ র এম এ ম ন ন ন উপসহক র প রকল প উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুকসুদপুরে হাটবাজারের ভূমি বন্দোবস্ত পেতে এসি ল্যান্ডের ‘সেলামি’ চাওয়ার অভিযোগ
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও জলিরপাড় ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন উপজেলার জলিরপাড় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বরাবর তাঁরা লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা উপজেলার জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি হাটবাজারের একেকজনের জমি বন্দোবস্তের জন্য ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা আড়াই লাখ টাকা ‘সেলামি’ চেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তবে অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা ও রিমন বিশ্বাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ২৫ বছর ধরে পাউবোর জমিতে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসক পাউবোর ওই জমি পুনঃ গ্রহণ (রিজুম) করেন। ২০১৭ সালে পেরিফেরিভুক্ত হয়ে নকশা বের হয়। ২০২৪ সালে ইজারার মাধ্যমে ২৯ জন ব্যবসায়ীকে ওই ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হলে সরকারি নির্দেশে সড়কের পাশের পেরিফেরিভুক্ত জমি থেকে দোকানপাট নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শেষ হয়েছে। ওই জমি সড়ক বিভাগের কাজে না লাগায় আগের ব্যবসায়ীরা ডিসিআরের নবায়নে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে আবেদন করেন। এ ছাড়া নতুন করে একাধিক ব্যক্তি ওই ভূমি বন্দোবস্ত নিতে আবেদন করেন।
অভিযোগ ওঠে, ১ মার্চ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তফা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জলিরপাড় ভূমি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন। সভায় তিনি হাটবাজারের ভূমি বন্দোবস্ত নিতে তাঁকে আড়াই লাখ টাকা ‘সেলামি’ দিতে হবে বলে নির্ধারণ করে দেন। যেখানে সরকার নির্ধারিত ফি বছরে মাত্র ১৬০ টাকা। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হলে তাঁরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
জলিরপাড় বাজারের শহীদুল, তৌহিদ শেখ, লিপি বেগমসহ কয়েকজন বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। ডিসিআর নিয়ে ওই জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করে খাচ্ছিলেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ শুরু হলে ঘর ভেঙে ফেলতে বাধ্য হন। এখন ডিসিআর নবায়ন করতে গেলে এসি ল্যান্ড তা করে দেননি। উল্টো তহশিলদারের (উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা) মাধ্যমে ভূমি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আড়াই লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। তাঁরা এত টাকা কোথায় পাবেন। এ ব্যাপারে তাঁরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভুক্তভোগী চুন্নু চোকদার বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। রাস্তার পাশে সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে একটি ছাপরা তুলেছি। এখন নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হবে। এ জন্য এসি ল্যান্ড অফিসে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে আমার ছাপরা ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দিচ্ছে তহশিলদার রিমন বিশ্বাস। আমি এত টাকা কোথায় পাব?’
তবে রিমন বিশ্বাস সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারও কাছে টাকা চাইনি। আর ডিসিআর দেওয়ার আমি কেউ না। আমরা শুধু এখান থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জমি বন্দোবস্তের জন্য আড়াই লাখ টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ডিসিআরের চুক্তি এক বছরের। পরবর্তী সময়ে আমি তাঁদের না-ও দিতে পারি। কোথাও লেখা নেই যে পুনরায় তাঁদের সঙ্গে আমার চুক্তি করতে হবে। আমি তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য নই। অনেকের দোকানের অস্তিত্ব নেই। যে কারণে যাচাই-বাছাই নতুন করে বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। ওখানে বালু ভরাট করা হচ্ছে। একটা বড় ধরনের খরচের বিষয়ও রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’