শাহজালাল (রহ.)–এর দরগাহে এক কাতারে ইফতার ও সাহ্রি, নেই ধনী-গরিবের ভেদাভেদ
Published: 11th, March 2025 GMT
সন্ধ্যা নামার আগ থেকেই জমতে থাকে ভিড়। সারি বেঁধে অপেক্ষায় নানা বয়সী মানুষ। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন। এক কাতারে সবাই মেঝেতে বসেছেন। স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রথমে পানি বিতরণ করেন, পরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইফতারি বিতরণে। মসজিদের ভেতরেও বসতে শুরু করেন রোজাদারেরা। সবার অপেক্ষা একটাই, দরগাহে থাকা ইফতারের বিশেষ ‘সাইরেন’।
রমজানে প্রতিদিনই সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.
শুধু দরগাহ চত্বরেই নয়, পাশের মসজিদেও ইফতার করেন বহু মানুষ। কেউ নিজের ইফতারি নিয়ে আসেন, কেউ আবার মসজিদে আগত রোজাদারদের জন্য ইফতারি পাঠান। এখানে বসার ক্ষেত্রে কোনো শ্রেণিভেদ নেই। ভিক্ষুক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে রাজনীতিবিদ—সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করেন। নিজের খাবারটুকু অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার যে শিক্ষা, সেটিই যেন এখানে বাস্তব রূপ পায়। ইফতার ও সাহ্রির খাবারের রান্নাবান্নার এ আয়োজন দরগাহের লঙ্গরখানায় সকাল থেকেই শুরু হয়।
সোমবার শাহজালাল (রহ.)–এর দরগাহে গিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন মুসাফির, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় বাসিন্দা, দরগাহের বাবুর্চি ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
ঢাকা থেকে সিলেটে ভ্রমণে এসেছিলেন ব্যবসায়ী সায়মুম জাহিদ। দরগাহে ইফতার করতে যান তিনি। এমন আয়োজনে অভিভূত সায়মুম জাহিদ বলেন, ‘এই ইফতার যেন বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। কারণ, এখানে যাঁরা মেঝেতে বসেছেন, তাঁদের কারও পদ-পদবির কোনো পরিচয় নেই। সবাই রোজাদার। এটি আমাদের সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা দেয়।’
ইফতার ও সাহ্রিতে ২৭ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন ইসহাক নূর। দরগাহে কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে। কথা হলে দরগাহের লঙ্গরখানার প্রধান বাবুর্চি সৌরভ সোহেল বলেন, তাঁর দাদা প্রথমে এ পেশায় ছিলেন। পরে তাঁর বাবাও এখানে রান্নার কাজ করতেন। এখন তিনি এ কাজ করছেন। তিনি বলেন, ইফতার-সাহ্রির খাবারে প্রায় প্রতিদিনই আখনি কিংবা খিচুড়ি থাকে। তবে মাঝেমধ্যে পোলাও, বিরিয়ানির সঙ্গে গরু কিংবা খাসির মাংস, ডিম, কোর্মা ইত্যাদি রান্না করা হয়। কেউ কেউ আবার ইফতারি নিয়ে আসেন। তবে প্রতিদিনই এখানে রান্না হয়।
দরগাহের খাদেম সামুন মাহমুদ খান বলেন, হজরত শাহজালাল (রহ.) তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে একত্রে বসে ইফতার করতেন। তাঁর ওফাতের সময় ৭০৬ বছর হয়েছে। ওফাতের পর তাঁর অনুসারীরাও এ নিয়ম চালিয়ে যান। সেই ধারাবাহিকতায় আজও এখানে চলে ইফতারের আয়োজন। প্রতিদিন শুধু সিলেট নয়, দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে ইফতার করতে আসেন।
দরগাহে ইফতার করাকে অনেকে ‘ঐতিহ্যের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার মিশেল’ বলে থাকেন। শাহজালাল (রহ.)–এর দরগাহে আসা ভক্তদের কয়েকজন বলেন, প্রতিবছর অন্তত একবার হলেও তাঁরা দরগাহে ইফতার করতে আসেন। এখানে ইফতার করা শুধু খাবার খাওয়া নয়, বরং এক অনন্য অনুভূতি, যা মনে ভ্রাতৃত্ববোধ ও প্রশান্তি এনে দেয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত র করত শ হজ ল ল দরগ হ র র দরগ হ
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালের মোস্তফা বলেন, ‘আমার নৌকায় উঠে অনেকেই বলে, বিমানে উঠছিলাম’
৩২ বছর ধরে ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করি। এলাকায় ওয়ার্কশপ আর ছোট একটা ডকইয়ার্ড আছে আমার। ওয়ার্কশপে এর আগে কৃষকের জন্য ভাসমান পাওয়ার টিলার, স্টিলের লাঙলসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেছি। আর ডকইয়ার্ডে অর্ডার পেলে ট্রলার তৈরি করি।
ওয়ার্কশপে কাজ করতে অনেক সময় রাত হয়ে যায়। রাত জেগে কাজ করার সময় আকাশে বিমানের আসা-যাওয়া দেখি। সেখান থেকেই বিমানের আদলে নৌকা বাড়ানোর ইচ্ছা হয়। আগেও যেহেতু নানা কিছু বানিয়েছি, সেই ধারাবাহিকতায় বিমানের আদলে নৌকা বানানোর কাজ শুরু করি।
নৌকার ডিজাইন থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি সবকিছু আমিই বানিয়েছি। ওয়ার্কশপের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব করতাম। যেহেতু বানানোর ক্ষেত্রে তাড়া ছিল না। তাই টাকা জোগাড় করে ধীরে ধীরে কাজ করতাম। এ জন্য বানাতে বানাতে সব মিলিয়ে দুই বছরের মতো সময় লেগেছে। তবে নগদ টাকা থাকলে আর টানা কাজ করলে দুই মাসেই তৈরি করা সম্ভব হতো।
আরও পড়ুনদিনাজপুরের ট্রাক্টরচালক হৃদয়চন্দ্র যেভাবে ‘ইংলিশম্যান’ হয়ে উঠলেন১০ এপ্রিল ২০২৫মোস্তফা কামালের ‘বিমাননৌকা’