নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে ‘সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ছোট-ছোট মিছিল নিয়ে এসে তারা শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, নটরডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালবাগ মডেল কলেজ, উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জলসিঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সবুজবাগ সরকারি কলেজ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ ও হামদর্দ কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নৌবাহিনী কলেজ, সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিএএফ শাহীন ঢাকা, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলসহ মোট ৩০টি কলেজের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তাদের ‘তুমি কে, আমি কে, আছিয়া আছিয়া’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন, নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে আমরা শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু রমজানে জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচির পরিবর্তে জাতীয় যাদুঘরের সামনে ফাঁকা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। এই কর্মসূচি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, তারা ছয়টি দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী শাহবাগে আসবেন। আজ ইফতারের আগ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মিথিলা রহমান বলেন, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে, এ দেশে নারীরা কতটা অনিরাপদ। রাষ্ট্রকে নিরাপদ করতে তারা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে শাহবাগে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো—
১.

ধর্ষকের শাস্তি জনসমক্ষে নিশ্চিত করা। ধর্ষকদের শাস্তি প্রকাশ্যে নিশ্চিত হলে সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাবে।

২. ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষকদের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।

৩. দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। যদি কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা, মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করা এবং ভিকটিম ও সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী ১৫ কার্যদিবস সময়ে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটিতেও অসামঞ্জস্য থাকলে, সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৪. ধর্ষণের ঘটনায় সালিশি বিচার নিষিদ্ধ করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করবে শুধু রাষ্ট্র। পাশাপাশি অনৈতিক পন্থায় প্রশাসনের কারও সহযোগিতায় যদি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামি ছাড়া পায়, তবে তদন্ত অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করা যেতে পারে।

৬. চলমান মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ক ল অ য ন ড কল জ কল জ র শ ক ষ র থ ন শ চ ত কর অবস থ ন ল কল জ ত করত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের আর বঞ্চিত রাখা না হোক

দীর্ঘ ২৮ বছর পরে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হলো। তারপর ছয় বছর পেরিয়ে গেল। তবুও নতুন করে ডাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা যায়নি। বাংলাদেশে ১৯৯০ সালের পরে সংসদীয় গণতন্ত্র এলেও দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ছাত্রছাত্রী। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে রাখার জন্য দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদের আলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ করে রেখেছে। এ কারণে ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একবারের জন্য ডাকসু নির্বাচন সম্ভব হয়নি। 

২০১৮ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়ে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করে। এ নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছিল। ডাকসুর মাধ্যমে উঠে আসা নেতৃত্বই ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। 
বিশ্বের গণতান্ত্রিকভাবে অগ্রসর দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব দেশ 
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিকে উৎসাহিত করে। এতে দক্ষ ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু থাকলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভিত্তি শক্তিশালী হতো এবং গণতান্ত্রিক চর্চা আরও সুসংহত হতে পারত। 

ছাত্র সংসদ নির্বাচন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ পান। যদি নিয়মিত ডাকসু এবং অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো, তাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিয়ত তরুণ নেতৃত্বকে দেখতে পেতাম। যারা ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন। 
বাংলাদেশের রাজনীতির একটি নেতিবাচক দিক পরিবারতন্ত্র। বিভিন্ন জায়গায় একটি পরিবার, দুই পরিবার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। সে জায়গাগুলোতে নতুন যারা রাজনীতি করতে আগ্রহী কিংবা যোগ্য নেতৃত্বের উঠে আসার সুযোগ দলের মধ্যে থাকে না। পরিবারের বাইরে গিয়ে এটি করতে পারে শুধু ছাত্র সংসদ নির্বাচন। 
বাংলাদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের আধিপত্যের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন রয়েছে, তেমনি ভীতিও রয়েছে। যদি ভীতি থাকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ক্যাম্পাসে সহিংসতা হতে পারে, তাহলে সেই একই যুক্তিতে তো জাতীয় নির্বাচনও বন্ধ রাখা উচিত। কারণ জাতীয় নির্বাচনেও সংঘাত, সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা যায়। বাস্তবে জাতীয় নির্বাচন কখনোই বন্ধ থাকে না। শুধু ছাত্রদের ওপর একটা দায় দেওয়া হয় এবং তাদের যোগ্য নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়।

বর্তমানে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রায় সমান। সংখ্যায় সমতা থাকলেও নারীরা যদি রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বের জায়গায় আসতে না পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না। বাস্তবতা হলো, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখনও নারীর জন্য কার্যকর কোনো সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি এবং তাদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক পরিবেশও আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। এই পরিস্থিতিতে নারীর রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বে অংশগ্রহণের অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হতে পারে ছাত্র সংসদ নির্বাচন।

যদি নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়, তাহলে বিভিন্ন ছাত্রী হল থেকে যোগ্য নেত্রীরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন এবং ক্যাম্পাসেও নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ আরও সুসংহত করবে এবং রাজনীতিতে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করবে। ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নারী নেতৃত্বের বিকাশ ও নারীর ক্ষমতায়ন আরও কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যদি মাঠে না নামতেন, তাহলে আন্দোলন সফল করা কঠিন হয়ে যেত। তবে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও পরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ তৈরি হয়নি। এর মূল কারণ হলো, গত ৩০ বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে রাজনীতিমুক্ত রাখার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে কর্তৃপক্ষের একক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হয়েছে।

অনেকেই যুক্তি দেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনীতিমুক্ত রাখা উচিত। অক্সফোর্ড, হার্ভার্ডসহ বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। আমাদের দেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনিয়মিত হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ নির্বিচারে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে। যদি প্রতিবছর নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা বাধ্যতামূলক হয় এবং এটি না করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন একটি আইনি কাঠামো, যেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশের পথ উন্মুক্ত হবে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা তুলনামূলকভাবে সহজ হতে পারে। যেহেতু ছাত্র সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় ও প্যানেলভিত্তিক, তাই এখানে বাইরের অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর হওয়ায় অবৈধ শিক্ষার্থী বা অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের আশঙ্কা নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবেন।

যদিও ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন সংস্কারের কথা এসেছে, তবে সংস্কারের প্রক্রিয়া একটি সুষ্ঠু পদ্ধতিতে সম্পন্ন হওয়া উচিত। সংস্কারের নামে নির্বাচন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা কাম্য নয়। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মব সৃষ্টি হওয়া, ছাত্রদের কথা বলার কোনো প্ল্যাটফর্ম না থাকা এবং ছাত্র রাজনীতির নামে অরাজনীতি তৈরি হওয়া একটি বড় সমস্যা তৈরি করেছে। বর্তমানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের বিপথে চালিত করতে পারে। 
বিদ্যমান ব্যবস্থায় যদি ছাত্রনেতা হতে হয় তাহলে তাঁকে যে কোনো একজন ভাইকে মেইনটেইন করতে হয়। ভাইকে মেইনটেইন করতে গিয়ে পড়াশোনায় সময় দিতে পারেন না, ক্লাস করতে পারেন না, পরীক্ষা দিতে পারেন না, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না। 
যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন থাকে তাহলে একজন শিক্ষার্থী নেতা হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীর কাছে যাবেন, তাদের জন্য কাজ করবেন, পড়াশোনা করবেন, ইতিবাচক কাজে এগিয়ে থাকবেন। যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হয়, তবে পুরোনো রাজনৈতিক সিস্টেম, পুরোনো রাজনীতির ইকোসিস্টেম কখনও পাল্টাবে না এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক কাজ এবং দক্ষতা উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। 

শিক্ষার্থীদের যদি গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তারা রাষ্ট্রীয় লেভেলে গণতন্ত্রের চর্চা করতে সক্ষম হবেন না। ছাত্র সংসদ নির্বাচন এমন একটি মাধ্যম, যা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক শিক্ষা দেয়। এখানে তারা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সহনশীল আচরণ করতে শেখেন, ছাত্রদের কল্যাণের জন্য কাজ করে ভোট পেতে শেখেন এবং গণতন্ত্রের যে প্র্যাকটিস থাকে, সেটি তারা এখানে করতে পারেন। এই অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যতে সংসদে বা অন্যান্য রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাজে আসবে এবং এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে– যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এই বছরের মধ্যে না করা গেলে আগামীর রাজনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাবে। এই সংকট তৈরি হলে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে দায় নিতে হবে। তাই সরকার এবং সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে ঐকমত্য হতে হবে এবং নির্বাচন নিয়মিত করার জন্য কমিটমেন্ট করতে হবে। 

আকরাম হুসাইন: তরুণ উদ্যোক্তা, সাবেক ছাত্রনেতা ও যুগ্ম সদস্য সচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ