Prothomalo:
2025-03-12@10:04:55 GMT

গাজায় রমজানেও ফেরে না সুদিন

Published: 11th, March 2025 GMT

মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠে আজানের ধ্বনি আর ভেসে আসে না। মসজিদগুলোই নেই। বোমার আঘাতে সবকিছু মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। ফজরের আজান শুনে এখন আর রোজা শুরু করতে পারেন না ইসরা আবু কামার। মাগরিবের আজান কানে আসার পর মুখে তুলতে পারেন না ইফতার।

ইসরার বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায়। পবিত্র রমজানের বহু স্মৃতি তাঁর মনের গভীরে জমা। সেসব স্মৃতি এখন কাঁদায় তাঁকে, যেমনটা কাতর করে তোলে উপত্যকার সব মানুষকে। গত বছরের মতো এবারও রমজান তাঁদের জন্য উৎসবের আমেজ নিয়ে আসেনি। আসবেই–বা কীভাবে? ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্মম হামলা গাজাবাসীর জীবন থেকে সব খুশি কেড়ে নিয়েছে।

তবে গত রমজানের তুলনায় এবার গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন। দেড় মাস হলো যুদ্ধবিরতি চলছে। মুহুর্মুহু বোমার শব্দ এখন আর ভেসে আসে না। তাই তো প্রথম রমজানে একসঙ্গে ইফতার করেছেন রাফার একটি এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তার ওপর বিশাল সেই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন মধ্যবয়স্ক নারী ফাতিমা আবু হেলাল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর একটিই চাওয়া, ‘আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সবকিছু আগের মতো করে দিন।’

আগের দিনে গাজায় একসঙ্গে ইফতার করাটা আনন্দের বিষয় ছিল। রোজা ছিল উপত্যকার মানুষের জন্য উৎসব, আয়োজন, মানুষে মানুষে মিলে যাওয়ার এক উপলক্ষ। সন্ধ্যা হলেই ঘরবাড়ি ও সড়কগুলো আলোকিত হতো লন্ঠন আর রংবেরঙের বাতিতে। প্রতিবেশীদের নিয়ে আয়োজন করা হতো হরেক পদের ইফতারির। রাত গড়িয়ে গেলেও রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কমত না। পরিবার–পরিজন নিয়ে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে যেতেন মুরব্বিরা। টেলিভিশনে চলত রমজানের অনুষ্ঠান। রাস্তায় রাস্তায় শিশুরা খেলাধুলা করত। ধর্মীয় গান গেয়ে মাতিয়ে রাখত পাড়া।

এবার সেই শিশুদের অনেকেই নেই। বহু মানুষ হারিয়েছেন বাবা–মা, ভাই–বোন, কোলের সন্তান। ইসরায়েলের হামলা এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়েছে। হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষগুলোর কথা দীর্ঘশ্বাস হয়ে ফেরে নগরীর বাসিন্দা ইসরা আবু কামারের কাছে। তিনি বলেন, ‘এবারের রমজানে আমার ভালোবাসার মানুষগুলো আর নেই। আমার এক ফুফা ছিলেন। প্রতি রমজানে ইফতারে নিমন্ত্রণ করতেন। তাঁকে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। বান্ধবী শাইমা, লিনা আর রোয়ার সঙ্গে প্রতিদিন মসজিদে দেখা হতো। তারাও শহীদ হয়েছে।’

পুরোনো দিনগুলো আবার ফিরে পাওয়া এখন গাজাবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো। খাবারই তো ঠিকমতো মিলছে না তাঁদের। যুদ্ধবিরতির শুরুর দিকে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল ইসরায়েল। তাই বাজার কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। কয়েক দিন হলো আবার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে কমছে মজুত, হু হু করে বাড়ছে দাম। গাজা নগরীর আবু ইস্কান্দার বাজারের বিক্রেতা হাসান আবু রামির হিসাবে, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার আগে যে টমেটের দাম ছিল ৪০০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৭৩০ টাকা। আর এক কেজি রান্নার গ্যাসের দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার টাকা।

পেট চালাতে শেষ সঞ্চয়টাও খরচ করে ফেলেছেন গাজার অনেক বাসিন্দা। এত দাম দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সদাই কেনা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উপত্যকার সাধারণ মানুষ এবার যা পাচ্ছেন, তা দিয়েই সাহ্‌রি–ইফতার সারছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, মোলোখিয়া (একধরনের স্যুপ) বা সবজি। একটু সচ্ছল কারও কপালে জুটছে মাংস, রুটি ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি খাবার মুসাখান। রোজার মাসে ত্রাণের লাইনও দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এক থালা রান্না খাবারের জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধ—কাড়াকাড়ি করছেন সবাই।

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক উসকানিতে। গত বুধবারও তিনি বলেছেন, গাজায় বন্দী বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে ‘নরকের পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপে যেতেও গড়িমসি করছে ইসরায়েল সরকার। ফলে গাজায় আবার হামলা শুরুর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার অর্থ আবারও শুরু হতে পারে মৃত্যু–রক্তপাত।

এত আশঙ্কার মধ্যেও আশা ছাড়তে নারাজ ইসরা আবু কামার। তাঁদের ঘরবাড়ি, মসজিদ ভেঙেছে, তবে বিশ্বাসটা অটুট। ভাঙা বাড়ি ও তাঁবুর মধ্যেই তারাবিহর নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে জানাচ্ছেন সব চাওয়া–পাওয়ার কথা। মনের প্রশান্তির জন্য তিলাওয়াত করছেন পবিত্র কোরআন। এই দুর্দশার মধ্যেও ইসরা বেঁচে থাকতে চান তাঁর মা–বাবার জন্য, সবাইকে নিয়ে করতে চান ঈদ, ঠিক যেন ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতার মতো—‘জীবনকে ভালোবাসি। কারণ, আমি মরে গেলে মায়ের কান্না আমার সহ্য হবে না।’

তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য নিউ আরব 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য রমজ ন ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে জামায়াত কর্মীসহ আহত ১২

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তিন জামায়াত কর্মীসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাশিমাড়ী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। 

কাশিমাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আজিজুল সরদার ও বিএনপি কর্মী আক্তার ফারুকের সমর্থকদের এ সংঘর্ষ হয়। এতে আহতরা হলেন- আক্তার ফারুক, শহিদুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, মনজুর হোসেন, সফিকুল ইসলাম, খোকন পাকানি, হেলাল, মাসুদ, আল মামুন, জামায়াত কর্মী তহুর মোল্যা, মিজানুর রহমান ও আব্দুর রহমান। আহতদের মধ্যে সাতজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বিবাদমান দু’পক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। সম্প্রতি আক্তার পক্ষের কয়েক তরুণকে মাদকাসক্ত বলে দাবি করে আজিজুলের লোকজন। এ ঘটনা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে স্থানীয় বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয় আজিজুলের লোকজন। এ সময় আক্তার কিছু কর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাকে মারধর করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আক্তার সমর্থকরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালায় আজিজুলের লোকজনের ওপর। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা জানায় নিকটাত্মীয় হওয়ায় আহত জামায়াত কর্মীরা বিএনপি নেতা আজিজুলের পক্ষে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। 

এ বিষয়ে আক্তার ফারুক জানান, দলীয় অফিস বন্ধ করতে বাধা দেওয়ায় কয়েক কর্মীসহ তাঁর ওপর জামায়াত কর্মীদের নিয়ে হামলা চালায় আজিজুল, জহুর মোল্যা, আলআমিন ও রবিউল। পরে তাঁর সমর্থকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিজেসহ তার ১২ কর্মী আহত হওয়ার দাবি করেন ফারুক।

আজিজুল সরদারের ভাষ্য–তাঁর লোকজনের ওপর আক্তার ফারুক হামলা করায় এলাকাবাসী সমবেত হয়ে পাল্টা জবাব দেয়। এ ঘটনায় তার পক্ষের ১৫ জন আহত হওয়ার দাবি করে তিনি আরও বলেন, জামায়াতের কর্মী না, বরং তার আত্মীয় হওয়ায় অপর সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িত কয়েকজন আহত হয়েছে।

শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোনো পক্ষই এখনও লিখিত অভিযোগ করেনি উল্লেখ করে তিনি জানান, দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ