ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে তাঁরা সরে যান।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। পরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা।

আরও পড়ুনধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা১ ঘণ্টা আগে

শিক্ষার্থীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থানকালে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল—‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান কর্মসূচি’। তাঁরা বলছেন, দেশজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ও দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে সব কলেজের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ছয়টি দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁরা চান, এ দেশে আর কেউ যেন ধর্ষণের শিকার না হন। এই ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রযন্ত্রকে বার্তা দেওয়া। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী শাহবাগে আসবেন।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মিথিলা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে, এ দেশে নারীরা কতটা অনিরাপদ। রাষ্ট্রকে নিরাপদ করতে তাঁরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো—

১.

ধর্ষকের শাস্তি জনসমক্ষে নিশ্চিত করা। ধর্ষকদের শাস্তি প্রকাশ্যে নিশ্চিত হলে সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাবে।

২. ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষকদের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।

৩. দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। যদি কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা, মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করা এবং ভিকটিম ও সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী ১৫ কার্যদিবস সময়ে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটিতেও অসামঞ্জস্য থাকলে, সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৪. ধর্ষণের ঘটনায় সালিসি বিচার নিষিদ্ধ করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করবে শুধু রাষ্ট্র। পাশাপাশি অনৈতিক পন্থায় প্রশাসনের কারও সহযোগিতায় যদি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামি ছাড়া পায়, তবে তদন্ত অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করা যেতে পারে।

৬. চলমান মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর অবস থ ন ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি ফিলিস্তিনপন্থি একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন একটি আদালত। তাকে একমাস আগেই আটক করা হয়েছিল। ৩০ বছর বয়সী মাহমুদ খলিল যদিও যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, অর্থাৎ তিনি আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী এবং তার বিরুদ্ধে এর আগের কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।

কারাগার থেকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার একটি অভিবাসন আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, খলিলের উপস্থিতি আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতিগত স্বার্থের বিরুদ্ধে।

তবে আদালতের রায়ের অর্থ এই নয় যে, তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে। বিচারক মাহমুদ খলিলের আইনজীবীদেরকে আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। মাহমুদ খলিল গত ৮ মার্চ থেকে লুইজিয়ানা ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। তারপর থেকে তার মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ সবকিছুই হয়েছে।

গ্রেপ্তারের দিন অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার জন্যই তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম পরিচিত মুখ খলিল। ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৫২ সালের যে আইনে তাকে আটক করেছে, সেই আইনে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, আমেরিকায় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি যদি দেশটির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হয়, তাহলে সরকার তাকে আমেরিকা ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দিতে পারবে।

বিচারক জানিয়েছেন, মাহমুদ খলিলের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যে কারণ দেখিয়েছে, তা যুক্তিসংগত। ফলে মাহমুদ খলিলকে বহিষ্কারের পথে হাঁটতে ট্রাম্প প্রশাসনের কোনও বাধা নেই।

আদালতের রায়ের পর এতদিন ধরে নীরব থেকে আসা মাহমুদ খলিল বলেন, আপনি নিজেই আগের শুনানিতে বলেছিলেন, এই আদালতের কাছে মৌলিক সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। কিন্তু আজকে আমরা যা দেখলাম, তাতে স্পষ্টতই এই নীতিগুলির কোনওটিই আজ ছিল না। এমনকি, এই পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও এগুলো নেই। ঠিক এই কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন আমাকে আমার পরিবার থেকে এক হাজার মাইল দূরের এই আদালতে পাঠিয়েছে। 

মানবাধিকার সংগঠন ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ (এসিএলইউ) আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে মন্তব্য করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ‘প্রমাণ’ হিসাবে আদালতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি নথি জমা দেয়ার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এই রায় আসলো। অথচ সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও'র পাঠানো একটি চিঠি ছাড়া আর কিছু ছিল না। এটাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, মি. খলিল কোনও অপরাধ করেননি, বরং তার বক্তব্যের কারণেই এককভাবে তাকে নিশানা করা হয়েছে।

সরকার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র তরফ থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- যদিও মাহমুদ খলিলের কর্মকাণ্ড ‘আইনসম্মত’ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম গতকাল শুক্রবার আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশুনার করার জন্য ভিসা বা গ্রিন কার্ড পাওয়া একপ্রকার সৌভাগ্য। কিন্তু যখন আপনি সহিংসতাকে উসকে দেবেন, সন্ত্রাসীদের প্রশংসা ও সমর্থন করবেন বা ইহুদিদের হয়রানির মুখে ফেলবেন- তখন আপনার আর এখানে থাকার কোনও অধিকার নেই। বিদায়!

মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বারবার বলছে, আদালতে মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষ বা সহিংসতা বিষয়ক কোনও প্রমাণ এখনও উপস্থাপন করা হয়নি। তার আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডের হাউট এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে যা চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মাহমুদ খলিলের অধিকারের পক্ষে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। এই মামলাটির আবারও শুনানি হবে বলে তারা আশা করছেন।

হোয়াইট হাউজের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি টেইলর রজার্স এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৈদেশিক নীতির দিক থেকে ক্ষতিকর-তাদেরকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ