অভিমত: নারীদের ঘরে ঢোকাতে চাইছে একটি গোষ্ঠী
Published: 11th, March 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীর ভূমিকা খুব ইতিবাচক ছিল। নারী প্রবল কর্তাসত্তা নিয়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল। নারী যখন কর্তাসত্তা নিয়ে প্রবলভাবে হাজির হয়, তখন কোনো কোনো গোষ্ঠী, যারা নারীদের নেতৃত্বের স্থানে দেখতে চায় না, তারা নারীদের হুমকি বলে মনে করে। সেই গোষ্ঠী নারীদের ভয় দেখিয়ে ঘরের ভেতর ঢোকাতে চাইছে। প্রতিটি যৌন নিপীড়ন, সন্ত্রাসের ঘটনার বিচার হতে হবে। কোনো একটি ঘটনাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এসব নিপীড়ন ও অপরাধ বন্ধ করতে হবে।
পতিত আওয়ামী লীগ ক্রমাগত বোঝাতে চাইছে যে তারা না থাকলে বাংলাদেশ নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য অনিরাপদ হয়ে যায়। এই বয়ান তৈরি করার জন্য এসব বিষয়কে অনেক বেশি সামনে আনা হচ্ছে বলে মনে করার অবকাশ আছে। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে একদল এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যেন ৫ আগস্টের আগে এমন অপরাধ হতো না! এই বয়ান তৈরির বিষয়েও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এ দেশে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। অপরাধ ঘটতে থাকার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে অপরাধের বিচার কম হয়। বরং যে নারী সহিংসতার শিকার হন, সেই নারীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, দোষারোপ করা হয়, যেন নারীরই দোষ, সে–ই প্ররোচনা দেয় অপরাধ ঘটানোর জন্য। ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ করে সামাজিকভাবে তাঁকে হেনস্তা করার প্রবণতা দেখা যায়।
প্রতিটি সহিংসতার ঘটনা বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, সামাজিক বাধা দূর করতে হবে, ভুক্তভোগীকে হেনস্তা করা বন্ধ করতে হবে। সাজা কঠিন করার সঙ্গে অপরাধ কমার সম্পর্ক নেই। ২০২০ সালে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করেও ধর্ষণ কমানো সম্ভব হয়নি। এবার ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী অনেকে বলছেন প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দিতে। যদি সত্যিকারের অপরাধ কমাতে চাই, তাহলে এটা কোনো সমাধান নয়। দরিদ্র, পথেঘাটের ব্যক্তিরা ধর্ষণ করলে কিছুটা বিচার হতে দেখা গেলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিচার হতে দেখা যায় না। গত ১৫ বছরে তনু, মুনিয়াসহ অন্যান্য ঘটনার বিচার যদি হতে দেখত মানুষ, তাহলে অপরাধপ্রবণ মানুষেরা এ ধরনের অপরাধ করা থেকে বিরত থাকত।
ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখে সরকার তদন্তের সময় কমিয়ে ১৫ দিন করতে চাইছে। দ্রুত বিচার করে নিরপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী বানিয়ে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। পরবর্তী সময়ে আইনি প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলে প্রকৃত ধর্ষকের পুনর্বাসিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে। মামলার জট কীভাবে কমানো যায়, কীভাবে ধর্ষণ প্রমাণে নারীদের জন্য অবমাননাকর দুই অঙ্গুলি পরীক্ষা বন্ধ করে ভদ্রস্থ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত ও বিচারের সময় কমানো যায়—এসব ভাবা দরকার।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকা অনেক দুর্বল। লালমাটিয়ায় ধূমপানকে কেন্দ্র করে দুই নারীকে ‘মব’ সৃষ্টি করে হেনস্তার ঘটনার এত দিন পর অভিযুক্ত রিংকুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করলে একটি গোষ্ঠী শাহবাগ থানা দখল করে ফেলল। এই ভিড় কেন সরকার সামলাতে পারল না? এখন মেয়েরা প্রতিবাদ করতে পথে নেমে আসার পর সরকার শক্ত হলো বলে মনে হচ্ছে। শুরুতেই কেন হলো না? সরকার এভাবে যত দুর্বলতা দেখাবে, তত ব্যর্থতার সংখ্যা বাড়বে। সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক দিন ধরেই ব্যর্থ। এ অবস্থায় নারীরা বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠছে। কিন্তু আমরা চাই সরকার সফল হোক। সরকারকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে আইন যেন কেউ নিজের হাতে তুলে না নেয়।
নারী নির্যাতন মোকাবিলায় নারীদের রাজনীতিতে আসতে হবে। কথা বলতে হবে। ন্যায্য হিস্যা নিতে হবে। নারী অধিকারের পক্ষে না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দলকে এবার নারীরা ভোট দেবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য অপর ধ ঘটন র র ঘটন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেবদাসে শুরু, প্রথম ছবিতেই বাজিমাত
ফেসবুক